পাকিস্তানের আত্মসমর্পণ, ফাইনালে বাংলাদেশ

|

সাধে কী আর বলে, ক্রিকেট রং বদলের খেলা? আবুধাবিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের অঘোষিত সেমিফাইনালের কথাই ধরুন না; টপ অর্ডারের ব্যর্থতায় ব্যাটিং বিপর্যয়, সেখান থেকে মিঠুন-মুশফিকের দুর্দান্ত জুটিতে খেলায় ফিরে আসা, সেঞ্চুরি থেকে ১ রান দূরত্বে মুশফিকের আকস্মিক বিদায়, ২৬০ রান যখন অবশ্যম্ভাবী মনে হচ্ছিল তখন হঠাৎই ২৩৯ রানে গুটিয়ে যাওয়া। বাংলাদেশের ব্যাটিং শেষে শঙ্কা ছিল এই ২০ রান কম হওয়ার আফসোসে পুড়তে হয় কিনা, এদিকে আবার দলের সেরা অলরাউন্ডার, বোলিংয়ের অন্যতম সেরা অস্ত্র সাকিব আল হাসান যে নেই। অথচ, একজন নিয়মিত বোলার কম নিয়েই কী দারুণ জয় তুলে নিলো টাইগাররা। আর বারবার ম্যাচে ফিরে আসার চেষ্টা করা পাকিস্তান শেষ পর্যন্ত অসহায় আত্মসমর্পণ করলো।

৩৭ রানের দারুণ এক জয় তুলে নিয়ে ফাইনালে ভারতের প্রতিপক্ষ হিসেবে নাম লেখালো টাইগাররা। এই জয়ের সবচেয়ে বড় দিক দলের অন্যতম সেরা দুই খেলোয়াড় ছাড়াই জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ। সাকিবের শূন্যতা পূরণ করা সহজ ছিল না। কিন্তু, মাহমুদুল্লাহ-সৌম্যরা দারুণ বোলিং করে তা ভালোভাবেই পূরণ করেছেন। ১০ ওভার বোলিং করে মাত্র ৩৮ রানে দিয়ে ক্রমশ ভয়ংকর হয়ে ওঠা ইমামকে (৮৩) ফিরিয়েছেন তিনি। অন্যদিকে, ৫ ওভারে মাত্র ১৯ রান দিয়ে শাদাবের উইকেটটি নিয়েছেন সৌম্য সরকার। অবশ্য, ৪৩ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা বোলার কাটার মাস্টার মোস্তাফিজ। আর ১০ ওভারে মাত্র ২৮ রানে ২ উইকেট নিয়ে দলের জয়ে বড় ভূমিকা রেখেছেন মিরাজ।

পাকিস্তানের উইকেট পতনের শুরুটাও করেছিলেন মিরাজ। ইনিংসের পঞ্চম বলেই ফখর জামানকে রুবেলের ক্যাচ বানান। অবশ্য, মিডঅনে রুবেল যেভাবে ক্যাচটা ধরেছেন, ফখরকে মিরাজের উইকেট বানিয়েছেন রুবেল বলা চলে। পরের ওভারে বাবর আজমকে এলবিডব্লিউ’র ফাঁদে ফেলেন মোস্তাফিজ। চতুর্থ ওভারে আবারও মোস্তাফিজের আঘাত। এবার পাকিস্তানের অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদকে মুশফিকের হাতে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন। ১৮ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে পাকিস্তান যখন ধুঁকছে তখন ৬৭ রানের জুটি গড়ে ভয়ই দেখাচ্ছিলেন ইমাম ও শোয়েব মালিক।

জুটি ভাঙলেন রুবেল। তিনি যেমন ক্যাচ ধরেছিলেন তার প্রতিদান দিলেন মাশরাফী। রুবেলের বলে মিড উইকেটে বাঘের ক্ষিপ্রতায় ঝাঁপিয়ে পড়ে এশিয়া কাপে দারুণ ছন্দে থাকা শোয়েব (৩০) মালিককে ফেরালেন।

তবু গলার কাঁটা হয়ে ছিলেন ইমাম-উল হক। ষষ্ঠ উইকেটে আসিফ আলীকে সঙ্গে নিয়ে ৭১ রানের জুটি গড়েন ইমাম। আসিফ ব্যক্তিগত ২২ রানে মোস্তাফিজের বলে সহজ ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন পেছনে। কিন্তু চোট নিয়ে বেরিয়ে যাওয়া মুশফিকের বদলে কিপিং করা লিটন এক হাতে ক্যাচটি ধরতে অবিশ্বাস্যভাবে মিস করেন!

পরে অবশ্য দুটি দারুণ স্টাম্পিং করে পাপমোচন করেছেন মুশফিকের পরিবর্তে গ্লাভস হাতে পরা লিটন। প্রথমে মিরাজের বলে আসিফকে (৩১), এরপর মাহমুদউল্লাহর বলে ইমামকেও (৮৩) স্ট্যাম্পিং করেন। পাকিস্তানের লেজটা মুড়ি দিতে বেশি সময় নেননি মোস্তাফিজ।

এর আগে, ব্যাটিংয়ের শুরুতেই বিপর্যয়ে পড়ে মাশরাফী বাহিনী। সৌম্য-মুমিনুল-লিটনদের ব্যাটিং ব্যর্থতায় ১২ রানেই নেই ৩ উইকেট! এরপর, আরও একবার মুশফিক-মিঠুনের কার্যকর জুটি। ১৪৪ রানের জুটিতে দু’জনই তুলে নিয়েছেন অর্ধশতক। ম্যাচের ২৬-তম ওভারে ক্যারিয়ারে ৩০-তম অর্ধশতক তুলে নেন মুশফিক। এজন্য খেলেন ৬৮ বল। অন্যদিকে,৩০-তম ওভারের ৪র্থ বলে টুর্নামেন্ট ও ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় অর্ধশতক তুলে নেন মিঠুন। এজন্য, তিনি খেলেছেন ৬৬ বল।

ম্যাচের ৩৪-তম ওভারে ৮৪ বলে ৬০ রান করে হাসান আলীর বলে কট অ্যান্ড বোল্ড হয়ে যান মিঠুন। আর ১০ রান পরই ফিরে যান ইমরুল। এরপর, মুশফিক-মাহমুদুল্লাহর ৩০ রানের জুটিতে ২০০ পেরোয় বাংলাদেশ। ৪২-তম ওভারে সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ১ রানের দূরত্বে থেকে ফিরে যান মুশফিক। এরপর, মিরাজ-মাহমুদুল্লাহ-মাশরাফীরা কেউ দীর্ঘক্ষণ উইকেটে থাকতে না পারায় ২৩৯ রানেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। তবু এটিই শেষ পর্যন্ত জয়ের জন্য যথেষ্ট প্রমাণিত হলো।

এবার ফাইনাল মিশন। ইনজুরি, দল নির্বাচন বিতর্ক, টপ অর্ডারের ব্যর্থতা সব কিছু পাশে রেখেই সেখানে ভারতের বিপক্ষে নামবে বাংলাদেশ। ম্যাচ শেষ মাশরাফী বললেন, সেরা দুই খেলোয়াড় নেই। ভারত বিশ্বের এক নম্বর দল। তবুও ছেড়ে কথা বলবে না বাংলাদেশ। স্বপ্নের এশিয়া কাপ এবার ধরা দেবে কী?

যমুনা অনলাইন: টিএফ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply