আওয়ামী লীগের ইশতেহারে যা যা রয়েছে

|

আমার গ্রাম -আমার শহর, তারুণ্যের শক্তি-বাংলাদেশের সমৃদ্ধি এই প্রধান দুটি অঙ্গিকারকে সামনে রেখে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। মঙ্গলবার সকালে রাজধানী হোটেল সোনারগাঁওয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ইশতেহার ঘোষণা করেন দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নৌকায় ভোট চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা নৌকায় ভোট দিন, আমরা আপনাদের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি দিবো। এমন ইশতেহার দেওয়া হয়েছে যা বাস্তবায়নযোগ্য। আমরা কথায় নয়, কাজে বিশ্বাসী। এবারের অঙ্গীকার, টেকসই বিনিয়োগ ও অন্তর্ভূক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিত করবো।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, মানুষ মাত্রই ভুল হয়। কাজ করতে গিয়ে আমার বা আমার সহকর্মীদেরও ভুল-ভ্রান্তি হয়ে থাকতে পারে। আমি নিজের ও দলের পক্ষ থেকে ভুল-ভ্রান্তি গুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য দেশবাসীর প্রতি সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাচ্ছি।

কথা দিচ্ছি, অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে আরও সুন্দর ভবিষ্যত নির্মাণ করবো। জাতির পিতার কাঙ্খিত ক্ষুধা, দারিদ্র, নিরক্ষরতামুক্ত অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলব। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগই পারবে দেশকে সামনে এগিয়ে নিতে। স্বাধীনতা বিরোধী কোনো শক্তি এসময় রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকলে তা হবে মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য গ্লানিকর।

আওয়ামী লীগের ইশতেহার: 

আমার গ্রাম আমার শহরঃ প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণ

নির্বাচিত হলে প্রতিটি গ্রামকে শহরে উন্নীত করার কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায় দন করা হবে। শহরের সব সুবিধা গ্রামে পৌঁছে যাবে। পাকা সড়কের মাধ্যমে সকল গ্রামকে জেলা/উপজেলা শহরের সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে। কর্মসংস্থানের জন্য জেলা/উপজেলা শহরের সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে।

 তরুণ যুবসমাজঃ তারুণ্যের শক্তি, বাংলাদেশের সমৃদ্ধি

আগামী ৫ বছরে ১ কোটি ২৮ লাখ কর্মসৃজনের লক্ষে উদ্যোগ নেওয়া হবে। প্রতি উপজেলা থেকে প্রতি বছর ১ হাজার যুব/যুব মহিলাকে বিদেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে।

সোনার বাংলা ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রধানতম শক্তি যুবশক্তি। কর্মসংস্থানের জন্য উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত ন্যাশনাল সার্ভিস প্রসারিত করা হবে। তরুণদের মধ্যে উদ্যোক্তা হওয়ার প্রবণতা ও আত্মকর্মসংস্থান বৃদ্ধি করতে কর্মসংস্থান ব্যাংকক এর মাধ্যমে বিনা জামানতে ও সহজ শর্তে ঋণের সুবিধা আরও বিস্তৃত করা হবে।

  • গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের চলমান প্রক্রিয়া আরও জোরদার করা হবে। মানবাধিকার কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, গণমাধ্যম, বিচার বিভাগকে আরও শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
  • নাগরিকের আইনের আশ্রয় ও সাহায্য সহায়তা লাভের সুযোগ অবারিত করা হবে। মানবাধিকার লংঘনের যেকোনো প্রচেষ্টা প্রতিহত করা হবে।
  • দক্ষ, সেবামুখী ও জবাবদিহিতামূলক প্রশাসন নিশ্চিত করা হবে।
  • জনবান্ধব আইন শৃঙ্খলা বাহিনী গড়ে তোলা হবে।
  • আগামী ৫ বছরে জনসংখ্যার অনুপাতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীতে জনবল দ্বিগুন করা হবে।
  • আধুনিক তথ্য ও প্রযুক্তি চালুর মাধ্যমে দুর্নীতির পরিধি ক্রমান্বয়ে শূন্যে নামিয়ে আনা হবে।
  • সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, মাদক নির্মূলে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দখলদারি বন্ধে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে।
  • স্থানীয় সরকার প্রতাষ্ঠানসমুহকে অধিকতর আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা প্রদান করা হবে।
  • আগামী ৫ বছরে জিডিপি ১০ শতাংশে উন্নীত করা হবে। ২০৩০ সালে মাথাপিছু আয় হকে ৫ হাজার ৪৭৯ ডলারের বেশী। ২০৪১ সালে উন্নত দেশ হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়াবে। দারিদ্র নামবে শুণ্যে কোঠায়।
  • ১০টি মেগা প্রকল্পের কাজ অব্যাহত থাকবে।
  • কর্মক্ষেত্রে নারী পুরুষের সমান মজুরি নিশ্চিত করা হবে।
  • আগামী ৫ বছরে সামাজিক সুরক্ষার আওতা দ্বিগুন করা হবে। সহজ শর্তে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে ঋণ প্রদানের মাধ্যমে আয়বর্ধনমূলক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করা হবে।
  • কৃষিতে ভর্তুকিসহ সুযোগ সুবিধা অব্যাহত থাকবে। কৃষিপণ্যের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করা হবে। কৃষি গবেষণায় বাজেট বরাদ্দ আরও বাড়াতে হবে।
  • ২০২০ সালের মধ্যে সকলের জন্য বিদ্যুৎ নিশ্চিত করা হবে। ২০২৩ সালের মধ্যে ২৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ও ৫০০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করা হবে।
  • পদ্মাসেতুর দুই পাড়ে আধুনিক শিল্পনগরী গড়ে তোলা হবে। নারী শ্রমিকদের জন্য ৫ মাসের বেতনসহ মাতৃত্বকালীন ছুটি বাস্তবায়ন করা হবে। শ্রমিক, হতদরিদ্র এবং গ্রামীণ ভূমিহীন ক্ষেতমজুরদের জন্য রেশনিং প্রথা চালু করা হবে।
  • শিক্ষাখাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ নিশ্চিত করা হবে। মান উন্নয়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
  • নৃ-গোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষায় শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করে প্রয়োজনীয় বই বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে।
  • ১ বছরের নিচে ও ৬৫ বছরের উপরে সকল নাগরিকদের জন্য বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হবে।
  • ঢাকা ও বিভাগীয় শহরের মধ্যে বুলেট ট্রেন চালু করা হবে। ৫ বছরে ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথ খনন করা হবে। .
  • নতুন একটি আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর নির্মাণ করা হবে।
  • রাজধানীর গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে আধুনিক বাস সার্ভিস চালু করা হবে।
  • উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ সহজতনমর করতে যমুনা নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মাণ করা হবে।
  • ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ৫ জি নেটওয়ার্ক চালু করা হবে। মোবাইল ও ইন্টারনেটের মূল্য যুক্তিসঙ্গত পর্যায়ে নামিয়ে আনা হবে।
  • দায়িত্ব পেলে সমুদ্র সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে।
  • জলবায়ু ট্রাস্টের ফান্ড এ বরাদ্দ আরও বাড়ানো হবে। উৎপাদনশীল বনের আয়তন ২০ শতাংশে উন্নীত করা হবে।
  • শিশু কল্যাণ, প্রতিবন্ধী ও প্রবীনদের কল্যাণে সুযোগ সুবিধা বাড়ানো হবে।
  • মুক্তিযোদ্ধাদের চলমান সুযোগ সুবিধা অব্যাহত থাকবে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণে বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
  • কোরআন সুন্নাহ বিরোধী কোনো আইন করা হবে না।
  • ক্রীড়া ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন করা হবে। প্রতিটি উপজেলায় মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হবে।
  • সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র নৃ-জাতিগোষ্ঠীর প্রতি বৈষম্যমূলক সকল প্রকার আইন ও ব্যবস্থার অবসান করা হবে।
  • অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা চর্চায় সাংবাদিকদের উৎসাহিত ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। পেশাগত দায়িত্ব পালনে সাংবাদিক ও সংবাদকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। গণমাধ্যম বান্ধব আইন করা হবে। সাংবাদিক ও গণসাধ্যমেে বিরুদ্ধে কোন আইনের অপপ্রয়োগ হবে না।
  • নির্বাচিত হলে সশস্ত্রবাহিনীকে সকল বিতর্কের উর্ধ্বে রাখার নীতি অব্যাহত থাকবে। সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর আধুনিকায়নের চলমান প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।
  • বাংলাদেশের ভূখন্ডে জঙ্গিবাদ, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ ও বিচ্ছিন্নতাবাদী কোনো শক্তিকে প্রশ্রয় না দেওয়া দর নীতি অব্যাহত থাকবে।
    রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।
  • সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে এসডিজি’র লক্ষ্যমাত্রাগুগুলো অর্জন করা হবে।
  • জলবায়ুর ঘাত প্রতিঘাত সহ্য করে কাঙ্খিত উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ শীর্ষক শতবর্ষী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। অব্যাহত থাকবে।

সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply