পিরোজপুরের দুই ওসিকে দায়ী করে চিরকুট লিখে থানার ঝাড়ুদারের বিষপানে আত্মহত্যা

|

পিরোজপুর প্রতিনিধি:

আমি নির্দোষ। আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী ইন্দুরকানী থানার ওসি এনামুল হক আর পিরোজপুর সদর থানার ওসি আবির মো. হোসেন। আমি ইন্দুরকানী থানার ওসির টাকা চুরি করি নাই। আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। আমি মারা যাওয়ার পর আমার লাশ পোস্টমর্টেম করবেন না। লাশটা আমার মামার বাড়ি দাফন করবেন।

এভাবেই পিরোজপুরের দুই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে দায়ী করে চিরকুট লিখে তাতে স্বাক্ষর করে বিষপানে আত্মহত্যা করেছে পিরোজপুর সদর থানার এক ঝাড়ুদার। সোমবার (৫ জুন) সকালে বিষপানের পর রাতে ঢাকা নেয়ার পথে মারা যায় আল মামুন (৪০) নামের ওই ঝাড়ুদার। তার লেখা ওই চিরকুট দেখা গেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে।

মামুন ইন্দুরকানী উপজেলার গাবগাছিয়া গ্রামের আবুল কালাম এর ছেলে। প্রায় ১০ বছর ইন্দুরকানী থানায় চাকরি করার পর প্রায় দুই মাস আগে ইন্দুরকানী থেকে পিরোজপুর সদর থানায় বদলী করা হয় মামুনকে।

মামুনের স্ত্রী মরিয়ম বেগম জানান, তার স্বামী পিরোজপুর সদর থানায় কাজ শেষ করে বাড়িতে ফিরে যেত। রোববার বিকেলে বাড়িতে ফেরার পর তাকে খুবই বিমর্ষ দেখাচ্ছিল। এরপর তাকে অনেকবার জিজ্ঞাসা করার পর মামুন তাকে জানায়, মসজিদ থেকে একটি জায়নামাজ চুরির অভিযোগে পিরোজপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবির মোহাম্মদ হোসেন তাকে গালমন্দ করার পাশাপাশি শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছে।

এ ঘটনায় মামুন কোনো অঘটন ঘটাতে পারে এই আশঙ্কায় পরিবারের সদস্যরা তাকে দেখে রেখেছিল। তবে সকালে বাজারে গিয়ে আগাছা নিধনের ওষুধ কিনে তা পান করে মামুন। এরপর বাড়িতে এসে স্ত্রীকে জানালে, তারা দ্রুত তাকে ইন্দুরকানী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখান থেকে তাকে পিরোজপুর জেলা হাসপাতালে এবং পরবর্তীতে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে। সেখানে মামুনের শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায়, দ্রুত তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে রওনা হয় পরিবারের সদস্যরা। এরপর পথিমধ্যেই সন্ধ্যা ৭টার দিকে মামুনের মৃত্যু হয়। বর্তমানে মামুনের মৃতদেহ ঢাকায় আছে। মঙ্গলবার সকালে পোস্টমর্টেম শেষে বাড়িতে নেয়া হবে।

মামুনের স্ত্রী’র অভিযোগ ইন্দুরকানী থানায় থাকাকালীন ওই থানার ওসি এনামুল হক তার স্বামীর ওপর বিভিন্নভাবে নির্যাতন করত। মরিয়ম অভিযোগ করেন, তার স্বামী পিরোজপুর সদর থানায় যাওয়ার পর ইন্দুরকানী থানার ওসি ওই থানার ওসির কাছে তার স্বামী সম্পর্কে আজেবাজে কথা বলেছে যাতে সেখানেও তার স্বামী নির্যাতিত হয়।

এ বিষয়ে পিরোজপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবির মোহাম্মদ হোসেন জানান, থানায় চুরির কোনো ঘটনা ঘটেনি। এছাড়া মামুনের সাথে গালমন্দ কিংবা মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি। ঘটনাটি ইন্দুরকানী থানায় ঘটেছে। তাই এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানান তিনি।

অন্যদিকে ইন্দুরকানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. এনামুল হক এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

পিরোজপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাঈদুর রহমান জানান, মামুনের আত্মহত্যার বিষয়টি তিনি জানতে পেরেছেন। তবে তাকে গালমন্দ কিংবা মারধরের কোনো বিষয় তার জানা নেই। এছাড়া এ বিষয়ে তিনি কোনো অভিযোগও পাননি।

পুলিশ সুপার মামুনের চিরকুটের বিষয়ে জানান, মামুনের লেখা চিরকুটের বিষয়টি তিনি সাংবাদিকদের কাছ থেকে জেনেছেন। মামুন এ বিষয়ে আগে কখনো তার কাছে কোন অভিযোগও করেনি। চিরকুটের বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। এ ঘটনায় কেউ দায়ী থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এটিএম/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply