লিফট কিনতে তুরস্কে যাচ্ছে পাবিপ্রবি’র প্রতিনিধিদল, ক্ষুব্ধ পাবনার সুশীল সমাজ

|

ফাইল ছবি

পাবনা প্রতিনিধি:

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি ভবনের লিফট কেনার জন্য তুরস্ক সফরে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রতিনিধি দল। লিফট কেনার এ সফরে অংশ নিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ কর্মকর্তা। এদিকে, এ ধরনের সফরের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পাবনার সুশীল সমাজ, জানিয়েছে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া। তবে, নিয়মতান্ত্রিকভাবেই এ সফরের আয়োজন করা হয়েছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।

এর আগে, গত ২ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প পরিচালকের কার্যালয় থেকে প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) জিএম আজিজুর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে রেজিস্ট্রার বিজন কুমার ব্রহ্মকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। ওই চিঠিতে ‘পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের বিভিন্ন স্থাপনার লিফট সংগ্রহের প্রাক জাহাজীকরণে ছয় সদস্যের একটি পরিদর্শক দলের তুরস্ক ভ্রমণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। গত ৯ মে তুরস্ক সফরের কথা থাকলেও পরবর্তীতে সময়সূচি পিছিয়ে আগামী ৬ জুন সফরে যাওয়ার কথা জানানো হয়।

জানা গেছে, একাডেমিক ভবন, ছাত্র ছাত্রীদের আবাসিক হলসহ মোট পাঁচটি আধুনিক ভবনের নির্মাণ কাজ চলছে পাবিপ্রবিতে। নির্মানাধীন ভবনগুলোর জন্য কেনা হবে প্রায় ২৫টি লিফট। আর সেসব লিফট কেনা ও তদারকির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধি দল যাচ্ছে তুরস্ক সফরে। এ প্রতিনিধি দলের প্রধান করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম মোস্তফা কামাল খানকে। সদস্য হিসেবে থাকছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কে এম সালাহ উদ্দিন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) ফরিদ আহমেদ, উপ-বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৌশলী (ইইই) রিপন আলী, উপ-বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৌশলী জহির মোহা. জিয়াউল আবেদীন। আর সদস্য সচিব হিসেবে আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প পরিচালক লে. কর্ণেল (অবসরপ্রাপ্ত) জি এম আজিজুর রহমান।

এরইমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে এ ধরনের সফরের যৌক্তিকতা নিয়ে। অবিলম্বে এ সফর বাতিলের দাবি জানিয়েছে পাবনার সুশীল সমাজ।

এ প্রসঙ্গে পাবনা জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আহাদ বাবু বলেন, বর্তমানে গুগলে সার্চ দিলেই সব ধরনের লিফটের ডিজাইন পাওয়া যায়। সারাদেশে বিশাল বিশাল বিল্ডিং নির্মাণ করা হচ্ছে। ২০ তলা ভবনের লিফটের জন্য তুরস্ক, জার্মানি, চায়না বা রাশিয়ায় প্রতিনিধিদল যেতে হয়নি। তাহলে পাবিপ্রবির সামান্য কয়েকটি লিফট কেনার জন্য কেনো অর্থ অপচয় করে বিলাসবহুল সফর করতে হবে?

এ প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিক পাবনার সভাপতি আব্দুল মতিন খান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনের লিফট কেনার জন্য শিক্ষকদের বিদেশ ভ্রমন মোটেও যুক্তিযুক্ত নয়। এটা স্পষ্ট অপচয়। ঠিকাদারের খরচে গেলেও এটা অপচয়ই বলবো। ঠিকাদারের তো লিফট বুঝিয়ে দিতেই হবে। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা করানো বাদ দিয়ে শিক্ষকদের লিফটের কারখানা দেখতে যেতেই হবে কি?

পাবনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহিম পাকন এ প্রসঙ্গে বলেন, মাত্র কয়েকটি লিফট কেনার জন্য বিদেশে ৬ জন কর্মকর্তা যেতে হবে! এমন অপচয় আমি সমর্থন করি না।

তবে নিয়মের মধ্যে থেকেই এ সফরের আয়োজন করা হয়ছে বলে দাবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের।

এ প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) জিএম আজিজুর রহমান বলেন, ছয় জনের যে প্রতিনিধি দল তুরস্ক সফরে যাচ্ছেন তাদের জন্য সরকারি কোনো অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হচ্ছে না। সফরের অর্থ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বহন করবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুন বলেন, সফরের বিষয়টা অনেক আগে থেকেই অনুমোদন করা আছে। এ সফর আরও আগে হওয়ার কথা ছিল কিন্তু আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাকে সম্মান করেই এতো বিলম্ব করেছি।

/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply