বিমান ছিনতাই : এক সুতোয় গাঁথা কিছু গল্প

|

নিরজা ভানোত। মনে আছে নামটি? সেই বীরত্বগাথা গল্প, এক সাহসী কন্যার অসামান্য আত্মদানের গল্প। গল্প না বলে এটাকে ইতিহাস বলাই শ্রেয়। ছোট্ট করে বলি।

ভারতের চন্ডিগড়ের মেয়ে। ১৯৮৫-তে মাত্র ২২ বছর বয়সে বাবা-মায়ের পছন্দে বিয়ে করেছিলেন নিরজা। স্বামীর অত্যাচারে সংসার ছেড়ে বাবার কাছে চলে আসেন তিনি। ঠিক তার বছর খানেক পর একদিন পত্রিকায় একটি বিজ্ঞাপন চোখে পড়ে। বিমানবালা নেবে ‘প্যান এম’ কোম্পানিতে। স্বাধীনচেতা নিরজা পরিবারের সম্মতিতেই আবেদন করেন। চাকরিও হয়ে যায় সেখানে।

১৯৮৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ভারতে থেকে পাকিস্তান হয়ে নিউ ইয়র্ক যাবার পথে ‘প্যান এম ৭৩’ বিমানের বিমানবালা ছিলেন নিরজা। সেই বিমানেই উঠে পড়ে একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী। দুর্বৃত্তদের লক্ষ্য ছিল, বিমান ছিনতাই করে যাত্রী জিম্মি করবে। বিনিময়ে ছাড়িয়ে নেবে কারাগারে থাকা অন্য জঙ্গিদের। প্রায় ১৭ ঘণ্টা বিমানের সবাইকে জিম্মি করে রাখে সন্ত্রাসীরা। সেদিন শুধু নিরজার দক্ষতা আর বিচক্ষণতাতেই রক্ষা পায় বিমানে থাকা ৩৬০ জন। তাদের বাঁচাতে গিয়ে পৃথিবীই ছাড়তে হয় নিরজাকে। মারা যান আরও ১৯ জন। সন্ত্রাসীরা সেদিন মাথায় গুলি করে হত্যা করে সাহসী নিরজা ভানোতকে। অনেকেই দেখেছেন হয়ত, সেই ঘটনা নিয়ে ‘নিরজা’ নামে একটি সিনেমাও হয়েছে বলিউডে।

আরেকটি ঘটনা বলি। সেটি অবশ্য নিরজার সেই আত্মবলিদানের ঘটনার পরে ঘটেছে। ১৯৯৪ সালে কাশ্মীরে জঙ্গি তৎপরতার অভিযোগে গ্রেফতার হন মাসুদ আজহার। প্রায় চার বছর পর ১৯৯৯ সালে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিমান ছিনতাই করে জঙ্গিরা। বিমানটি নিয়ে যায় আফগানিস্তানের কান্দাহারে। সেখানে যাত্রীদের জিম্মি করে ছাড়িয়ে নেয়া হয় ভয়ঙ্কর জঙ্গিনেতা মাসুদ আজহারসহ আরও তিন উগ্রপন্থিকে। ছাড়া পেয়ে সেই কথিত ‘মাওলানা মাসুদ’ গঠন করে ‘জইশ-ই-মুহাম্মদ’ নামে জঙ্গি সংগঠন।

বলে রাখি, এই জইশ-ই-মুহাম্মদকেই সম্প্রতি ভারতের কাশ্মীরের পুলওয়ামায় চালানো হামলার জন্য দায়ী করা হচ্ছে। যে হামলায় মারা গেছেন দেশ রক্ষার দায়িত্বে থাকা অন্তত ৪০ জওয়ান। যার মাস্টার মাইন্ডও ধরা হচ্ছে সেই কথিত মাওলানা মাসুদ আজহারকেই। বিভিন্ন ভারতীয় গণমাধ্যমের তথ্য, শারীরিকভাবে অনেকটা অসুস্থ হলেও মগজ ধোলাইয়ের জন্য ‘ওস্তাদ’ মাসুদ আজহার। অনেকে নাকি তাকে ‘দাদা মাসুদ’ বলেও ডাকেন।

দুটি ঘটনাই আলাদা। প্রথমটি ঘটেছে ১৯৮৬’তে। আর পরেরটি ৯৯-এ। বছরের হিসেবেও তা প্রায় ১১ বছর ফারাক। কিন্তু দুইটি ঘটনার লক্ষ্য ছিল এক-অভিন্ন। বাংলাদেশেও এমন একটি ঘটনা হয়ত ঘটতে চলেছিল। চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দর থেকে দুবাইগামী একটি ফ্লাইট উড্ডয়নের খানিকক্ষণ বাদেই পড়ে এক হাইজ্যাকারের কবলে। সে অস্ত্র ঠেকিয়ে ককপিটে ঢোকার চেষ্টা করে। কেউ কেউ বলছেন, ওই বিমান ছিনতাইকারি নাকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথেও কথা বলতে চেয়েছে।

এসব ঘটনা শুনে আমি কিছু বিষয় মেলাচ্ছি। এমন ঘটনা তো সেই প্যান এম ৭৩ বা এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনার মতও হতে পারত! বাংলাদেশের কারাগারে কত ভয়ানক জঙ্গি আছে। যাত্রীদের জিম্মি করে আজ বিমান থেকে আটক হওয়া যুবক দাবি করতে পারত, সঙ্গীদের ছেড়ে দিন। নয়ত ফুটিয়ে দেব বোমা, উড়িয়ে দেব সবাইকে!

একটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে। বিমানবন্দর মানেই একটি নিরাপদ স্থান। কতবার কত নিরাপত্তা রক্ষীর চেকের পর একজন যাত্রীকে ফ্লাইটে উঠতে হয়েছে। সেখানে এক ব্যক্তি অস্ত্র ও বোমা সদৃশ বস্তু নিয়ে বিমানে উঠে গেল? এত সহজ বিষয়টি? নিরাপত্তায় কোথাও গলদ আছে, এটা নিশ্চিত। নাকি এর পেছনে অন্য কারও হাত আছে? বিমানে ঘটনাটি ঘটেছে বলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও নিশ্চয়ই এমন প্রশ্ন উঠবে। তাই এসবের উত্তর খুঁজতে হবে সরকারকে। খুঁজে বের করতে থলের বিড়াল।

বাংলাদেশে একটি বিষয় বেশ কমন। বড় কোন ঘটনা ঘটলেই আমরা বেমালুম ঠিক আগের ঘটনাটি ভুলে যাই। এক্ষেত্রেও যাতে এমনটি না হয়, তাই চাই।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply