বিনে পয়সায় ২০ বছর ধরে ট্রাফিক সেবায় আজাহার আলী

|

আজহার আলী। স্থানীয়দের কাছে পরিচিত ট্রাফিক আজহার নামে। ১২ বছর ধরে পুলিশের পুরনো রংচটা পোশাক পড়ে নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কের মান্দা ফেরীঘাটের চৌরাস্তায় ট্রাফিক সেবা দেন। এর আগে, পাশের মহাদেবপুর ব্রীজের মোড়ে ৮ বছর ট্রাফিক সেবা দিয়েছেন।

দেখলে পুলিশ সদস্য মনে হতে পারে কিন্তু আজাহার আলী কেবলই একজন স্বেচ্ছাসেবী ট্রাফিক। সড়কের মাঝখানে দাঁড়িয়ে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ ও নির্বিঘ্নে যান চলচলে সহযোগিতা করার কাজ করেন। হুইসেল বাজিয়ে শিক্ষার্থী, নবীন-প্রবীণ সব বয়সের পথচারীকে সড়ক পারাপারে সহযোগিতা করেন। রোদ, বৃষ্টি ঝড় মাথায় নিয়ে পুরোদস্তুর ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন তিনি। পোশাকের সঙ্গে সঙ্গে ব্যবহৃত টুপি-বাঁশিও পুরোনো। তাতে আক্ষেপ নেই দরিদ্র আজাহারের। কারণ তার লক্ষ্য- সড়ক চলাচল নিরাপদ করা।

জানতে চাইলে আজাহার আলী বলেন- ২০ বছর আগে মহাদেবপুর ব্রীজের পাশে একটি মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা দেখেছিলেন। ওই ঘটনায় হতাহতাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। আহতদের হাসপাতালে নেয়ার কাজটি করেছিলেন। নিহতের মৃতদেহ পাহারা দিয়েছেন। এরপরই আর ঠিক থাকতে পারেননি। ঘটনার পর দিন থেকেই সেখানে আনসারের পোশাক পড়ে নিজের কাঁধে তুলে নেন ট্রাফিকের দায়িত্ব।

এর আগে করতেন দিন মজুরের কাজ। কিছু দিন ঢাকা শহরে রিকশা চালিয়েছেন। সেখানে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালনের কৌশল শিখেছেন জানান তিনি। হত দরিদ্র আজাহার আলীর বাড়ি নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার লক্ষীরামপুর গ্রামে।

প্রায় ১২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে সেখান থেকে তিনি প্রতিদিন সেবা দিতে ফেরীঘাটে আসেন। ভ্যান-রিকশা কিম্বা অটোতে আসা যাওয়া করেন। পকেটে পয়সা না থাকলে কখনও কখনও পায়ে হেঁটেই চলতে হয়।

স্থানীয়রা জানান, ব্যস্ততম ফেরীঘাট চৌরাস্তায় একজন ট্রাফিক নিয়োগের দাবি অনেক দিনের। আজাহার স্বেচ্ছাশ্রমে সেটি পূর্ণ করেছে। ফলে দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছেন পথচারী। একইসাথে যানবাহন চলাচলে নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা বজায় থাকছে। এর বিনিময়ে তিনি সহযোগিতার জন্য কারো কাছে হাতও পাতেন না। তবে কেউ কেউ ৫/১০ টাকা করে বকশিস দিয়ে থাকেন। এতেই আজাহার মহা খুশি।

আজাহারের বয়স প্রায় ষাট বছর। পরিবারে রয়েছে স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়ে, ছেলের বউ ও দুই নাতি-নাতনি। মাটির ছোট্ট দুটি ঘরে খুব কষ্টে থাকতে হয় তাদের। ঘরে মধ্যেই ছাগল রেখে এক পাশে রাতে ঘুমাতে হয় জানান আজাহারের স্ত্রী শেফালী খাতুন। ছেলে আশরাফুল মাছ ধরে সংসার খরচে যোগান দেন।

কিন্তু বছরের অধিকাংশ সময়েই মানবেতর জীবন কাটাতে হয় জানান ছেলের বউ সায়মা। শেষ জীবনে ভাল কাজের স্বীকৃতি আর তাকে একটি কর্মসংস্থানের সুযোগ দেয়ার আবেদন জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও আজাহারের পরিবারের সদস্যরা।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply