যা আছে বিএনপির নির্বাচনী ইশতেহারে

|

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইশতেহার প্রকাশ করেছে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।
আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় রাজধানীর গুলশানে হোটেল লেকশোরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ইশতেহার ঘোষণা করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

ইশতেহারের সূচনা বক্তব্যে ফখরুল বলেন, দেশে আঞ্চলিক ও শ্রেণি বৈষম্য ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করছে। দারিদ্র্য হ্রাসের হার কমেছে। দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন জনাব তারেক রহমান রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে দেশে ফিরতে পারছেন না। আপনারা বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের মর্যাদা ও সম্মান প্রতিষ্ঠার জন্য আপনাদের মূল্যবান সমর্থন প্রদান করবেন।

তিনি আরো বলেন, নির্বাচনে জয়লাভ করলে সকলের ঐক্যমত, অন্তর্ভূক্তি এবং প্রতিহিংসাহীন ভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করা হবে।

এর পরেই তিনি বিএনপির নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন।

বিএনপির নির্বাচনী ইশতেহার হলো-

  • #১. গণতন্ত্র ও আইনের শাসন
    *একটানা দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী না থাকার বিধান সহ সংসদের ডেপুটি স্পিকার বিরোধীদল থেকে নির্বাচিত করা হবে।
    *নির্বাচনকালীন সরকারের বিধান রেখে নির্বাচন কমিশনকে পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা প্রদান করার পাশাপাশি সবার সাথে আলোচনা করে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ পরিবর্তন করা হবে।
    *জাতীয় সংসদে উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা করা হবে
    *র‍্যাব সহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে। র‍্যাবের কাঠামো পরিবর্তন করে অতিরিক্ত আর্মড পুলিশ গঠন করা হবে
    *বিডিআর হত্যাকান্ডসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি সংক্রান্ত সকল অনুসন্ধান রিপোর্ট প্রকাশ করা হবে
    *প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য সহ উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসেব প্রতি বছর প্রকাশ করা হবে
    *রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর চলাচলের সময় জনভোগান্তি তৈরি না হওয়ার বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে
    *দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে সর্বাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে
  • #২. বিচার বিভাগ
    *সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে নিম্ন আদালতের নিয়ন্ত্রণ রাষ্ট্রপতির হাত থেকে সুপ্রিম কোর্টের হাতে ন্যস্ত করা হবে
    *বর্তমান বিচার ব্যবস্থা সংশোধনের জন্য জুডিশিয়াল কমিশন গঠন করা হবে
  • #৩. মত প্রকাশের স্বাধীনতা
    *অনলাইন মনিটরিং তুলে জনগণকে অবাধে মত প্রকাশের সুযোগ দেয়া হবে
    *ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সহ অফিসিয়াল সিক্রেটস এ্যাক্ট বাতিল করা হবে
    *বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪ বাতিল করা হবে
    *রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের যুক্তিসংগত সমালোচনা করার অবাধ অধিকার থাকবে
  • #৪. ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ
    *দেশের উন্নয়নের ক্ষমতা থাকবে স্থানীয় সরকারের হাতে
    *জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে জেলা পরিষদ নির্বাচন করা।
  • #৫. অর্থনীতি
    *জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ১১ শতাংশে উন্নীত করা হবে
    *রপ্তানী প্রবৃদ্ধির হার ৩গুণ বাড়ানো হবে
    *অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিক ডিভিশন বিলুপ্ত করে রাষ্ট্রয়াত্ব ব্যাংকের দায়িত্ব কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে ন্যস্ত করা হবে
    *শেয়ার বাজার, ব্যাংক ও সামাজিক নিরাপত্তা তহবিল যাতে কেউ লুট না করতে পারে তার জন্য বোর্ড গঠন করা হবে
    *বর্তমানে চলমান কোন উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ করা হবেনা, তবে বর্তমান সরকারের শেষ ২ বছরে তড়িঘড়ি করে নেয়া প্রকল্পগুলো পুনর্বিবেচনা করা হবে।
  • #৬. মুক্তিযোদ্ধা
    *সকল মুক্তিযোদ্ধাকে ‘রাষ্ট্রের সম্মানিত নাগরিক’ হিসেবে ঘোষণা করা হবে, এবং তাদের ভাতা বৃদ্ধি করা হবে
    *মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের তালিকা প্রণয়ন করে তাদের রাষ্ট্রীয় সম্মাননা প্রদান করা হবে
  • #৭. যুব, নারী ও শিশু
    *তরুণদের স্বার্থ রক্ষার্থে ইয়ুথ পার্লামেন্ট গঠন করা হবে
    *ক্রিড়া ক্ষেত্রে নারীদের উন্নয়নে পৃষ্ঠপোষকতা করা হবে
    *শিশু সন্তান রেখে যাতে নারীরা নির্বিঘ্নে কাজ করতে পারেন সে লক্ষ্যে অধিক সংখ্যক দিবা যত্ন কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে
  • #৮. শিক্ষা ও কর্মসংস্থান
    *শিক্ষাখাতে জিডিপির ৫ শতাংশ বরাদ্দ করা হবে
    *পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষা বাতিল করা হবে।
    *জাতীয় ভাবে একটি পৃথক শিক্ষা চ্যানেল চালু করা হবে
    *স্বল্পআয়ের পরিবারের ছাত্রছাত্রীদের জন্য স্বল্প সুদে শিক্ষা ঋণ চালু করা হবে
    *ডাকসু সহ সকল ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিশ্চিত করা হবে।
    *ভ্যাট বিরোধী, কোটা বিরোধী ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলকরীদের উপর আনীত সকল মামলা প্রত্যাহার এবং আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে
    *তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য ২০ বছর মেয়াদী ঋণ চালু করা হবে
  • #৯. তথ্য ও প্রযুক্তি
    *ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং খাতে সুবিধা প্রদানের জন্য স্বল্প চার্জে Global Payment Gateway সুবিধা দেয়া হবে
    *Nationwide Telecommunication Transmission Internet Network, Internet Service Provider, International Internet Gateway উন্মুক্ত করে দেয়া হবে।
    *এ্যনিমেশন ও রোবটিকখাতে জোড় দেয়া হবে
    *VOIP ব্যবস্থা উন্মুক্ত করে দেয়া হবে
    *ই-গভর্নমেন্ট চালুর লক্ষ্যে ক্লাউড এন্টাপ্রাইজ এ্যাপ্লিকেশন ডেভলপ করা হবে
    *আন্তর্জাতিক চুক্তি সম্পাদনে দেশীয় কোম্পানীগুলোকে প্রধান্য দেয়া হবে
    *ইন্টারনেট ও মোবাইল ডাটার সর্বােচ্চ গতি নিশ্চিত করা হবে
  • #১০. ক্রীড়া ও সংস্কৃতি
    * প্রতি জেলায় আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর ক্রীড়া একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা হবে
    *জাতীয় ভাবধারার পরিপন্থী অপসংস্কৃতি চর্চাকে নিরুৎসাহিত করা হবে
  • #১১. বৈদেশিক ও প্রবাসী কল্যাণ
    *ঝুকিমুক্ত অভিবাসন নিশ্চিত করা সহ এই ব্যবস্থার ক্ষেত্রে সর্বােচ্চ সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা হবে
    *বিদেশফেরত প্রবাসীদের বিমানবন্দরে হয়রানী রোধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে
    *বিদেশে আটকে পড়া বা বিপদগ্রস্থ প্রবাসীদের রক্ষা ও ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় কনস্যুলেট সেবা এবং আর্থিক সেবা প্রদান করা হবে
    *প্রবাসীদের ভোটে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে
  • #১২. কৃষি ও শিল্প
    *কৃষকদের মূল্য সমর্থন ও উপকরণ ভর্তুকি দেয়া হবে
    *শষ্য বীমা, পশু বীমা, মৎস বীমা এবং পোল্ট্রি বীমা চালু করা হবে
    *প্রাকৃতিক দুর্যোগকবলীত কৃষকদের সুদ মওকুফ করা হবে
    *পুনর্বাসন ছাড়া বস্তিবাসী ও হকারদের উচ্ছেদ করা হবেনা
    *স্বাস্থ্যবীমার মাধ্যমে শ্রমিকরা নির্দিষ্ট পরিমাণ প্রিমিয়াম সেবা পাবেন
  • #১৩. স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা
    *জিডিপির ৫ শতাংশ স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় করা হবে
    *বিশিষ্ট চিকিৎসকদের নিয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষার উন্নতির জন্য জাতীয় এ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল গঠন করা হবে
    *ঔষধ ও ডায়গনস্টিক পরীক্ষার সকল খরচ উল্লেখযোগ্য হারে কমানো হবে
  • #১৪. প্রতিরক্ষা ও পুলিশ
    *নিয়োগে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান, নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ব্যতীত সকল কোটা বাতিল করা হবে
    *প্রতিরক্ষা বাহিনীর সকল সরঞ্জান অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ক্রয় করা হবে
    *সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যদের জন্য কল্যাণমূলক প্রকল্প গ্রহন করা হবে
    *পুলিশের ঝুকি ভাতা বৃদ্ধি সহ অবসরের পরও রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা হবে
    *ইন্সপেক্টর ও সাব-ইন্সপেক্টরদের বেতন ৬ মাসের মধ্যে আপগ্রেড করা হবে
  • #১৫. আবাসন, পেনশন ফান্ড ও রেশনিং ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা
    *দু:স্থ বিধবা ও স্বামী পরিত্যাক্তা এবং অসহায় বয়স্কদের ভাতার পরিমান বৃদ্ধি করা হবে
    *নিম্নআয়ের মানুষের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা হবে
    *বেসরকারি ও স্বনিয়োজিত খাতে কর্মরত ব্যক্তিদের জন্য ‘পেনশন ফান্ড’ গঠন করা হবে
  • #১৬. পরিবেশ
    *উপকূল এলাকাসহ সারাদেশে নিবিড় বনায়ন করা সহ সুন্দরবনের জীববৈচিত্র রক্ষায় যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে
  • #১৭.পররাষ্ট্র
    *বিএনপি কোন রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ কর্মকান্ড হস্তক্ষেপ করবেনা এবং কোন রাষ্ট্র দেশের অভ্যন্তরীণ কর্মকান্ডে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করলে তা কঠোরভােব প্রতিহত করা হবে।
    *মুসলিম দেশসমূহ এবং প্রতিবেশী দেশের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে জোড় দেয়া হবে
    *আন্তর্জাতিক নদী আইন অনুযায়ী বাংলাদেশে বহমান আন্তর্জাতিক নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে আঞ্চলিক ও পারস্পরিক সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে আলোচনা করা হবে।
  • #১৮. জ্বালানী
    *প্রথম বছর বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানো হবেনা
    *জিও-থারমাল, সমুদ্র তরঙ্গ, বায়োগ্যাস ও বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা করা হবে
    *বড় বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্র জলাধার, গ্যাস প্ল্যান্ট স্থাপনে প্রয়োজনবোধে বেসরকারি যৌথ উদ্যোগ গ্রহন করা হবে
  • #১৯. ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়
    *পাহাড়ি ও সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জীবন, সম্পদ ও সম্ভ্রম রক্ষা করা হবে
    *পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়ন কার্যক্রম আরো জোড়ালো করা হবে
    *ধর্মীয় সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে

সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply