বাসার মালিকের স্কুল পড়ুয়া মেয়ের গোসলের দৃশ্য ধারণ, চাঁদা দাবি অতঃপর গ্রেফতার

|

তিশা (ছদ্মনাম)। তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানাধীন হ্যাপি হোমস এলাকায় মা-বাবার সাথে থাকে। তিন সন্তানের মধ্যে তিশা বড়। তেজগাঁও থানাধীন একটি স্কুলে ক্লাস সিক্সে পড়ে। পড়াশুনা, ছোট ভাইবোনদের সাথে দুষ্টুমি, ব্যবসায়ী বাবার ব্যস্ততার ফাঁকে ঘোরাঘুরি- ভালোই কাটছিল দিনগুলি।

গত ২২ মে তারাবীহ’র নামাজ শেষে বিছানায় শুয়ে ফেসবুক ঘাটছিলেন তিশার বাবা। হঠাৎ তার চোখ আটকে গেল একটি ফেসবুক আইডিতে। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না তিনি। স্ত্রীকে ডাকলেন। আঁচলে মুখ ঢেকে ডুকরে কেঁদে উঠলেন তার স্ত্রী। তার চোখেও অবিশ্বাসের ছাপ। তারা দুজন ‘য়’ নামের যে ফেসবুক আইডি দেখছিলেন সে আইডির প্রোফাইলে ব্যবহার করা হয়েছে তাদের মেয়ে তিশার শুধু আপত্তিকর নয়, সম্পূর্ন নগ্ন ছবি।

তিশাকে কিছু বুঝতে না দিয়ে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলেন তার বাবা। চুলের মুঠি ধরে টানতে টানতে জিজ্ঞেস করলেন তার মা। কিছুই জানে না তিশা।

পরদিন তিশার বাবার ঘুম ভাঙলো শ্যালক রাজিবের ফোন কলে। রাজিব জানায় ‘য়’ ফেসবুক আইডি থেকে তার ম্যাসেঞ্জারে তিশার আপত্তিকর ৩-৪ টি ছবি পাঠানো হয়েছে। তিশার ছবি দেখে ‘য়’ আইডিটিতে নক করতেই আইডিটি ডিএকটিভ হয়ে যায়।

মেয়ের স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিলেন তিশার বাবা। বন্ধ করে দিলেন প্রাইভেট টিচারের কাছে পড়া। এমনকি বাসা থেকে বের হওয়াও বন্ধ।

ইফতারের ঘন্টাখানেক আগে কুমিল্লা থেকে ফোন করলো তিশার ছোট চাচা রাসেল। রাসেল জানায়, ‘য়’ ফেসবুক আইডি থেকে তার ম্যাসেঞ্জারে তিশার আপত্তিকর দুটি ছবি পাঠানো হয়েছে। ‘য়’ আইডিধারী ব্যক্তি রাসেলের ম্যাসেঞ্জারে কল করে জানিয়েছে, তিশার আরো অনেক আপত্তিকর ছবি আছে তার কাছে। তিনদিনের মধ্যে দেড় লক্ষ টাকা না দিলে সব ছবি ফেসবুকে পোস্ট করা হবে। রাসেল আরো জানালো ম্যাসেঞ্জারে টাকা চেয়ে যে ফোন করেছিল সে পুরুষ লোক।

হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন তিশার বাবা।

সন্ধ্যা ৭.২৭ মিনিটে কলিং বেল বেজে উঠলো। দরজা খুললেন তিশার মা। দরজার বাইরে দাড়ানো ব্যক্তি নিজেকে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল জোনের এসি সালমান হাসান পরিচয় দিয়ে জানান তিনি তিশার বাবার সাথে কথা বলতে চান।

তিশার বাবাকে বিষয়টি এড়িয়ে যেতে দেখে এসি সালমান হাসান জানান, কুমিল্লা থেকে রাসেল নামের একজন এসি (তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল জোন) এর অফিসিয়াল ০১৭১৩৩৯৮৫৪৫ নম্বরে ফোন করে বিষয়টি তাকে জানিয়েছে। তিশার বাবা যেহেতু এ বিষয়ে পুলিশকে জানাননি বা থানায় অভিযোগ করেন নি, তাই রাসেলের কাছ থেকে বাসার ঠিকানা নিয়ে তিনি নিজেই এসেছেন তিশার বাবার সাথে কথা বলতে।

তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বিপিএম (বার), পিপিএম ঘটনাটি জানামাত্রই তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল জোনের এডিসি হাফিজ আল ফারুক, এসি সালমান হাসান ও তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ওসি আলী হোসেনকে দ্রুত আসামীকে গ্রেফতারপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।

৩১ মে রাত

৯.৪০ এ তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল জোনের এসি সালমান হাসানের নেতৃত্বে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার এসআই তৌহিদ, এসআই নজরুল ও হাতিরঝিল থানার এএসআই তরিকুলের একটি টিম ময়মনসিংহের ভালুকা থানাধীন দামসুর এলাকা থেকে যে মোবাইল ব্যবহার ‘য়’ ফেসবুক একাউন্টটি সচল রাখা হয়েছিল সেই মোবাইলটি উদ্ধার করে এবং মোবাইলটি ব্যবহারকারী রিপাকে আরো দুইটি মোবাইলসহ আটক করে।

তিশার আত্নীয়-স্বজনদের কাছে পুরুষ কন্ঠে ম্যাসেঞ্জারে কল করে কে টাকা চেয়েছে জানতে চাইলে সে প্রথমে কিছুই জানে না জানালেও জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে রিপা স্বীকার করে সে নিজেই এ কাজ করেছে। “ম্যাজিক ভয়েস” অ্যাপ ব্যবহার করে সে এ কাজ করেছে।

রিপার কাছে যে তিনটি মোবাইল ফোন পাওয়া গিয়েছে, তার একটিতে সে ‘য়’ ফেসবুক একাউন্ট খুলে অন্য একটি মোবাইলে “ম্যাজিক ভয়েস” অ্যাপ ইনস্টল করেছিল। যে মোবাইলে অ্যাপটি ইনস্টল করা সেই মোবাইল নম্বর থেকে ‘পুরুষ কন্ঠ’ সিলেক্ট করে তার তৃতীয় মোবাইলে ফোন করে নিজেই রিসিভ করতো। রিসিভকৃত মোবাইলে তার বক্তব্য পুরুষ কন্ঠে শোনা যেতো। এরপর যে মোবাইলে ‘য়’ ফেসবুক একাউন্ট সচল সেই মোবাইল থেকে তিশার আত্নীয়দের ম্যাসেঞ্জারে কল করে তাদের কাছে টাকা দাবি করতো। এ সময় তৃতীয় মোবাইলটির লাউড স্পীকার অন করে ম্যাসেঞ্জারে তিশার আত্নীয়দের সাথে কথা যে মোবাইল ব্যবহার করা হতো সেটির পাশে রেখে রিপা একটু দূরে থেকে “ম্যাজিক ভয়েস” যে মোবাইলে ইনস্টল করা সেই মোবাইল থেকে কথা বলতো।

রিপা মূলত: তিশাদের বাসায় কাজ করতো। এক বছর আগে সে তিশাদের বাসা ছেড়ে চলে গেছে। কাজ বলতে শুধু তিশার দেখাশুনা করতো রিপা। এর ফাঁকেই সে গোপনে তার মোবাইলে এসব দৃশ্য ধারন করে। কখনো বাথরুমের দরজার ছিদ্র দিয়ে, কখনো পোশাক বদলের সময়। সে সময় মাত্র ক্লাস ফোর ফাইভ পড়ুয়া তিশা। হয়তো ভুলেও বুঝতে পারে নি তার এই দূরভিসন্ধি।

এদিকে এ ঘটনায় তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় মামলা হয়েছে।

সূত্র: ডিসি তেজগাঁও-ডিএমপি এর ফেসবুক পেইজ।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply