‘অপরিচিত কাউকে সন্দেহ হলে পুলিশ ডাকুন, আইন হাতে তুলবেন না’

|

স্টাফ রিপোর্টার, নেত্রকোণা:

অপরিচিত হলেই সন্দেহ করে কাউকে মারা যাবে না। এ ধরণের ভূল সিদ্ধান্তে নিজেও অপরাধী বনে যেতে পারেন। এতে যে কাউকে দাঁড়াতে হতে পারে আইনের কাঠগড়ায়। এলাকা, পাড়া বা মহল্লায় অপরিচিত ব্যক্তিকে নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হলে আগে তার সাথে কথা বলুন। নয়তো শুধু সন্দেহের জেরেই চলে যেতে পারে নিরীহ নিরাপদ ব্যক্তির জীবন। আগে পরিচয় সম্পর্কে শতভাগ নিশ্চিত হন। তারপর কোথাও সমস্যা মনে হলে পুলিশে দিন।

শুক্রবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে নেত্রকোণার পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এসপি জয়দেব চৌধুরী জেলাবাসীর প্রতি এসব আহবান রেখেছেন।

এসময় জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) এস.এম আশরাফুল আলম, মো. শাহ্জাহান মিয়া (অপরাধ), মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান জুয়েল (সদর সার্কেল), মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. তাজুল ইসলাম প্রমূখ।

এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেলেধরা নিয়ে যে ভীতি জেলাবাসীর মনে সৃষ্টি হয়েছে তা মন থেকে ঝেড়ে ফেলার পরামর্শ দিয়ে পুলিশ সুপার জয়দেব বলেন, নেত্রকোণা শহরের শিশু সজীবের দেহবিচ্ছিন্ন মাথা কোনো অপরিচিত ব্যক্তির হাতে ছিলো না। রবিন ছিলো ওই শিশুরই প্রতিবেশি এবং এলাকার চিহ্নিত মাদকাসক্ত যুবক।

যদি গণপিটুনি দিয়ে রবিনকে না মেরে ফেলা হত তবে প্রকৃত ঘটনা পুলিশের মাধ্যমে অথবা সরাসরি তার মুখ থেকে দেশবাসী দ্রুত সময়েই শুনতে পারত। কিন্তু আইন হাতে তোলে নেয়ার কারণে পুলিশ সেই সুযোগ পায়নি।

অপরাধ যে কেউ করতে পারে আর তার জন্য আইন-আদালত রয়েছে। প্রচলিত আইন অনুযায়ী অপরাধীর বিচার হবে আদালতে। কিন্তু আইন কারো হাতে তোলে নেয়ার সুযোগ নেই।

প্রাথমিক পর্যায়ে এখন পর্যন্ত ধারণা করা হচ্ছে, পুরনো কোনো জেদ বা বিকৃত মানসিকতা থেকেই সজীবের সাথে নির্মম ও বর্বরোচিত এ ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ মাঠে আছে, দ্রুত সময়ের মধ্যেই মূল রহস্য উদঘাটন হবে।

এদিকে সাধারণ মানুষের যে বিভ্রান্তি বা ভীতি ছড়িয়েছে তা কাটিয়ে সকলের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা চালাচ্ছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. শাহ্জাহান মিয়াসহ বিভিন্ন স্থরের পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যরা।

পুলিশ কর্মকর্তা শাহ্জাহান জেলা পুলিশ ছাড়াও নিজের ফেসবুক আইডি ব্যবহার করে সচেতনতায় প্রচারণা চালাচ্ছেন। জনগণকে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভয়ের কিছু নেই বলে আশ্বস্ত করছেন।

তিনি জানান, শিশু সজিবের গলা কাটার বিষয়টি শুধুমাত্র একটি হত্যাকান্ড। এর সাথে ছেলেধরা বা পদ্মা সেতু গুজবের কোনো সম্পর্ক নেই।

এদিকে ঘটনার পরপরই জেলা ও ময়মনসিংহ রেঞ্জের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। উপর মহল থেকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা পেয়ে মাঠে কাজ করছে পুলিশ।

সচেতনতা রক্ষায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) এস.এম আশরাফুল আলমসহ বিভিন্ন স্থরের কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যরা কাজ করছেন।

এরআগে বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) শহরের পূর্ব কাটলি এলাকার রঈছ উদ্দিনের শিশু সজিবের (৭) দেহ বিচ্ছিন্ন মরদেহ প্রতিবেশি মাদকাসক্ত যুবক রবিনের (২৮) কাছ থেকে উদ্ধার হয়। পরে এঘটনায় একই এলাকার বাসিন্দা এখলাছের ছেলে রবিনকে গণপিটুনি দিয়ে মেরে ফেলা হয়।

এর কিছুক্ষণ পর পূর্ব কাটলি এলাকার কায়কোবাদ নামে এক ব্যক্তির নির্মাণাধীন ভবনের তৃতীয় তলা থেকে শিশু সজীবের মস্তক বিচ্ছিন্ন দেহটি উদ্ধার করে পুলিশ। পরে শিশু ও যুবকের মরদেহগুলো নেত্রকোণা আধুনিক সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। করা হচ্ছে অধিকতর তদন্ত।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply