মুসলিম ও অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অস্ট্রিয়ার কার্জের ‘যুদ্ধ’

|

অস্ট্রিয়ার নির্বাচনে জয় পেয়েছে পিপলস পার্টি। দলটি বিদায়ী সরকারেও অংশিদার ছিল। পিপলস পার্টির প্রধান সেবাস্তিয়ান কার্জ ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী। নির্বাচনে জয়ের মাধ্যমে কার্জ আভির্ভূত হয়েছেন বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে কম বয়সী রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে। মাত্র ৩১ বছর বয়সে তিনি হতে যাচ্ছেন অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর।

অস্ট্রিয়ার এবারের নির্বাচনী প্রচারণা ছিল একেবারে নজরবিহীন। মূলত একটা ইস্যু নিয়েই ঘুরপাক খেয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। তা হলো মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার শরণার্থীদের মোকাবেলা। প্রতিটি দলের মেনিফেস্টোর ছিলো চারটি ভিত্তি- অভিবাসন, শরণার্থী, ইসলামীকরণ ও সীমান্ত নিরাপত্তা। সব শব্দ মিলিয়ে ইস্যু ওই একটিই। কট্টর ডানপন্থীরা কয়েক বছর ধরে প্রচারণা চালিয়ে আসছে, অভিবাসী মুসলিমের ঢলে ইউরোপের ইসলামীকরণ হয়ে যাচ্ছে! অস্ট্রিয়া এর মধ্যে বেশি ‘হুমকি’তে আছে। তাই সীমান্তের নিরাপত্তা জোরদার করে মুসলিম অভিবাসী ও শরণার্থীদেরকে প্রতিহত করতে হবে। এই প্রচারণা ভোটারদের মধ্যে প্রভাব ফেলেছে।

মুসলিম অভিবাসী ও শরণার্থী নিয়ন্ত্রণে কে কী করবেন তার প্রতিশ্রুতিই ছিল নির্বাচনে জয়ের মূলমন্ত্র। কে কত কঠোরভাবে চারটি সমস্যা মোকাবেলা করবেন তা নিয়ে প্রতিযোগিতায় নামে দলগুলো। তাতে জয় হয়েছে সেবাস্তিয়ান কার্জের দলের।

তো জেনে নেয়া যাক কার্জ অভিবাসন, ইসলামীকরণ, শরণার্থী ও সীমান্ত নিরাপত্তা- এসব সমস্যা সমাধানে কী এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যা অন্যান্য দলের চেয়ে ভোটারদের কাছে তাকে প্রিয় করে তুলেছে?

ইসরায়েলি পত্রিকা হারেজ এক প্রতিবেদনে জানাচ্ছে, ডানপন্থী সংবাদমাধ্যম ওচেনব্লিক’কে দেয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে কার্জ ক্ষমতায় এলে কী করবেন তার একটা ধারণা দেন। “৩০/৪০ বছর আগে অনিয়ন্ত্রিত অভিবাসন নীতি গ্রহণের মাধ্যমে আমরা যে ভুল করেছিলাম তার ফল এখন ভোগ করছি। চ্যান্সেলর হলে ‘প্যারালাল কমিউনিটি’ ও ‘রাজনৈতিক ইসলাম’ এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলবে।” প্যারালাল কমিউনিটি’ পরিভাষাটি কার্জের নিজের উদ্ভাবিত, যার দ্বারা তিনি অস্ট্রিয়ার মুসলিমদেরকে বুঝিয়ে থাকেন।”

অভিবাসীদের বিরুদ্ধে নিজের অবস্থান জানান দিতে নির্বাচনের ২৪ ঘন্টা আগ পর্যন্ত ‘স্টপ ইলিগ্যাল ইমিগ্রেশন’ ক্যাম্পেইনে যেখানে সুযোগ পেয়েছেন অংশ নিয়েছেন।

শুধু নির্বাচন কেন্দ্র করে নয়, অতীতে বিভিন্ন সময়ও মুসলিমবিদ্বেষী অবস্থান নিয়েছিলেন কার্জ। ২০১৫ সালে অস্ট্রিয়াতে মুসলিমদের পরিচালিত কিন্ডারগার্টেন স্কুল বন্ধের আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি। বোরকার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের চলমান চেষ্টা ও মসজিদের জন্য বিদেশি সহায়তা গ্রহণ বন্ধে আইন প্রনয়নের পেছনেও হবু চ্যান্সেলর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

জনগণের বড় অংশের মধ্যে বিরাজমান মুসলিম-অভিবাসী বিদ্বেষকে কাজে লাগানোর পাশাপাশি তারুণ্য আর ক্যারিশম্যাটিক ব্যক্তিত্বে ভোটারদের মুগ্ধ করেছেন কার্জ। ব্যক্তিগত আরামের চেয়ে জনগণের সুবিধার প্রতি খেয়াল রাখার দুয়েকটি নজির তার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে। গত চার বছর পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাবস্থায় নিজে ও তার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরের সময় বিমানে বিজনেস ক্লাস সিটে ভ্রমণ না করে ইকোনোমি ক্লাসে ভ্রমণ করাতেন কার্জ।

/কিউএস


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply