শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়েই ডাকসুতে লড়ছেন তারা

|

চোখের আলো ছাড়াই জন্মে ছিলেন আমজাদ হোসেন ও মো. রুবেল মিয়া। কিন্তু নিজের আলোয় আলোকিত হয়েছেন তারা। পড়ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। আরেকজন যোশীয় সাংমা চিবল। চলাফেরার ভরসা হুইল চেয়ার। তিনিও নিজ যোগ্যতায় জায়গা করে নিয়েছেন দেশসেরা এই বিদ্যাপীঠে। ইচ্ছা শক্তির কাছে পরাজয় ঘটেছে তাদের শারীরিক প্রতিবন্ধকতা। হতাশায় মুষড়ে পড়ে যারা জীবনকে থামিয়ে দিতে চান তাদের কাছে প্রেরণা হয়ে থাকবেন এই তিনজন।

আসন্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে এই তিনজনই সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচিত হলে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের কণ্ঠস্বর হতে চান তারা। অংশ নিতে চান শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে।

ছাত্রলীগ সমর্থিত সম্মিলিত শিক্ষার্থী সংসদের প্যানেলে নির্বাচন করছেন চিবল। সংস্কৃত বিভাগের মার্স্টাসের এই শিক্ষার্থী জানান, ক্যাম্পাসে একজন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। অধিকাংশ ভবনে তাদের জন্য আলাদা কোনো প্রবেশ পথ নেই। যার কারণে অন্যের সাহায্য নিতে হয়। লাইব্রেরীতে তাদের জন্য আলাদা বসার কোনো ব্যবস্থা নেই।

তিনি বলেন, লাইব্রেরীতে একজন স্বাভাবিক শিক্ষার্থীকে সিট পেতে সকাল ৬টা থেকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় সেটা একজন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর জন্য কতটুকু মানবিক। চিবল নির্বাচিত হলে প্রতিবন্ধীদের এই সমস্যাগুলো নিয়ে কাজ করবেন বলে জানান।

বামজোটের প্যানেলে নির্বাচন করছেন বাংলা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. আমজাদ হোসেন। তিনিও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর জন্য কাজ করার ওপর জোর দেবেন বলে জানান।

আমজাদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর দেখেছি সাধারণ ছাত্রদের উপর ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনগুলোর নির্যাতন নিপীড়ন। এছাড়া দিনে পাবলিক রাতে প্রাইভেট করে রাখা, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবন্ধীদের অনুপযোগী ভবন, বিল্ডিং কোড না মানা, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য রাস্তায় কোনো র‌্যাম্প না থাকা, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা ভালো ফলাফল করেও নিয়োগ না পাওয়া আমাকে ভাবাতো। আমি মনে করি ডাকসু এসব বিষয় সম্পর্কে আওয়াজ তোলার একটি প্ল্যাটফর্ম। আমি যদি নির্বাচিত হই তাহলে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করে যেতে চাই।

স্বতন্ত্র প্যানেল থেকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের মার্স্টাসের শিক্ষার্থী মো. রুবেল মিয়া। তিনি জানান, বিশ্বের অন্য দেশগুলোতে শ্রুতি লেখক বিশ্ববিদ্যালয় ঠিক করে দেয়। কিন্তু আমরা পরীক্ষার আগ মুহূর্তে শ্রুতি লেখক খুঁজতে হয়। আমি মনে করি এটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই এ ব্যবস্থাটা থাকা উচিত।

রুবেল মিয়া আরো জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্রেইলে পড়ার সুযোগ নেই। রেকর্ড শুনে পড়তে হয়। যেটা যথেষ্ট নয়। যার কারণে আমরা অন্যদের থেকে পিছিয়ে পড়ি। এসব বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষার্থীদের অন্যান্য সমস্যা নিয়েও কাজ করতে চান রুবেল মিয়া।

যমুনা অনলাইন: এফএম


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply