প্রথম ৪ ঘণ্টায় ৩৮, পরের ৪ ঘণ্টায় ৪৮ ভোট

|

বগুড়া ব্যুরো

বিকাল সোয়া ৪টা নাগাদ বগুড়া জিলা স্কুল ভোটকেন্দ্রের ৬টি ভোটকক্ষের ব্যালট একত্রিত করলেন ভোটগ্রহণে নিয়োজিত জনা বিশেক কর্মকর্তা। সিলমোহর খোলার পর ৬টি ব্যালট থেকে মিললো ৮৬ জন ভোটারের ভোটাধিকার প্রয়োগের নির্দশন। গড়ে একেকটি বুথে ভোট পড়েছে ১৪টি। অথচ এই কেন্দ্রে মোট ভোটার ১ হাজার ৯৭৫। শতাংশের হিসেবে এবারের উপজেলা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে ভোটদানের হিসেবটা ৪ শতাংশের কিছু বেশি।

ভোটপ্রদানের হার যে এবার তুলনামূলক কমছে, তার খানিকটা আলামত সকাল থেকেই মিলছিলো বিভিন্ন কেন্দ্রে। বগুড়ার করোনেশন ইন্সটিটিউশনে স্থাপিত তিনটি ভোট কেন্দ্রের ১৮টি বুথের মধ্যে প্রথম ভোট পড়ে সকাল ৮টা ৪২ মিনিটে।

নির্বাচন কর্মকর্তারা কেন্দ্রগুলোর সকালের এমন দৃশ্য সময় গড়ানোর সঙ্গে পাল্টে যাবার আশা করলেও দিন শেষে দৃশ্যপট খুবেকটা পাল্টায় নি। জিলা স্কুল ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণের প্রথম ৪ ঘণ্টায় ভোট পড়ে ৩৮টি। শেষ সময় পর্যন্ত পরের চার ঘণ্টায় এই কেন্দ্রে আসেন আর মাত্র ৪৮ জন ভোটার।

শহরের বাইরেও ইউনিয়ন পর্যায়েও ভোটার উপস্থিতির দৃশ্য কম-বেশি এমনই ছিলো সারাদিন। দুপুর দেড়টার দিকে নিশিন্দারা ইউনিয়নের আবদুল করিম বালিকা বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ভোটপ্রদানের সংখ্যা ছিলো ৩২৬টি। কেন্দ্রে নারী-পুরুষ মিলিয়ে মোট ভোটার ২ হাজার ৬৬৩।

দুপুর ২টার দিকে গোকুল ইউনিয়নের রামশহর প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার হারুনুর রশীদ জানান, ৬ ঘণ্টায় তার কেন্দ্রে ৩০২ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। এই কেন্দ্রের মোট ভোটার ২ হাজার ২৭৫। বাঘোপাড়া শহীদ দানেশ স্কুল ও কলেজ ভোটকেন্দ্রে ৩৪৬১ জন ভোটারের মধ্যে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ৮৭১ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন বলে জানান কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান।

এমন নজিরবিহীন কম ভোটার উপস্থিতির দিনে বেশিরভাগ কেন্দ্রেই দেখা গেছে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা কিংবা নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের অলস সময় কাটাতে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সদর উপজেলার বেলঘরিয়া ভোটকেন্দ্রে দেখা যায়, ভোটারশূণ্য প্রাঙ্গনে স্কুলের দোলনায় দোল খেতে মশগুল কয়েকজন আনসার সদস্য। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ভোটার উপস্থিতি শূণ্য থাকায় এভাবে বসে বসেই ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা আর নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা অপেক্ষা করেছেন বিকেল ৪টার।

এমন নিরুত্তাপ ভোটের দিনেও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে বারোপুর আবদুল করিম বালিকা বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কয়েকজন বহিরাগত কেন্দ্রের ৪ নম্বর ভোটকক্ষ থেকে চেয়ারম্যান পদের একটি ব্যালটপেপারের বাণ্ডিল ছিনিয়ে নিয়ে যান।

কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার প্রথমে বিষয়টি অস্বীকার করলেও পরে জানান, পুলিশের সহায়তায় ব্যালটপ পেপারগুলো অক্ষত ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এসময় তিন যুবককে ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নেয়ার জন্য প্রিজাইডিং অফিসারের কাছে ক্ষমা চাইতেও দেখা যায়। ক্ষমা চেয়ে পুলিশের সামনে দিয়ে তারা ভোটকেন্দ্রের বাইরে চলে যাবার পর, খানিকবাদে পোষাক পাল্টে এদের একজনকে আবারো ভোটকেন্দ্রের ভেতেরই ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়।

বিকেল ৪টায় ভোটগ্রহণ শেষে জেলার ৯২৬টি কেন্দ্রেই ভোটগণণা শুরু হয়। সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা জাকির হোসেন যমুনা নিউজকে জানান, সকাল থেকে দিনভর ভোটের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু ছিলো। ভোটার উপস্থিতি কিছুটা কম থাকলেও নির্বাচন নিয়ে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায় নি বলেও তিনি জানান।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply