বিপন্ন সাপ কাল নাগিনীকে লাউয়াছড়ায় অবমুক্ত

|

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:

বাংলাদেশের সবচেয়ে পরিচিত একটি সাপ কাল নাগিনী। লোকপুরাণে এই সাপকে নিয়ে রয়েছে অনেক গালগল্প। বেহুলা লখিন্দর পুরাণে মনসা দেবীর সন্তান হিসেবে কাল নাগিনীকে উপস্থাপন করা হয়েছে। এই সাপের দংশনে লখিন্দরের মৃত্যুর কথা বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে এটি নির্বিষ একটি সাপ। একসময় বাংলাদেশে সচরাচর দেখা গেলেও এটি এখন বিপন্ন প্রজাতির তালিকায়।

অধিকাংশ মানুষ এ সাপকে না দেখলেও এটিকে নিয়ে আগ্রহ রয়েছে সবার। সাপুড়েরা পথ- ঘাট- হাটে এ সাপকে বিষাক্ত বলে পরিচয় করিয়ে দেয়। নাগ- নাগিনী, কাল নাগিনীকে নিয়ে তৈরী হয়েছে অনেক সিনেমা- গল্পও।

শুক্রবার দুপুরে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল পৌরসভার মেয়র মহসীন মিয়া মধুর বাসা থেকে একটি কাল নাগিনী সাপ উদ্ধার করা হয়। বিকেলে এটিকে কলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে অবমুক্ত করা হয়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও প্রাণী গবেষক ড. মো. কামরুল হাসান জানান, প্রাণিজগতের সবচেয়ে সুন্দর সাপগুলোর মধ্যে অন্যতম সাপ কাল নাগিনী। যার ইংরেজি নাম হলো- (Ornate Flying Snake) ও বৈজ্ঞানিক নাম (Chrysopelea ornata)। গ্রামবাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে সাপটিকে উড়ন্ত সাপ, উড়াল মহারাজ সাপ, সুন্দরী সাপ, কালসাপ ও কালনাগ বলে ডাকা হয়। অথচ কাল নাগিনী একটি বিষহীন সাপ। কিন্তু এটাকে ভয়ংকরভাবে উপস্থাপন করার ফলে সাধারণ মানুষ যখনই সাপটিকে দেখে, বিষাক্ত ভেবে মেরে ফেলে। এজন্য এ সাপ দ্রুত চলে এসেছে বিপন্নের তালিকায়।

তিনি বলেন, ইংরেজিতে (Flying Snake) নাম হলেও সাপটি বাস্তবে উড়তে পারে না। খাদ্যগ্রহণ, বৈশিষ্ট এবং চরিত্রগত কারণে উঁচু গাছের ডাল থেকে নিচু গাছের ডালে লাফ দিয়ে চলাফেরা করে সাপটি।

বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন পরিচালক সজল দেব জানান, সাপটি উদ্ধারের পর প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বিকেলে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে অবমুক্ত করা হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন বিচারপতি বুরহান উদ্দিন, সহকারী বন সংরক্ষক আনিসুর রহমান, বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সীতেশ রঞ্জন দেব, রেঞ্জ কর্মকর্তা মোনায়েম খান। এসময় কালনাগিনী ছাড়াও দুইটি সবুজ বোড়া, একটি শঙ্কিনী ও একটি লজ্জাবতী বানর অবমুক্ত করা হয়।

তিনি আরো জানান, সিলেটের চা বাগানসহ মৌলভীবাজারের বিভিন্ন চা বাগানে সাপটির দেখা মিললেও বর্তমানে তেমন দেখা যায় না। তবে গভীর বনে এদের দেখা মিলে। এদের দৈর্ঘ্য ১০০ থেকে ১৭৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়। মাথা লম্বা ও চ্যাপ্টা এবং মুখের সামনের দিকে চৌকোনা আকৃতির। এদের দেহের রঙ পিঠের দিকে সবুজ। আবার হালকা সবুজ রঙের এবং কালচে ডোরাকাটা। ঘাড় থেকে লেজের ডগা পর্যন্ত মেরুদ- বরাবর কমলা রঙের এবং লাল দাগ দেখা যায়।

এরা সাধারণত পোকামাকড়, টিকটিকি, গিরগিটি, ব্যাঙ ও ছোট পাখি ইত্যাদি খায়। জুন থেকে জুলাই মাস এদের প্রজনন মৌসুম। প্রজননের সময়ে এরা সাধারণত ৬ থেকে ১২টি ডিম দেয়।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply