ইভিএম কেনায় অর্থের টানাটানি: অতিরিক্ত ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হচ্ছে

|

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কেনায় অর্থ বরাদ্দ নিয়ে টানাটানি চলছে। একের পর এক বরাদ্দের চাহিদা দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন।

কিন্তু চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ দেয়ার সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছে পরিকল্পনা কমিশন। এ পরিপ্রেক্ষিতে বিশাল চাহিদার বিপরীতে বিশেষ প্রয়োজনে উন্নয়ন সহায়তা খাত থেকে ১১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।

কিন্তু এর পরও আবার নতুন করে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে ৪০০ কোটি টাকা। বিশেষ প্রয়োজনের উন্নয়ন সহায়তা খাতেও টাকা নেই। এ অবস্থায় ৪০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ দিতে অর্থ বিভাগের সচিবকে চিঠি দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগ। ১১ ডিসেম্বর পাঠানো চিঠিতে নির্বাচন কমিশনের চাহিদামতো ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা বিভাগের সচিব মো. জিয়াউল ইসলাম বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, নির্বাচন কমিশনের চাহিদামতো বরাদ্দ নিশ্চিত করতে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। এখনও বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বরাদ্দ দিতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।

অর্থ বিভাগের পাঠানো চিঠিতে পরিকল্পনা কমিশন বলেছে, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের বাস্তবায়নাধীন নির্বাচন ব্যবস্থায় তথ্যপ্রযুক্তি প্রয়োগের লক্ষ্যে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার শীর্ষক বিনিয়োগ প্রকল্পের অনুকূলে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়। ইতিমধ্যেই বিশেষ প্রয়োজনে উন্নয়ন সহায়তা খাত থেকে সরকারি তহবিলের ১১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। পরবর্তীকালে ওই প্রকল্পের অনুকূলে চলতি এডিপিতে বরাদ্দের অতিরিক্ত হিসেবে ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রয়োজন বলে দ্বিতীয় একটি চিঠির মাধ্যমে অনুরোধ জানানো হয়েছে। এই অর্থ বিশেষ প্রয়োজনের উন্নয়ন সহায়তা খাতে রক্ষিত অর্থ থেকে সংকুলান করা সম্ভব নয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে চলতি অর্থবছরে এডিপির বিশেষ প্রয়োজনে উন্নয়ন সহায়তা খাতে সরকারি অংশে রক্ষিত অর্থের অতিরিক্ত হিসেবে ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিতে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা যুগান্তরকে জানিয়েছেন, নির্বাচন কমিশন থেকে ৮৪ হাজার ইভিএম কেনার জন্য মোটা অঙ্কের এ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে সীমিত আকারে ইভিএম ব্যবহারের চিন্তা থাকলেও একই বরাদ্দ চাহিদায় অনড় থাকে নির্বাচন কমিশন। এডিপির আওতায় একবারে এত টাকা দেয়া কোনোভাবেই সম্ভব হচ্ছিল না। ফলে অবস্থান থেকে সরে এসে কম বরাদ্দ চায় নির্বাচন কমিশন। কিন্তু এখন আবার নতুন করে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, ১৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পায় ‘নির্বাচন ব্যবস্থায় তথ্যপ্রযুক্তি প্রয়োগের লক্ষ্যে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার’ নামের প্রকল্পটি। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা। প্রকল্পের আওতায় দেড় লাখ ইভিএম মেশিন কেনার কথা। চলতি বছর শুরু হয়ে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারিত রয়েছে। কিন্তু জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রকল্প পাসের পর থেকেই এককালীন ১ হাজার ৯৯৮ কোটি ৯ লাখ ৩০ হাজার টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয় পরিকল্পনা কমিশনের কাছে। এককালীন এত টাকা বরাদ্দের সুযোগ নেই বলে জানিয়ে দেয় পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগ। এরপরও বরাদ্দের চেষ্টা অব্যাহত রাখে নির্বাচন কমিশন। ২০ নভেম্বর পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্যের কাছে একটি চিঠি পাঠানো হয় নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে। সেখানে ১ হাজার ৯৯৮ কোটি ৯ লাখ ৩০ হাজার টাকাই বরাদ্দ দিতে বিকল্প প্রস্তাব দেয়া হয়। এতে বলা হয়, বিভিন্ন পর্যায়ে নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের লক্ষ্যে ইভিএম সংগ্রহ এবং আনুষঙ্গিক ব্যয় নির্বাহের জন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিভুক্ত (এডিপি) ‘কম বাস্তবায়ন অগ্রগতিসম্পন্ন’ প্রকল্প থেকে পুনঃউপযোজনের মাধ্যমে এ প্রকল্পের অনুকূলে চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পর্যায়ক্রমে এই টাকা বরাদ্দ প্রয়োজন। কিন্তু এটিও সম্ভব না হওয়ায় সম্প্রতি প্রকল্পটির বাস্তবায়ন শুরুর জন্য হলেও ১৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে অনুরোধ করে নির্বাচন কমিশন। এ পরিপ্রেক্ষিতে এডিপির আওতায় পরিকল্পনামন্ত্রীর জন্য বরাদ্দ রাখা থোক থেকে ২৬ নভেম্বর ১১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। এর কয়েকদিন যেতে না যেতেই আবার নতুন করে ৪০০ কোটি টাকা চেয়ে অনুরোধ করে নির্বাচন কমিশন।

(সূত্র: যুগান্তর)


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply