যেভাবে চাকরিটা পেলেন ডোমিঙ্গো

|

রাসেল ডোমিঙ্গো। ফাইল ছবি।

‘চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি বেলা সত্য/এখন আর কেউ আটকাতে পারবে না’ প্রেমিকা বেলা বোসের প্রতি প্রেমিকের এমন আকুতিই বুঝিয়ে দেয় চাকরি এক সোনার হরিণ। যদিও বা শিকার করা যায়, পছন্দের চাকরি আর ক’জনে পায়? এটা মিলে তো, ওটা মেলে না। তবে, প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তির জোরে অনেকেই কিন্তু ছিনিয়ে নিচ্ছেন পছন্দের চাকরি। টাইগারদের নতুন হেড কোচ রাসেল ডোমিঙ্গোর কথাই ধরুন না, বাঘা বাঘা সব কোচকে টপকে বিসিবির আকর্ষণীয় চাকরিটা যে বাগিয়ে নিলেন, সে তো কেবল ইচ্ছাশক্তির জোরেই।

বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের ব্রিফিংয়েও ফুটে উঠেছে, কেনো ডোমিঙ্গোকেই বেছে নিলেন তারা। তিনি জানান, সার্বক্ষণিক টাইগারদের সাথে থাকার আগ্রহ দেখিয়েছেন এই দক্ষিণ আফ্রিকান। বলেছেন, তার কোনো পিছুটান নেই। লাগবে না ছুটিছাটা। যেখানে অন্যান্য হাই প্রোফাইল কোচরা বছরে বেশ কয়েকবার নিজ দেশে কিংবা অন্য কোথাও গিয়ে লম্বা ছুটি কাটিয়ে আসেন সেখানে ডোমিঙ্গো কিনা বলেছেন কোনো ছুটিই লাগবে না! এমন কোচকে নিয়ে আপনার দু’বার অন্তত ভাবতে হবে।

বিসিবি কর্তাদের সামনে নিজের কর্মপরিকল্পনা পরিষ্কারভাবে তুলে ধরেছেন ডোমিঙ্গো। জানিয়েছেন, কীভাবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে বিশ্বসেরা করতে চান। অর্থাৎ তার একটা ভিশন আছে। আর দশজন হাইপ্রোফাইল কোচ যেখানে কাঠামো ও স্ট্রাটেজির ওপর জোর দেন বেশি সেখানে ডোমিঙ্গো বাড়তি যুক্ত করেছেন তার স্বপ্নের কথাও। যেটি বিসিবির স্বপ্নকে ছুঁতে পেরেছে। শুধু স্বপ্ন দেখিয়েই থেমে থাকেননি এটি যে কতটা বাস্তবসম্মত স্বপ্ন সেটিও প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন ডোমিঙ্গো।

চাকরিদাতারা আরেকটা বিষয়ের ওপর জোর দিয়ে থাকেন। সেটি হলো- চাকরিটা আপনার কতটা প্রয়োজন? আপনি এই চাকরির প্রতি শেষ পর্যন্ত সিরিয়াস থাকতে পারবেন কিনা। এই জায়গায় মাইক হেসন, মিকি আর্থার, হাথুরুসিংহে বা সিডন্সদের মতো কোচদের ছাপিয়ে গেছেন ডোমিঙ্গো। তিনিই একমাত্র কোচ যিনি সশরীরে সাক্ষাৎকার দিতে বাংলাদেশে এসেছেন। শুধু একটি সাক্ষাৎকার দিতে এতদূর ভ্রমণ করে আসা ডোমিঙ্গোর প্রতি এমনিতেই একটা সফ্ট কর্নার তৈরি হওয়ার কথা। তারওপর যখন জানবেন তিনি সাবেক প্রোটিয়া কোচ তখন মনে হতে বাধ্য-‘হি ইজ ড্যাম সিরিয়াস।’ এই সিরিয়াসনেসই এগিয়ে দিয়েছে ৪৪ বছর বয়সী ডোমিঙ্গোকে।

আরও একটি ‘বেসিক’ জায়গায় নিজেকে সবার চেয়ে আলাদাভাবে উপস্থাপন করতে পেরেছেন ডোমিঙ্গো। এবার কোচ নিয়োগে বিসিবির ছিল বড় বাজেট। তাইতো মাইক হেসন, পল ফারব্রেস, মিকি আর্থার, অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার, হাথুরুসিংহ বা সিডন্সদের মতো মোটা বেতনের কোচের দিকে হাত বাড়াতে দ্বিধা করেননি তারা। আর ডোমিঙ্গো কিনা বেতন চেয়ে বসলেন বিসিবির ধারণার চেয়ে কম! বিসিবির কয়েকজন কর্তা জানিয়েছেনও সেটা। অনায়াসে ২৫ হাজার ডলার থেকে দরকষাকষি করতে পারতেন তিনি। কিন্তু চাইলেন ঠিক সেটিই যেটি হলেই তিনি ব্যাগ গুছিয়ে চলে আসবেন বাংলাদেশে। স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি অহেতুক দরকষাকষির লোক নন। ডোমিঙ্গোর বেতনটা ১৫ হাজার ডলারের আশেপাশে। যেখানে বিসিবির প্রথম পছন্দ কিউই কোচ মাইক হেসন দাবি করেছিলেন ৩০ হাজার ডলারেরও বেশি!

তবে, এসব কিছুর সাথে ডোমিঙ্গোর আছে একটা ভালো ‘ক্যারিয়ার ব্যাকগ্রাউন্ড’। তার অধীনে ২২টি ওয়ানডে সিরিজ খেলে ১৪টিতে জিতেছিল প্রোটিয়ারা। আইসিসি ওয়ানডে টেবিলের শীর্ষ দল হওয়ার গৌরবও অর্জন করে। একই সময়ে টি-টুয়েন্টিতে ৪২ ম্যাচে ২৩ জয় এসেছে আফ্রিকানদের। যেকোনো ক্রিকেট বোর্ড বিষয়টাকে গণনায় ধরবে। যদিও ডোমিঙ্গো খেলোয়াড় হিসেবে মোটেই সফল ছিলেন না। ২২ বছর বয়সে খেলা থেকে ইস্তফা দিয়ে কোচের ডিগ্রির দিকে ঝুঁকে যান। লো প্রোফাইল দল নিয়ে কাজ করতে কখনো দ্বিধা করেননি। আর যখনই সুযোগ পেয়েছেন সেটিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে নিজের সবটুকু উজাড় করে দিয়েছেন। এভাবেই, কিন্তু জুটেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা দলের কোচের চাকরিটাও। এখন তো সাকিব-তামিমদের হেডমাস্টার মি. রাসেল ক্রেইগ ডোমিঙ্গো।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply