নাগেশ্বরীতে আশ্রয়ণ প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ

|

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত আশ্রয়ন প্রকল্প-২ এ ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তালিকায় অস্বচ্ছল ব্যক্তিদের পরিবর্তে স্বচ্ছল ব্যক্তিদের নাম অন্তর্ভূক্তিকরণ। ঘর নির্মাণে নিম্ন মানের সামগ্রী, দ্বায় সারাভাবে ঘর নির্মাণসহ সুবিধাভোগিদের কাছ থেকে পরিবহন খরচ নেবার অভিযোগ উপজেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে।

ঘর প্রাপ্ত সুুুবিধাভোগীদের অভিযোগ ঘর নির্মাণে মানা হয়নি সরকারের বেঁধে দেয়া নিয়ম। নিম্ন মানের সামগ্রী দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে প্রতিটি ঘর। প্রকল্পের স্টিমেটে ঘরের খুুঁটি দৈর্ঘ্য ১২ফিট এবং বারান্দার খুটি ১০ফিট থাকলেও দেয়া হয়েছে ১০ ফিট। খুটির প্রস্থ পরিমাপ ৪বর্গ ইঞ্চি হওয়ার কথা থাকলেও দেয়া হয়েছে অনেক কম। রডের পরিমাণেও রয়েছে গড়মিল। খুটিতে দেয়া হয়েছে ১ সুতি রড। ঘর ও লেট্রিন নির্মাণে ২১টি খুটির পরিবর্তে দেয়া হয়েছে ১৯টি খুটি। কাঠ এবং মেঝের মানেও রয়েছে ঘাপলা। প্রথম শ্রেণির ইট দিয়ে ভিটি দেয়াল ৮ ইঞ্চি করার কথা থাকলেও করা হয়েছে ৪ থেকে ৫ ইঞ্চি। ব্যবহার করা হয়েছে তৃতীয় শ্রেণির ইট। মেঝের খোয়াতেও একই ধরনের ইট ব্যবহার করা হয়েছে। মেঝে পাকাকরণের কাজে বালু এবং পলিথিন কিনে দিতে হয়েছে সুবিধা ভোগিদের। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও এখনো শেষ হয়নি ঘর নির্মাণের কাজ। কয়েক ইউনিয়নে এখনো সম্পন্ন হয়নি কাজ।

কেদার ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের সুবলপাড় গ্রামের ঘর পাওয়া দুলালী জানান, ঘর নির্মাণের যাবতীয় উপকরণ পরিবহণ, পলিথিন, বালু, ধর্ণার বাশ সে কিনে দিয়েছে। এতে তার ৪ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। একই অভিযোগ রয়েছে কচাকাটা ইউনিয়নের তরিরহাট এলাকার রওশনারা, বল্লভের খাষ ইউনিয়নের দামাল গ্রামের বাসিন্দা আমির আলীরও। হাসনাবাদ ইউনিয়নের সুবিধা ভোগি হালিমা বেগমের স্বামী কলিমুদ্দিন জানান, উল্লেখিত খরচের পাশাপাশি তাকে দুই বস্তা সিমেন্টও কিনে দিতে হয়েছে ঠিকাদারকে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মনোনিত ঠিকাদার আকতার হোসেন জানান, ১ লাখ টাকা বরাদ্দের ঘরের কাজের মধ্যে কাঠ, বালু, ইট,পলিথিন,নির্মাণ ব্যয় এবং ল্যাট্রিন বাবদ ৩৩ হাজার ৭০০ টাকা কন্ট্রাক নিয়েছি। টিন, খুটি এবং পরিবহনের বিষয় ইউএনও জানেন।

এদিকে অজানা কারণে তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হয়েছে স্বচ্ছল ব্যক্তি, চেয়াম্যান ও মেম্বারদের স্বজন। তালিকা থেকে বাদ পড়েছে গরীবরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে কেদার ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা দিনমজুর মজিবর রহমান। স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে ৭ সদস্যের সংসার। থাকার মতো ৭ শতক জমিতে একটি জীর্ণ কুটির। পুরাতন টিনের ফুটো দিয়ে পড়ে বৃষ্টির পানিও। মজিবর রহমানের অভিযোগ, চেয়ারম্যান মেম্বারদের পিছে ঘুরেও মেলেনি একটি ঘর। ঘর দেয়ার কথা বলে ইউপি সদস্য তার জাতীয় পরিচয় পত্র নিয়েছেন, এখন সেটাও খোয়া গেছে।

একই অবস্থা কচাকাটা ইউনিয়নের দক্ষিণ সরকারটারী গ্রামের ফজিরন বেওয়ার। তিনবছর আগে থাকার অনুপযোগী হয়ে পড়ে তার ঘর। অথচ তার পাশেই মেম্বারের স্বচ্ছল জামাতা রকুনুজ্জামান রোকন পেয়েছেন সরকারের ঘর। অনুমোদিত তালিকায় রয়েছে ব্যাপক গড়মিল। এক ইউনিয়নে নাম থাকলেও ঘর গেছে অন্য ইউনিয়নে। আমির আলী, সাহেরা বানু, অক্কর আলীর নাম কচাকাটা ইউনিয়নে থাকলেও তা গেছে বল্লভের খাষ ইউনিয়নে।

এ প্রসঙ্গে বল্লভের খাষ ইউনিয়নের ইউপি সদস্য সাইফুর রহমান জানান, তালিকায় আমাদের কোন হাত নেই, আমরা তহসিলদারদের ভাগ থেকে দু একটা নাম নিয়েছি।

রায়গঞ্জ ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশী অনিয়ম হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু হেল বাকী মাসুম। তিনি বলেন, এ প্রকল্পে আমরা সদস্য থাকলেও কোন কিছু আমরা জানিনা। সব কিছুই করেছেন প্রকল্প সভাপতি ইউএনও। তালিকা প্রস্তুতে অনিয়মসহ নির্মাণে রয়েছে অনিয়ম। তিনি আরো বলেন, একটি ঘর নির্মাণে সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

প্রকল্পের অনিয়মের বিষয়টি স্বীকার করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শঙ্কর কুমার রায়। তিনি জানান, উপকরণের দাম বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন দিক ম্যানেজ করে চলতেই কিছুটা অনিয়ম হয়েছে।

২০১৭-১৮ অর্থ বছরে এ উপজেলায় ৬৫১টি ঘরের বিপরীতে ৬ কোটি ৫১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রতিটি ঘরের জন্য ব্যয় ধরা হয় ১ লাখ টাকা। ঘর নির্মাণ শেষে বাড়তি টাকা সুবিধাভোগীদের ফেরত দেয়ার নিয়ম থাকলেও এখন পর্যন্ত কেউ পায়নি এ টাকা।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply