‘বাজেটে উপেক্ষিত আইটি খাত’, শঙ্কায় স্মার্ট বাংলাদেশ কার্যক্রম

|

মাসুদুজ্জামান রবিন:

স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার কার্যক্রম হোঁচট খেতে পারে, এমন আশঙ্কা জানিয়েছে তথ্য প্রযুক্তি খাতের ৫টি সংগঠন। কর কাঠামো নিয়ে অসন্তুষ্টি বাড়ছে। নেতাদের অভিযোগ হচ্ছে, এই খাত উপেক্ষিত হওয়ায় তা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্সের নির্দেশনাও আমলে নেয়া হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন তারা। পরিস্থিতির উত্তরণে অর্থমন্ত্রী ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন উদ্যোক্তারা।

প্রস্তাবিত বাজেটে সফটওয়্যার উৎপাদন এবং কাস্টমাইজেশন সেবার উপর ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। অল্প কিছু সফটওয়্যার আমদানিতে ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক বহাল রাখা হলেও অধিকাংশ সফটওয়্যারের বিপরীতে ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক বহাল রাখা হয়েছে। প্রযুক্তিবিদরা বলছেন, অপারেটিং সিস্টেম, ডেটাবেইজ, ডেভেলপমেন্ট টুলস ও সিকিউরিটি সফটওয়্যার দেশে তৈরির সক্ষমতা এখনও তৈরি হয়নি। তাই এসব সফটওয়্যারের উপর কর আরোপের ফলে প্রান্তিক ব্যবহারকারীদের অতিরিক্ত খরচ গুনতে হবে; যা সফটওয়্যারের ব্যবহারকে নিরুৎসাহিত হবে।

প্রযুক্তিবিদ এম এ হাকিম বলেন, লোকাল সফটওয়্যারে আগে ভ্যাটের কোনো অংশ ছিল না। এবার নতুন করে ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করেছে। তাহলে আমরা কি দেশের বাইরের সফটওয়্যারের উপর নির্ভর করবো? সেক্ষেত্রে আমাদের স্থানীয় উদ্যোক্তা ও ডেভেলপাররা নিরুৎসাহিত হবে।

এদিকে, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রধান স্তম্ভ দ্রতগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা। তৃণমূল পর্যন্ত সবার দোরগোড়ায় এই সেবা নিয়ে যাওয়ার কাজটি করে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি)। এ খাতকে আরও গতিশীল করতে আইএসপিকে আইটিইএস সেবার অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা নেয় সরকার। এ লক্ষ্যে নভেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন ‘স্মার্ট টাস্কফোর্সের’ সভায় আইএসপি’র কার্যক্রমকে আইটিইএস’র অন্তর্ভুক্ত করার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে নির্দেশনাও দেয়া হয়। অথচ প্রস্তাবিত বাজেটে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।

আইএসপিএবি সভাপতি ইমদাদুল হক বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি, মুখ্য সচিবকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। তারা সেটা মিনিটস আকারে নিয়েও এসেছেন। এনবিআরকে বলা হয়েছে সেটা বাস্তবায়নের জন্য। কিন্তু, প্রকারান্তরে যখন আমরা বাজেট পেলাম, তার কোনোকিছুই আমরা পাইনি। আইটিএসের সংজ্ঞার মধ্যে আমাকে ফেললে বছর শেষে আমাকে যে করটা দিতে হচ্ছে, তা আর দিতে হবে না। সেই টাকাটা ব্যবসা সম্প্রসারণের কাজে ব্যয় করা যেতো।

এ অবস্থায় হতাশা প্রকাশ করেছেন সফটওয়্যার ও ই-কমার্স উদ্যোক্তা, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার ও ব্যবহারকারীরা। তারা বলছেন, আগামী দিনের জন্যে কর কাঠামো পরিবর্তন করতে হবে। তা না হলে ব্যবসার খরচ বাড়বে। ব্যবহারকারীদের গুনতে হবে বাড়তি সেবার মাশুল। ক্ষতিগ্রস্থ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার কার্যক্রম।

আইএসপিএবি সভাপতি ইমদাদুল হক বলেন, অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, অনেক কোম্পানি বছর শেষে ১০ শতাংশ লাভও করতে পারে না। আগাম কর দিয়ে ফেললে বাস্তবিক অর্থেই সেটা রিটার্ন পাওয়ার সুযোগ থাকে না। তার মানে এই কোম্পানিগুলো লোকসানেই চলবে।

প্রযুক্তিবিদ এম এ হাকিম বলেন, কানেক্টিভিটি নিশ্চিত করতে গেলে বাকি উপাদানগুলোর উপর ভ্যাট, ট্যাক্স কমিয়ে আনতে হবে। সফটওয়্যার তৈরি করা হলো, ইমপ্লিমেন্টেশন করলাম, ব্যবহারকারীদের দোরগোড়ায় যদি পৌঁছাতে না পারি তাহলে স্মার্ট বাংলাদেশ কীভাবে গড়বো?

প্রযুক্তিবিদরা বলছেন, দেশে নতুন করে ল্যাপটপ উৎপাদনের কোনো উদ্যোগ নেই। অন্যদিকে, ডলারের দাম ২২ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ল্যাপটপ, কম্পিউটার, প্রিন্টার, টোনার কার্টিজ আমদানিতে ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর আরোপের প্রস্তাবে প্রযুক্তি পণ্য সংগ্রহ করার দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে।

/এম ই


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply