দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন আমাদের দেশে হয় না: সেলিম

|

বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেছেন, দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আমাদের দেশে হয় না। জনগনের এই অনুধাবনকে আমলে নিয়ে নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটা নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করে এবং পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে নির্বাচন করা উচিত।

যমুনা টেলিভিশনে টকশো ‘রাজনীতি’ এর আজকের পর্বে হাজির হয়ে সেলিম এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, আমাদের সংবিধানে বলা আছে প্রজাতন্ত্রের মালিক হলো জনগণ। আর জনগণের মালিকানা প্রতিষ্ঠিত করতে হলে তাদের প্রতিনিধিত্বশীল গণতন্ত্রের মাধ্যমে করতে হয়। জনগণ যদি তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করার সুযোগ না পায়, তাহলে গণতন্ত্রের মূলেই কুঠারঘাত করা হয়। গণতন্ত্রের আর কোনো ভিত্তি আর তখন থাকে না। সুতরাং আমাদের অন্যতম একটা প্রধান কাজ হলো একটা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে অনুষ্ঠিত হতে পারে তার পরিবেশ তৈরি করা। কিন্তু সেই পরিবেশ বর্তমানে নেই।

তিনি আরও বলেন, দেশবাসীর অভিজ্ঞতা হলো একটি দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আমাদের দেশে হয় না। জনগনের এই অনুধাবনকে আমলে নিয়ে নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটা নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করে এবং পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে নির্বাচন করা উচিত। এছাড়া নির্বাচন কমিশনও পুনর্গঠনও করা দরকার। অনেকে বলেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। কিন্তু সংবিধান সংশোধনের কথা তো সংবিধানেই আছে। ৯১ সালে এরশাদের পতনের পর ১২ ঘণ্টার মধ্যে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দীন সাহেব প্রেসিডেন্ট হবেন, এবং সবাই একমত হলেন। ফলে সংবিধান সংশোধনের সময় নেই এ কথা ঠিক না।

৭১ এর স্বাধীনতাবিরোধীদের দল জামায়াতে ইসলামীকে রাজনীতিতে নিষিদ্ধ করার প্রসঙ্গে সেলিম বলেন, ১৯৭১ সালের পর থেকে বাংলাদেশে জামায়াতের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই। স্বাধীনতার পর প্রতিটি সরকার জামায়াতকে রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছে। বিএনপি জামায়াতকে পুনর্বাসন করেছে আর আওয়ামী লীগ দলটিকে জিইয়ে রেখেছে।

টকশো-তে আলোচক হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নূহ-উল আলম লেনিন, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এবং বেসরকারি টিভি চ্যানেল ডিবিসির সম্পাদক জাহেদুল আহসান পিন্ট।

জামায়াত নিষিদ্ধ প্রসঙ্গে নূহ-উল আলম লেলিন বলেন, সংবিধান জামায়াতকে রাজনীতি করার অধিকার দেয়নি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায় এসে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করেছেন। শুধু আওয়ামী লীগই জামায়াত ইস্যুতে কাজ করেছে অন্যান্য সব দল শুধু বক্তৃতা দিয়েছে।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন নিয়ে এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, দলীয় অবস্থান থেকে প্রধানমন্ত্রী ঐক্যফ্রন্টকে স্বাগত জানিয়েছেন। কিন্তু তাদের কার্যক্রম নীতি বিবর্জিত। তারা দুর্নীতির দায়ে দণ্ডিত খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সাথে জোট করেছে, যারা ২১ আগস্টে গ্রেনেড মেরে শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে চেয়েছিল।

লেনিন দাবি করেন, বিরোধীদলের প্রতি প্রতিহিংসার কারণে নয়, বরং পুলিশ তাদের দোষের কারণেই মামলা দিয়েছে। রাজনীতিতে অসহিষ্ণুতা চর্চার নিয়ে তিনি বলেন, কোনো দলই অসহিষ্ণুতার রাজনীতির বাইরে যেতে পারেনি। আমাদের দেশে এমন রাজনীতির প্রসার ঘটেছে বিএনপি সরকারের সময়। তারা আহসানউল্লাহ মাস্টার, সাবেক অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া সরকার, সংসদ সদস্য মমতাজউদ্দিনকে হত্যা করেছে।

বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী বলেন, সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচনের স্বার্থেই নির্বাচনকালীন সরকার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সংবিধানে না থাকলেও জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন নিশ্চিত করতে এটা কঠিন কোনো বিষয় না। এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে সরকার গায়েবী মামলা দিয়ে বিরোধীদের দমিয়ে রাখতে চাচ্ছে। এর মাধ্যমেই প্রমাণ মেলে যে সরকার সুষ্ঠু নির্বাচন চায় না।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। ভোট চুরি হয়েছে। আমরা দেখেছি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীরা নমিনেশন পর্যন্ত জমা দিতে পারেনি। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ক্ষমতাসীনদের অনেকে জনপ্রতিনিধি হয়েছেন।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply