২৭ হাজার ছাড়িয়েছে ডেঙ্গু রোগী

|

থামছে না ডেঙ্গুর ভয়াবহতা। প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। রাজধানীসহ সারা দেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ‘তিল ধারণের ঠাঁই’ নেই। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২০৬৫ জন। যা চলতি মৌসুমে একদিনের হিসাবে সর্বোচ্চ। এ সময় নতুন করে আরও সাতজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

তাদের মধ্যে উপকর কমিশনারের ছেলে ও আবহাওয়া অধিদফতরের সহকারী পরিচালকের স্ত্রী আছেন। এ নিয়ে সরকারি হিসাবেই চলতি মৌসুমে (জানুয়ারি-৫ আগস্ট) ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৭ হাজার ৪৩৭ জন। আর মৃত্যুর সংখ্যা ১৮। কিন্তু বেসরকারি হিসাবে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি হবে বলে জানা গেছে।

এদিকে আগস্টে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা যে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, তা বাস্তবে রূপ নিতে যাচ্ছে। কারণ আগস্ট মাসের প্রথম পাঁচ দিনে সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী হাসপাতালে ডেঙ্গুরোগী ভর্তি হয়েছেন ৯,০০৬ জন। যা চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে বেশ ভাবিয়ে তুলেছে।

কারণ বর্তমানে থেমে থেমে যে বৃষ্টি হচ্ছে তা চলতি মাসে আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকলে আশঙ্কাজনক হারে বাড়তে পারে ডেঙ্গু রোগী। তবে ডেঙ্গুজ্বরের বাহক এডিস মশা নিধনে কার্যকর ওষুধ যদি যথাযথভাবে ছিটানো হয়, সেক্ষেত্রে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা অনেকাংশে কমে আসবে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।

ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশব্যাপী মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বেড়েই চলছে। রাজধানীসহ সারা দেশের হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে জ্বরে আক্রান্তদের লাইন দীর্ঘ হচ্ছে। রক্ত পরীক্ষার ফল পেতে হাসপাতালে রোগীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। অপেক্ষায় থাকতে থাকতে রোগীরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে।

হাসপাতালগুলোতে অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামলাতে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্টরা। ডেঙ্গু পরীক্ষায় অতিরিক্ত উৎসাহের কারণে পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় কিটের সংকট দেখা দিয়েছে বাজারে।

পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ডেঙ্গু পরীক্ষা না করাতে অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, জ্বর হলে বা জ্বর জ্বর বোধ করলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

পরীক্ষা করাতে হলে চিকিৎসকের পরামর্শে করাতে হবে। যাতে যেসব রোগীর পরীক্ষা করানো জরুরি তাদের চিকিৎসার যেন ব্যাঘাত না ঘটে। এছাড়া একটানা চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে কর্মরত চিকিৎসক, নার্সসহ সংশ্লিষ্টরা যেন অসুস্থ হয়ে না পড়েন, সেজন্য হাসপাতালের মেডিসিন, নবজাতক ও শিশু বিভাগ ছাড়াও অন্যান্য বিভাগের চিকিৎসক ও নার্সদের পর্যায়ক্রমে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

এছাড়া জরুরি ভিত্তিতে ডেঙ্গু রোগীদের সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসা দিতে জেলা হাসপাতালগুলোকে ১০ লাখ টাকা এবং উপজেলা পর্যায়ে ২ লাখ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার জানান, চলতি বছর এ পর্যন্ত মোট ২৭ হাজার ৪৩৭ জন রোগী আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৯ হাজার ৭৬১ জন চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

বর্তমানে ৭ হাজার ৬৫৮ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এর মধ্যে রাজধানীর ৩৮টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ৪ হাজার ৯৬২ জন। ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলায় ভর্তি আছেন ২ হাজার ৬৯৬ জন। এর আগে জুলাই মাসে সারা দেশে ১৬ হাজার ২২৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন।

সরকারি হিসাব মতে, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত মোট ১৮ জনের মৃত্যু ঘটেছে। তবে আক্রান্ত ও মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা এই হিসাবের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি বলে বেসরকারি বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে।

কন্ট্রোল রুমের তথ্য মতে, রাজধানীর বাইরে ঢাকা বিভাগের অন্য জেলাগুলোতেই সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এসব জেলার হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি হয়েছেন ২২১ জন। এ সময় চট্টগ্রাম বিভাগে ১৮০ জন, খুলনা বিভাগে ১৫০ জন, রাজশাহী বিভাগে ১১২ জন, বরিশাল বিভাগে ৯৯ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৬১ জন, রংপুর বিভাগে ৪৭ জন এবং সিলেট বিভাগে ৩৬ জন নতুন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply