সরকারের সমালোচনা করাই কিশোর মুর্তজার অপরাধ, শিরোশ্ছেদ করতে চায় সৌদি

|

১০ বছর বয়সে করা অপরাধে শিরোশ্ছেদ হতে চলেছে এক সৌদি কিশোরের। তার অপরাধ, গণতন্ত্রকে ভালোবাসে সে। সৌদির রাজতন্ত্রকে উপড়ে ফেলতে চায় সে। তার জন্য শান দেয়া হচ্ছে জল্লাদের খড়গ।

১৩ বছর বয়স থেকে সৌদি কারাগারে বন্দি এই কিশোর। তার নাম মুর্তজা কুরেইরিস। গত ৮ জুন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সিএনএনে এ বিষয়ে একটি অনুসন্ধানী রিপোর্ট প্রকাশের পর সারাবিশ্ব উত্তাল হয়ে ওঠে।

মুর্তজার ওপর ঝুলন্ত মৃতুদণ্ডাদেশ রোহিত করতে অনুরোধ জানানো হতে থাকে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। শিরোশ্ছেদের আগে তাকে বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে বিশ্ব, তার জন্য কাঁদছে আরব মায়েরা।

যদিও এখন পর্যন্ত মন গলেনি সৌদি সরকারের। মুর্তজা কুরেইরিসের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলে ১১১ বছর পর রচিত হবে আরেক ক্ষুদিরাম কাহিনী।

১৯০৮ সালে বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসুর ফাঁসি কার্যকর করে ব্রিটিশ সরকার। ফাঁসিতে ঝোলার আগে ক্ষুদিরামের বয়স ছিল ১৮ বছর, ৭ মাস এবং ১১ দিন।

ওই ঘটনার ১১১ বছর পর সৌদি আরবে শিরোশ্ছেদ হতে চলেছে কিশোর মুর্তাজা কুরেইরিসের। যার বর্তমান বয়স ১৮।

ক্ষুদিরামের মতোই রাজদ্রোহীতার অভিযোগ আনা হয়েছে মুর্তজার ওপর।

সিএনএনের রিপোর্ট অনুযায়ী মুর্তজা কুরেইরিসের বিরুদ্ধে সৌদি সরকারের অভিযোগ, ২০১১ সালে আরব বসন্ত চলাকালীন সৌদিতে গণতন্ত্রের দাবিতে ৩০ জন বন্ধু-বান্ধবদের জড়ো করে গণবিক্ষোভে নেমেছিল মুর্তজা। এক সাইকেল রাইডে অংশ নিয়ে সৌদি সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছিল তারা। সে সময় তার বয়স ছিল মাত্র ১০ বছর।

এছাড়াও তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, মুর্তাজার ভাই আলী কুরেইরিস মোটরসাইকেলেযোগে সৌদির পূর্বাঞ্চলীয় শহর আওয়ামিয়ার এক থানায় পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করেন। সে সময় তার সঙ্গে মুর্তাজাও ছিল।

এ ঘটনার ৩ বছর পর মুর্তাজাকে বাহরাইন সীমান্তে গ্রেফতার করে সৌদি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

সেদিন পরিবারের সঙ্গে সৌদি ছেড়ে প্রতিবেশী দেশ বাহরাইনে পালিয়ে যাচ্ছিল মুর্তজা।

সিএনএনের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে প্রকাশ, গ্রেফতারের সময় মুর্তজার বয়স ১৩ বছর ছিল। সৌদি রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল সে। রাজদ্রোহীতার অভিযোগে গ্রেফতার হলেও বয়স কম হওয়ার কারণে মুর্তজাকে মৃতুদণ্ড দেয়নি সৌদি আদালত। যে কারণে চার বছর ‘বিচার-পূর্ব কারাভোগ’করানো হয় তাকে।বর্তমানে তার বয়স ১৮। এখন তার মৃতুদণ্ড কার্যকর করতে চায় সৌদি সরকার।

এখন বিশ্বব্যাপী আলোচিত এক নাম মুর্তাজা কুরেইরিস। কারাগারে বসে নিজের মৃত্যুদণ্ডের দিন গুণছে সে। এদিকে মুর্তাজাকে বাঁচানোর জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ সারা বিশ্বের মানবাধিকার সংগঠনগুলো। তার মৃত্যুদণ্ড রদ করতে তারা আবেদন জানিয়েছে সৌদি আরবের কাছে।

কিন্তু সে আবেদনে এখনও অনড় সৌদি সরকার।

তাই এ বিষয়ে বেশ আশংকা প্রকাশ করছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ বিশ্বের অন্যান্য মানবাধিকার সংঘঠনগুলো।

তাদের মতে, মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা না করার বিষয়ে বিশ্বের আবেদনে আজ পর্যন্ত সাড়া দেয়নি সৌদি। এছাড়া মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার দিক থেকে বিশ্বের প্রথম পাঁচটি দেশের মধ্যে সৌদির স্থান তৃতীয়তে।

শুধু গতবছর ১৪৯ জনের শিরোশ্ছেদ করা হয়েছে সেখানে। চলতি বছর এখন পর্যন্ত ১০০ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে তারা।

বিশ্ব রাজনীতি বিশ্লেষকের মতে, রাজতন্ত্রের ওপর হুমকি আসে এমন কোনো কিছুই বরদাস্ত করে না সৌদি সরকার। সমূলে সে বিজ উপড়ে ফেলে তারা। ২০১০ সালের আরব বসন্তের জোয়ারে মিসর, তিউনিসিয়ার মতো দেশ ভেসে গেলেও খুব সফলভাবেই সেই জোয়ার আটকে দিতে পেরেছে সৌদি।

আর এই সফলতার হাতিয়ার ছিল রাজনৈতিক ও সামাজিক বিদ্রোহ দমনের জন্য সৌদি আইন মৃত্যুদণ্ড। সেই মানুষটি যে বয়েসেরই হোক তার শেষ পরণতি মৃত্যুদণ্ডই।

তাই মুর্তজা কুরেইরিসের ঘাড়ে জল্লাদের শানিত অস্ত্রই পড়তে যাচ্ছে বলে শংকায় ফেটে পড়ছেন বিশ্ববাসী।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply