রংপুরে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের খনন ও পানি ছেড়ে দেয়ায় ব্রিজ ধসের অভিযোগ, ব্যাখ্যা তলব

|

ব্রিজ ভেঙে পড়ায় কলার ভেলায় করে নদী পারাপার হচ্ছে স্থানীয় স্কুল শিক্ষার্থীরা।

স্টাফ করেসপনডেন্ট, রংপুর

রংপুরের পীরগাছার ইটাকুমারী ইউনিয়নে আলাইকুমারী নদের ওপর নির্মিত ব্রিজ ধসে পড়েছে। এতে মাহিগঞ্জ পাওটানা রুটে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। দুর্ভোগে পড়েছে জনসাধারণ। বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের খনন কাজ ও পানি ছেড়ে দেয়াই এ ব্রিজ ধসের কারণ বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এ ব্যপারে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাছে ব্যাখ্যা তলবের কথা জানিয়ে ইউএন বলেন, বিকল্প উপায়ে যানবাহন চলাচলে উদ্যোগের চেষ্টা চলছে।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, নদের পানি একপাশে বেঁধে রেখে অন্যপাশে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ খনন কার্যক্রম চালাচ্ছিল। এছাড়াও বরেন্দ্রর ভেকু ব্রিজের নীচ দিয়ে আনা নেয়া করা ছাড়াও ব্রিজের পিলারের কাছেও ভেকু দিয়ে খনন কাজ চালায় বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষ। রোববার (২৮ মে) বিকেলে ওই পানি ছেড়ে দেয়া হলে হুমকির মুখে পড়ে ব্রিজটি। এরমধ্যেই রাত ৯টায় ব্রিজের পশ্চিমাংশ ধসে নদীতে পড়ে যায়। ধসে পড়ার সময় ব্রিজের ওপরে থাকা পথচারীরা দৌড়ে পালিয়ে প্রাণ বাঁচান। ব্রিজটি অনেক পুরোনো হওয়ায় পিলারগুলোও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছিল।

স্থানীয়রা আরও জানান,১৯৬৫-৬৬ সালের দিকে এই ব্রিজ তৈরি করা হয়। ৯০ সালের পর একবার উপরের অংশ সংস্কার করা হয়েছিল। নীচটা সংস্কার করা হয় নাই। ফলে আগের ইট সিমেন্ট বালু সব নষ্ট হয়ে গেছে। এর ওপর বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষ পানি ছেড়ে দেয়ায় স্রোতের কারণে ব্রিজের একাংশ ধসে গেছে।

এদিকে, ব্রিজ ধসে যাওয়ায় রংপুর-পাওটানা রুটে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। যানবাহন ও যাত্রীরা ১০-১৫ কিলোমিটার এলাকা ঘুরে যাতাযাত করছেন। স্থানীয়রা কলা গাছের ভেলা তৈরি করে কোনমতে পারাপার করছেন। শিক্ষার্থীরা পড়েছেন সব চেয়ে বেশি ভোগান্তিতে। ব্রিজের পূর্ব পাশের দামুরচাকলা বাজারেও মানুষের উপস্থিতি কমে গেছে। বিশেষ করে জেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক হওয়ায় ওই এলাকার বড় বড় হাটবাজারগুলোতে যেতে পারছেন না লোকজন। দ্রুত ব্রিজটি পুনঃনির্মাণের দাবি এলাকাবাসীর।

সোমবার (২৯ মে) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সরকারি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এ প্রসঙ্গে ইটাকুমারী ইউপি চেয়ারম্যান আবুল বাশার জানান, ব্রিজটি আগেই ঝূকিপূর্ণ ঘোষণা করা ছিল। সেজন্য পূনঃনির্মাণের টেন্ডার আহবান করা আছে। এরমধ্যেই, পানি ছেড়ে দেয়ায় পিলারের নীচের মাটি সরে যাওয়ায় ধসের ঘটনা ঘটেছে। কীভাবে সড়কটি আবার চালু করা যায় সেটা নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের সাথে বৈঠক করেছি।

উপজেলা চেয়ারম্যান আবু নাছের মোহাম্মদ মাহবুবার রহমান জানান, ব্রিজটার একটা স্লাব ধসে পড়ায় আমাদের এলাকার ১ থেকে দেড় লাখ মানুষের যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ তৈরি হয়েছে। ব্রিজ এলাকায় বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ খাল খনন করছিল। তারা পানি ছেড়ে দেয়ার পরপরই ব্রিজ ধ্বসে পড়ে। এতে তাদের কোনো গাফিলতি আছে কিনা সেটা দেখার জন্য আমরা এসেছি। তাদের ঊর্ধতনদের সাথে কথা বলেছি। বিষয়গুলো খতিয়ে দেখার পাশাপাশি আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে যানবাহন চলাচললের জন্য কি ব্যবস্থা করা যায়, তা নিয়ে আলোচনায় বসেছি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুল হক প্রধান জানান, আলাইকুমারী খালের ব্রিজটি রোববার রাতে ধ্বসে পড়েছে। এখানে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের একটা খাল খননের কার্যক্রম চলছিল। এ অবস্থায় খাল খননের কারণেই ব্রিজটি ভাঙলো কি না সেটি জানতে আমি সংশ্লিষ্টদের কাছে ব্যাখ্যা তলব করেছি। এছাড়াও দ্রুততম সময়ের মধ্যে অলটারনেটিভ ব্যবস্থা করে যাতায়াতে দুর্ভোগ লাঘবের চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, এ ব্যপারে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাথে দফায় দফায় যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য বা মন্তব্য পাওয়া যায়নি।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply