বিএনপি নেতাদের নির্বাচন বিরোধী বক্তব্য যুক্ত করে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে আরাফাতের চিঠি

|

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত। ছবি: সংগৃহীত

বিএনপি নেতাদের নির্বাচন বিরোধী বক্তব্য সংযুক্ত করে যুক্তরাষ্ট্র ঘোষিত নতুন ভিসানীতির আওতায় তাদের আনার ব্যাপারে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ. আরাফাত। শুক্রবার (২৬ মে) নিজ ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এই চিঠির কথা উল্লেখ করেন তিনি।

ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করা মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্দেশে এই চিঠিতে বলা হয়েছে, আপনাদের সম্প্রতি ঘোষিত ভিসানীতি অনুসারে (এবং আপনি যে চিঠিটি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে পাঠিয়েছেন) যেখানে আপনি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন, “এই নীতি বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিবৃত প্রতিশ্রুতিকে সমর্থন করে এবং যুক্তরাষ্ট্র, বাংলাদেশি নাগরিক বা যে কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মকর্তারা যখন নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করবে তখন তাদের উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ হবে।“

চিঠিতে আরও বলা হয়, “এখানে আমি কিছু ভিডিও ফুটেজ সংযুক্ত করেছি যেখানে আপনি দেখতে পাবেন যে বিএনপির কিছু শীর্ষ নেতারা বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার জন্য প্রকাশ্যে ঘোষণা দিচ্ছেন। আমি আশা করি, আপনার ভিসা নীতি বিএনপির এই নেতাদের জন্যও প্রযোজ্য হবে।

সংযুক্তি হিসেবে আপলোডকৃত ভিডিওতে বিএনপির স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে বলতে শোনা যায়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ব্যতীত বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হতে দেয়া হবে না।

ভিডিওটিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগ আরও একটি নতুন নির্বাচনের পাঁয়তারা শুরু করেছে। এই নির্বাচন আমাদেরকে অবশ্যই প্রতিহত করতে হবে।

ভিডিওর একটি অংশে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আমানউল্লাহ আমান বলেন, শেখ হাসিনার সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশে নির্বাচন হবে না, হতে দেয়া হবে না।

এছাড়া সেই ভিডিওতে বিএনপির স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে ছাড়া আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে না, হতে দেয়া হবে না।

এর আগে, বৃহস্পতিবার (২৫ মে) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন এই ভিসানীতি নিয়ে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রতিনিধিদের সঙ্গে দুই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। বৈঠকে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলে উপস্থিত ছিলেন দলটির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত এবং তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ।

বৈঠক সম্পর্কে যমুনা নিউজকে মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, আমাদের দিক থেকে আমরা পরিষ্কারভাবে বলেছি, এই ঘোষণা নিয়ে আমরা চিন্তিত না। কারণ, বাংলাদেশে আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চাই। আমরা মনে করছি, একদিক থেকে ভালোই হয়েছে। সেটা হচ্ছে, আমরা যতবারই সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চেয়েছি, বিএনপি কোনো না কোনোভাবে নষ্ট করেছে। সহিংসতা করেছে বা নির্বাচনকে আটকে দেয়ার চেষ্টা করেছে কিংবা আসেনি, অগ্নিসন্ত্রাস করেছে। গতকালও তারা দুইটা বাস জ্বালিয়েছে। তারা এখন রাস্তায় নামে সরকারকে ফেলে দেয়ার জন্য এবং নির্বাচনকে তারা মানে না। তাদের সো কল্ড ‘কেয়ারটেকার সরকার’ এর দাবি রয়েছে। এটা নিয়ে গোটা বিশ্বের সমর্থন ও মতামত নেই। সবাই সুষ্ঠু নির্বাচন চায়, আমরাও তা চাই। বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা বলে এবং সহিংসতা করে। সহিংসতা যারা করবে তাদের জন্যও এই ঘোষণাটা এসেছে। আমি মনে করি, বিপদে পড়লে বিএনপি পড়েছে। আমরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চাই, সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। বঙ্গবন্ধু কন্যাও তা চান।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বুধবার (২৪ মে) এক বিবৃতিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন জানান, বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে সহায়তার জন্য নতুন এই নীতি ঘোষিত হয়েছে। নতুন এই ভিসানীতি অনুযায়ী, বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করলে বা তাতে সহায়তা করলে যেকোনো ব্যক্তিকে আর ভিসা নাও দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। যাদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করা হতে পারে তাদের মধ্যে বাংলাদেশের কর্মরত কিংবা সাবেক সরকারি কর্মকর্তা, সরকারি বা বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, বিচার বিভাগের কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরাও রয়েছেন।

আরও পড়ুন: নতুন মার্কিন ভিসানীতি প্রধানমন্ত্রীর কমিটমেন্টকে সমর্থন করে: মোহাম্মদ এ আরাফাত

/এম ই


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply