মনপুরায় বন প্রহরীদের সঙ্গে হরিণের বন্ধুত্ব!

|

ভোলার মনপুরার বিচ্ছিন্ন চর নিজামে বনপ্রহরীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠেছে এক মায়াবি হরিণের। এ নিয়ে এলাকায় বেশ আলোচনার ঝড় বইছে। স্থানীয় বনপ্রহরীরা এই হরিণটির নাম দিয়েছে রিউ।

দিনে-রাতে দুই বেলায় বনপ্রহরীদের সঙ্গে সংরক্ষিত বনাঞ্চল পাহারা দিয়ে বিট অফিসের সামনে চলে আসে ব্যতিক্রম হরিণটি।

রিউ (হরিণ) মানুষ দেখলে ভয় পায় না কিংবা পালিয়ে যায় না। স্থানীয়দের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে মায়াবী হরিণ রিউ।

মায়াবী হরিণ রিউ তার খাবার সংগ্রহ করতে বনে যেতে হয় না। স্থানীয় বাসিন্দারা পালা করে খাবার দেয়। এতে স্থানীয়দের সঙ্গে ভালবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে রিউ (হরিণ)।

হরিণটির এমন কাণ্ড দেখার জন্য জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও অন্য জেলা থেকে মানুষ ছুটে আসে প্রতিনিয়ত।

চর নিজাম এলাকার বাসিন্দা কাশেম, স্বপন, কালাম, মহিউদ্দিন জানান, যে কেউ হরিণটির নাম ধরে ডাকলে ছুটে আসে। বনের পাহারা শেষ হলে মানুষের ঘরের আঙিনায় ঘুরে বেরায় রিউ (হরিণ)। সবাই তাকে ভালবেসে খাবার দেয়।

স্থানীয় ব্যবসায়ী ফারুক, জাফর, শামসু জানান, হরিণটির ক্ষুধা লাগলে লোকজনের বাড়ির রান্না ঘরে ঢুকে বসে থাকে। ভাত দিলে খেয়ে আবার চলে যায়। হরিণটি মানুষের রাগ-অভিমানও বুঝে। কেউ যদি তাকে রাগ করে কথা বলে তাহলে চলে যায়। আবার কেউ যদি তাকে ভালোবেসে ডাকে তাহলে তার কাছে চলে আসে। সবাই রিউকে অনেক ভালবাসে।

বনপ্রহরী রওসান আলী সরকার, আবুল কাশেম, নুর মোহাম্মদ জানান, রিউ (হরিণ) প্রতিদিন দুই বেলায় একসঙ্গে বন পাহারায় যায়। শুধু বন পাহারায় যায় না বাজার করতেও রিউ বাজারে যায়।

তারা জানান, চর নিজামের বনে অনেক হরিণ আছে। রিউ নামের হরিণটির সঙ্গে অন্য হরিণের দেখা হয়। তাদের সঙ্গে পানি ও খাবারও খায় কিন্তু সে তাদের সঙ্গে কখনও চলে যায়নি। এলাকার মানুষের ভালবাসায় মুদ্ধ হয়ে রিউ (হরিণটি) বনে না থেকে লোকালয়ে থাকে।

চর নিজাম (কালকিনি) বিট কর্মকর্তা আমির হামজা জানান, বছর খানেক আগে জোয়ারের পানিতে ভেসে আসে এ হরিণটি। তখন সে খুব অসুস্থ ছিল। আমরা চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে বনে অবমুক্ত করি। কিন্তু সে অফিসের সামনে চলে আসে। যতবার বনে ছেড়ে দেয়া হয়েছে ততবারই সে চলে আসে। সেই থেকে এখানে রয়ে যায় হরিণটি।

তিনি বলেন, আমাদের বন প্রহরীদের সঙ্গে বনে যায়। আবার চলে আসে। বলা যায়, সে বন প্রহরীদের সঙ্গে বন পাহারা দেয়। আমরা সবাই মিলে এর নাম দেই রিউ। সে নাম ধরে ডাকলেই চলে চলে আসে। এলাকার মানুষ হরিণটিকে অনেক ভালবাসে।

উল্লেখ্য, ভোলার মনপুরা উপজেলার উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নের বিচ্ছিন্ন ৯নং ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত চর নিজাম। অনেকে চর নিজামকে কালকিনির চর নামে জানে। চর নিজামের চার দিকে বঙ্গোপসাগর। বর্তমানে এ চরে প্রায় ৬ হাজার মানুষের বসবাস রয়েছে। এখানে ৫ হাজার ২৩৮ দশমিক ৭৩ একর বনাঞ্চল রয়েছে। এ বনে প্রায় ৩ শতাধিক হরিণ রয়েছে।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply