বাজেটে অনুপস্থিত পুঁজিবাজার, নতুন করারোপ না হওয়া বিশ্লেষকদের মতে ‘মন্দের ভালো’

|

আলমগীর হোসেন:

প্রত্যাশা অনুযায়ী প্রস্তাবিত বাজেটে কিছুই পায়নি পুঁজিবাজার। নতুন কিছু না দিলেও আগের সুবিধা বহাল রাখাকেই অবশ্য ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। যে কারণে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ। তবে পুঁজিবাজার গতিশীল করতে লেনদেনের ওপর থেকে কর কমানোসহ মুনাফায় দ্বৈতকর পরিহার ও কিছু নীতি সহায়তা দেয়ার দাবি উঠেছে। যদিও স্থিতিশীল পুঁজিবাজারের জন্য প্রণোদনার চেয়ে কাঠামোগত সংস্কার জরুরি বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

নতুন অর্থবছরের জন্য প্রায় ৭ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকার বাজেটে ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু এতো বড় বাজেটের কোথাও পুঁজিবাজার নিয়ে কোনো কথা বলেননি তিনি। এতে খানিকটা হতাশ বিনিয়োগকারীরা। তারপরও বিদ্যমান সুবিধা বহাল রাখায় খুশি তারা। বাজেটের পর লেনদেনের পরিমাণ বৃদ্ধির বিষয়টিকেও ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। এই গতিশীলতাকে ধরে রাখতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সক্রিয় করার দাবি তাদের। একজন বিনিয়োগকারীর বক্তব্য, বাজেটে পুঁজিবাজার নিয়ে নেতিবাচক কোনো কিছু বলা হয়নি। এটা আমাদের জন্য ভালো। বাজেটকে তাই পুঁজিবাজার বান্ধব বলতে পারি।

আরেক বিনিয়োগকারী বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ না থাকলে আমরা ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা কখনোই ভালো ফল পাবো না।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজেটে কর কাঠামোয় বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হলেও পুঁজিবাজারে নতুন কোনো শর্ত আরোপ করা হয়নি। এটি বাজারের জন্য সুখবর। মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছায়েদুর রহমান বলেন, কোথায় কী পরিবর্তন হয়, তার কী কী নেতিবাচক প্রভাব পড়ে- এসব নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শঙ্কা কাজ করলে তাতে বাজারে স্বাভাবিকভাবেই একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বাজেট বক্তৃতায় দেখা গেছে, পুঁজিবাজার নিয়ে উল্লেখযোগ্য কোনো বক্তব্য নেই। এর কারণে কোনো নেতিবাচক প্রভাব বাজারে পড়েনি।

ডিএসই’র সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি আহমেদ রশীদ লালী বলেন, একটা ভালো জিনিস যেটা হয়েছে তা হলো, বাজেটে অন্তত পুঁজিবাজারের জন্য অ্যাডিশনাল কোনো ট্যাক্স আরোপিত হয়নি। সেই সাথে, যেগুলো ছিল সেগুলোও তুলে নেয়া হয়নি। আগে যা ছিল এখনও তাই রেখেছে, এটা মন্দের ভালো।

দীর্ঘ মেয়াদে পুঁজিবাজার স্থিতিশীল করতে লেনদেনের ওপর কর কমানোসহ কিছু নীতি সহায়তা দরকার বলেও মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছায়েদুর রহমান বলেন, লভ্যাংশ প্রদান করা হয় করপোরেট ট্যাক্স প্রদানের পড়ে। কিন্তু সেই লভ্যাংশ থেকে যখন বিনিয়োগকারীকে আবার ট্যাক্স দিতে হয় তখন আর সেটি উৎসাহব্যাঞ্জক থাকে না। সেই জায়গাটিকে উৎসাহিত করার জন্য শুধুমাত্র করপোরেট ট্যাক্সের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখে লভ্যাংশের ট্যাক্সকে প্রত্যাহার করা হলে পুঁজিবাজারে গতিশীলতা বাড়বে। দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগকারী বাড়বে।

ডিএসই’র সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি আহমেদ রশীদ লালী বলেন, আমাদের যে সোর্স ট্যাক্স আছে, প্রত্যেক ট্রেডেই যা কাটা হয়, সেটা ৫ পয়সা আছে। যদি সেই ট্যাক্স দেড় পয়সা করে দেয়া হয় তবে অনেক ভালো হবে। আরেকটা কথা বলতে চাই, এসএমই বোর্ডে যারা লিস্টেড হবেন, উনাদের জন্য একটি ‘কনসেশনারি রেট অব ট্যাক্স’ করা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রণোদনার ওপর নির্ভর করে পুঁজিবাজার গতিশীল করা সম্ভব নয়। এজন্য কাঠামোগত সংস্কার দরকার। বিএসইসি’র সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, পুঁজিবাজারে বিভিন্ন সুবিধা দেয়া আছে। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করলে আপনি ইনভেস্টমেন্ট বেনিফিট পান। ক্যাপিটাল গেইনস ব্যক্তির হাতে করমুক্ত। লিস্টেড কোম্পানি হয়, তাদের ৭.৫ শতাংশ কর কম দিতে হয়। এ ধরনের বিভিন্ন সুবিধা দেয়া আছে। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি। কোনো সুবিধা দিয়েই কোনো লাভ হয়নি। তো আর কী সুবিধা চায়?

বিনিয়োগ বৃদ্ধির পাশাপাশি বাজারকে গতিশীল করতে শেয়ারের দাম কমার সর্বনিম্ন সীমা তুলে দেয়ার পরামর্শ এই বিশ্লেষক। একটা বাজেটে পুঁজিবাঁজার সম্পর্কে কিছু থাকতেই হবে, তা ভুল ধারণা।

/এম ই


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply