গোর-এ শহীদ ময়দানে একসঙ্গে ৬ লাখ মুসল্লির নামাজ আদায়

|

বাংলাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ায় আয়তনে সবচেয়ে বড় দিনাজপুরের ঐতিহাসিক গোর-এ শহীদ বড় ময়দানে সুষ্ঠুভাবে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এই ঈদের জামাতে এবার ৬ লাখ মুসল্লির সমাগম হয় বলে দাবি করেছেন আয়োজকরা। এবারে গত বছরগুলোর চেয়ে বেশি সংখ্যক মুসল্লির সমাগম হয়েছে। এতে অনেকেই সন্তোষ প্রকাশ করেছেন আয়োজকরা।

বুধবার সকাল পৌনে ৯টায় ৫ম বারের মতো ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় দিনাজপুর গোড়-এ শহীদ বড় ময়দানে।

সকাল থেকেই আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলেও কোনো বৃষ্টি হয়নি। রোদ কম থাকায় শান্তিপূর্ণভাবেই নামাজ আদায় করেছেন মুসল্লিরা।

ঈদ জামাত সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও আয়োজনে কোনো কমতি ছিল না। পুলিশ, বিজিবি, র্যা ব, অস্ত্রধারী আনসার, ওয়াজ টাওয়ার, সিসি ক্যামেরা এবং সাদা পোশাকে পুলিশের নিরাপত্তার বলয় ছিল মাঠজুড়ে। সবমিলিয়ে সুষ্ঠুভাবে ঈদের নামাজ আদায় করতে পেরে খুশি ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা।

আয়োজকদের পক্ষ থেকে একসঙ্গে ১০ লাখ মুসল্লি যাতে করে ঈদের নামাজ আদায় করতে পারে সে ধরনের প্রস্তুতি ছিল বলে জানানো হয়েছে।

ঈদের জামাতে অংশগ্রহণ করেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজুল ইমাম চৌধুরী, জেলা প্রশাসক মাহমুদুল আলম, পুলিশ সুপার সৈয়দ আবু সায়েম, দিনাজপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমসহ বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ ও সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ।

বীরগঞ্জ থেকে আসা মুসল্লি ইয়াকুব আলী জানান, এখানে ঈদের নামাজ আদায় করতে পেরে খুব ভাল লাগছে। তাছাড়া আজকের আবহাওয়াটাও ছিল ভাল, রোদ নেই বৃষ্টি নেই।

এক কথায় শান্তিপূর্ণভাবেই নামাজ আদায় করা গেছে। এতে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেন তিনি।

জেলা শহরের মামুনুর রশিদ বকুল বলেন, এবারে একসঙ্গে অনেক লোকজনের সমাগম হয়েছে। এত লোকজনের সঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করা সবার ভাগ্যে হয় না, যেটা আমাদের হয়েছে।

এবারে ৪ স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তার ব্যবস্থা জোড়দারের পাশাপাশি সুষ্ঠুভাবে নামাজ সম্পন্ন করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ছিল সব ধরনের প্রস্তুতি।

দিনাজপুরের পুলিশ সুপার সৈয়দ আবু সায়েম বলেন, ঈদের নামাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে র্যা ব, বিজিবি, পুলিশ, অস্ত্রধারী আনসার, ওয়াজ টাওয়ার ও সিসি ক্যামেরার নিরাপত্তা ছিল। একইসঙ্গে শহর ও শহরের আশেপাশে গোয়েন্দা নজরদারী এবং ঈদগাহ মাঠজুড়ে সাদা পোশাকে পুলিশ মোতায়েন ছিল।

যে কোনো ধরনের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সচেষ্ট ছিল বলে জানান তিনি।

দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক মাহমুদুল আলম জানান, মুসল্লিরা যাতে করে সুষ্ঠুভাবে ঈদের নামাজ আদায় করতে পারে সেজন্য ব্যাপক প্রস্তুতি ছিল। সবাই শান্তিপূর্ণভাবে ঈদের নামাজ আদায় করতে পেরেছে এটাই আমাদের সফলতা। এজন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

ঈদগাহের পরিকল্পনাকারী ও প্রধান উদ্যোক্তা স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম সবাইকে এই মাঠে নামাজ আদায় করার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন, এবারে এই ঈদের জামাতে একসঙ্গে ৬ লাখ মানুষ ঈদের নামাজ আদায় করেছে। এই ঈদগাহ নির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর যে সহযোগিতা করেছে তার জন্য তার প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করি। একইসঙ্গে সবাই এই ঈদের জামাতে অংশগ্রহণ করেছেন এজন্য জনগণকেও ধন্যবাদ জানাই।

আগামীতে ধীরে ধীরে এই ঈদ জামাত আরও বড় হবে বলে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, চাঁদ দেখা নিয়ে বিভ্রান্তের সৃষ্টি না হলে মুসল্লির সংখ্যা আরও বেশি হতো।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গোড়-এ শহীদ বড় ময়দানের আয়তন প্রায় ২২ একর। ৫২ গম্বুজের ঈদগাহ মিনার তৈরিতে খরচ হয়েছে ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা। ঈদগাহ মাঠটি ঐতিহাসিক নিদর্শন ও মনোরম কৃতির সৌন্দর্য ও নান্দনিক হিসেবে নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়।

ঈদগাহ মাঠের মিনারের প্রথম গম্বুজ অর্থাৎ মেহেরাব (যেখানে ইমাম দাড়াবেন) তার উচ্চতা ৪৭ ফিট। এর সঙ্গে রয়েছে আরও ৪৯টি গম্বুজ। এছাড়া ৫১৬ ফিট লম্বায় ৩২টি আর্চ নির্মাণ করা হয়েছে। পুরো মিনার সিরামিক দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে।

ঈদগাহ মাঠের দুধারে করা হয়েছে ওজুর ব্যবস্থা। প্রতিটি গম্বুজ ও মিনারে রয়েছে বৈদ্যুতিক লাইটিং। রাত হলে ঈদগাহ মিনার আলোকিত হয়ে উঠে।

ঐতিহাসিক গোড়-এ শহীদ ময়দানের পশ্চিম দিকে প্রায় অর্ধেক জায়গা জুড়ে প্রতিষ্ঠিত এই ঈদগাহ মিনারটির পাদদেশে গত দুটি বছরে ঈদের ৪টি নামাজ আদায় হয়েছে।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply