পয়মন্ত মাঠে কঠিন পরীক্ষা মাশরাফীদের

|

দু’দলই উজ্জীবিত। দু’দলই একটুর আক্ষেপ মুছে জয়ের ধারায় ফিরতে উদগ্রীব। একই সমতলে দাঁড়িয়ে এবারের বিশ্বকাপে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে আজ মুখোমুখি বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড।

ব্রিটেনের মাটিতে নিজেদের সবচেয়ে পয়মন্ত ভেন্যু কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেনে আসরের সম্ভাব্য কঠিনতম পরীক্ষায় নামছেন মাশরাফীরা। শুধু বিশ্বকাপের হট ফেভারিট নয়, স্বাগতিক ইংল্যান্ড এখন একদিবসী ক্রিকেটেরই সবচেয়ে ভীতি জাগানিয়া দল।

তবে প্রতিপক্ষের নাম শুনে ভয়ে কুঁকড়ে যাওয়ার দিন অনেক আগেই পেছনে ফেলে এসেছে বাংলাদেশ। অগ্নিপরীক্ষায় মাশরাফীরা নামছেন জোড়া প্রেরণা নিয়ে। যেখানে খেলা সেই কার্ডিফ কখনও হতাশ করেনি বাংলাদেশকে। ওয়েলসের রাজধানীতে এখন পর্যন্ত দুটি ওয়ানডে খেলে দুটিতেই জিতেছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় প্রেরণা বিশ্বকাপের গত দুই আসরেই ইংল্যান্ডকে হারানোর সুখস্মৃতি।

অতীত একপাশে সরিয়ে রাখলে অবশ্য একই সমতলে দাঁড়িয়ে দু’দল। দু’দলই বিশ্বকাপ শুরু করেছে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জয় দিয়ে। দ্বিতীয় ম্যাচে জয়ের আশা জাগিয়েও পারেনি একটুর জন্য। ইংল্যান্ড ১৪ রানে হেরেছে পাকিস্তানের কাছে।

আর ২৪৪ রানের পুঁজি নিয়ে নিউজিল্যান্ডকে কাঁপিয়ে দিয়ে বাংলাদেশ দুই উইকেটে হার মানে। টানা দ্বিতীয় জয় টাইগাররা মুঠোবন্দি করতে না পারলেও হারার আগে হার না-মানার মানসিকতা বদলে যাওয়া বাংলাদেশের আরেকটি বিজ্ঞাপন হয়ে থাকবে। কিউইদের বিপক্ষে লড়াকু পারফরম্যান্সে লুকিয়ে আছে ভবিষ্যতের জ্বালানি। ছোটখাটো ভুল শুধরে প্রিয় কার্ডিফে আজ আরেকটি গৌরবগাথা লিখতে চান মাশরাফিরা।

২০০৫ সালে এই সোফিয়া গার্ডেনেই ন্যাটওয়েস্ট সিরিজের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে গোটা ক্রিকেট বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ। ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের আরেকটি দুরন্ত জয়ের সাক্ষীও সোফিয়া গার্ডেন।

এবার প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে বিশ্বকাপের আগে একবার কার্ডিফ ঘুরে গেছেন মাশরাফীরা। প্রস্তুতি ম্যাচে ভারতের কাছে হারলেও কার্ডিফের কন্ডিশন ও উইকেট সম্পর্কে ধারণা থাকায় একটু হলেও সুবিধা হবে বাংলাদেশের। নিউজিল্যান্ড ম্যাচের ভুলগুলো যন্ত্রণা হয়ে বিঁধছে সবার বুকে। আর ২০-২৫ রান বেশি করতে পারলে গল্পটা অন্যরকম হতে পারত। সাকিব আল হাসান (৬৪) টানা দ্বিতীয় ফিফটি তুলে নিলেও কেউ তাকে যোগ্য সঙ্গ দিতে পারেননি। অধিকাংশ ব্যাটসম্যান থিতু হওয়ার পর বাজে শট খেলে আউট হয়েছেন।

মুশফিকুর রহিম কাটা পড়েন রানআউটে। অধিনায়ক মাশরাফীর চোখে মুশফিকের রানআউটই ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট। আমজনতা অবশ্য মুশফিকের আরেকটি অভাবনীয় ভুলকে তুলছে কাঠগড়ায়। কিউই অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনকে নবজীবন দিয়ে মুশফিকই আসলে ডুবিয়েছেন বাংলাদেশকে। মুশফিকের ভুলে নিশ্চিত রানআউট থেকে বেঁচে যান উইলিয়ামসন। তামিম ইকবালের থ্রো সরাসরি স্টাম্প ভেঙে দেয়ার পথে ছিল।

মুশফিক স্টাম্পের পেছন থেকে হাত বাড়িয়ে বল ধরার চেষ্টা করতে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলেন। বল ধরার আগেই বেল ফেলে দেন। বেঁচে যাওয়া উইলিয়ামসনকে নিয়ে ম্যাচ বের করে নেন রস টেলর। মুশফিক এমন শিশুতোষ ভুল না করলে সাকিবের জোড়া ধাক্কায় টালমাটাল নিউজিল্যান্ড হয়তো ঘুরে দাঁড়াতে পারত না। পরে দারুণ বোলিংয়ে বাংলাদেশ ম্যাচে ফিরলেও শেষ রক্ষা হয়নি।

মাশরাফী অবশ্য মুশফিকের ভুলকে বড় করে না দেখে নিজেদের লড়াকু মানসিকতা থেকে প্রেরণা খুঁজছেন। ইংল্যান্ডকে ফেভারিট মেনেই অনুচ্চারে জয়ের স্বপ্ন বুনছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, ‘নিঃসন্দেহে টুর্নামেন্টের অন্যতম বড় দল ইংল্যান্ড। আমরা জানি, ম্যাচটা সহজ হবে না। কিন্তু আবারও বলছি, আমরা নিজেদের সম্ভাব্য সেরাটা খেলতে পারলে কী হবে তা কেউ জানে না।’

একটুর আক্ষেপ পোড়াচ্ছে ইংল্যান্ডকেও। জো রুট ও জস বাটলারের সেঞ্চুরির পরও পাকিস্তানের কাছে অপ্রত্যাশিত হার তাতিয়ে দিয়েছে স্বাগতিকদের। অনেকটা ঘোষণার সুরেই রুট বলেছেন, একই ভুল দু’বার করবে না ইংল্যান্ড।

তবে বাংলাদেশকে কতটা সমীহের চোখে দেখছে তারা, সেটা ইংলিশ পেসার লিয়াম প্লাংকেটের কথাতেই স্পষ্ট, ‘আমরা দেখেছি কীভাবে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এটা মোটেও অঘটন ছিল না। দল হিসেবে এখন তারা অনেক শক্তিশালী। ২০১০ সালে ব্রিস্টলে যখন তারা ইংল্যান্ডকে হারিয়েছিল সেটি অঘটন ছিল। কিন্তু গত বিশ্বকাপের পর বাংলাদেশের কোনো জয়ই অঘটন নয়। তাদের বিপক্ষে সেরাটাই খেলতে হবে।’


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply