পিলখানা হত্যা মামলা: ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল

|

পিলখানায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যার দায়ে ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। যাবজ্জীবন দেওয়া হয়েছে ১৮৫ জনকে। আর ২২৭ জনকে দেয়া হয়েছে ৩ থেকে ১৩ বছরের জেল সাজা। আলোচিত তোরাব আলীসহ খালাস দেয়া হয়েছে ৪৫ জনকে। দু’দিনের দীর্ঘ পর্যবেক্ষণ শেষে ৩ বিচারপতির বিশেষ হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় দেন। রায়কে ঐতিহাসিক বলে উল্লেখ করেছেন বিচারকরা। এর মধ্য দিয়ে মামলাটির বিচারপ্রক্রিয়ার দুটি ধাপ শেষ হলো।

ইতিহাসের অন্যতম বর্বর এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ড দেয়া ১৫২ জনের ডেথ রেফারেন্স ও যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত ১৬০ জনের আপিল রায় প্রদান শুরু হয় রোববার। প্রায় এক হাজার পৃষ্ঠার পর্যবেক্ষণ পড়া শেষে সোমবার দুপুরে পড়া হয় রায়ের অংশ। প্রায় ১০ হাজার পৃষ্ঠার ঐতিহাসিক এই রায়ে- বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ পাওয়া ১৫২ জনের মধ্যে আটজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং চারজনকে খালাস দেয়া হয়। একজন আসামির মৃত্যু হওয়ায় তার সাজা গণ্য হয়নি।

বিচারিক আদালতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ পাওয়া ১৬০ জনের মধ্যে ১৪৬ জনের সাজা বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। যে বারোজন আসামিকে খালাস দিয়েছেন আদালত, তার মধ্যে আছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ তোরাব আলী। এছাড়া, মৃত্যু হয়েছে দুই আসামির।

এ রায়ের অন্যতম উল্লেখযোগ্য দিক হলো, বিচারিক আদালতে খালাসপ্রাপ্ত ৬৯ জনের বিরুদ্ধে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ ৩১ জনের সাজা দেয়াতে পেরেছেন।

দুপুর আড়াইটায় রায় ঘোষণা শুরু করেন হাইকোর্টের ৩ সদস্যের বিশেষ বেঞ্চ। এর আগে শুরুতে রায়ের পর্যবেক্ষণ দেন বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার। তিনি বলেন, বিডিআর-এ যেন কোনো অফিসার না থাকে সে লক্ষ্যেই হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের পর এরকম নৃশংসতা নজিরবিহীন বলেও মন্তব্য করেন আদালত।

তিনি আরও বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান নেই। সেক্ষেত্রে মানবাধিকারের প্রসঙ্গ তোলা হয়। কিন্তু হত্যা একটি জঘন্য অপরাধ। এই অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি হলে তা সমাজের কাছে নজির রাখবে। অপরাধীরা অপরাধ করতে নিরুৎসাহিত হবে।

১ হাজার পৃষ্ঠার পর্যবেক্ষণের শেষাংশে আদালত বলেন, হত্যাকাণ্ডের সময় বাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থা কী করছিল, তারা কেনো ব্যর্থ হলো, তা জানতে কমিটি গঠন করা উচিত। ব্যর্থতার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া এবং সেই সব তথ্য জনসম্মুখে প্রকাশের সুপারিশ করেন হাইকোর্ট।

২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর, বর্তমানে বিজিবি, সদর দপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনাকর্মকর্তাসহ ৭৪ জন হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর ইতিহাসের সর্ববৃহৎ এ হত্যা মামলার রায়ে ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন, ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন মহানগর দায়রা জজ আদালত।

যমুনা অনলাইন: কিউএস/টিএফ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply