ঘুষের টাকা ফেরত চাওয়ায় সমাজসেবা কর্মকর্তার হাতে দুই নারী লাঞ্ছিতের অভিযোগ

|

অভিযুক্ত উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান।

শরীয়তপুর প্রতিনিধি:

ঘুষের টাকা ফেরত চাওয়ায় দুই নারীকে চড়থাপ্পড় ও বুকে ধাক্কা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী এক নারী। অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন ইউএনও।

ভুক্তভোগীরা জানান, ছেলেকে বিদেশ পাঠানো ও স্বামীর জন্য মাছ ধরার জাল কিনবেন বলে ৫ মাস আগে উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে আরএসএস প্রকল্পে জনপ্রতি ৫০ হাজার টাকা করে দুজনে মোট ১ লাখ টাকা ঋণের প্রস্তাব করেন ভেদরগঞ্জের মির্জাপুর এলাকার বাসিন্দা নাজমা বেগম ও জান্নাত বেগম।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, দ্রুত ঋণ পেতে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মিজানুর রহমানকে ৫ হাজার করে দুজনে মোট ১০ হাজার টাকা ঘুষ দিয়েছেন তারা। কিন্তু, চার মাস পার হলেও ওই কর্মকর্তা ঋণ দিতে গড়িমসি করতে থাকেন। ঋণের ব্যাপারে কথা বলতে সোমবার (২২ মে) বিকেল ৪টার দিকে সমাজসেবা কর্মকর্তা মিজানুর রহমানের অফিসে যান নাজমা ও জান্নাত।

কিন্তু, তাদেরকে ঋণ দিতে অস্বীকার করেন সমাজসেবা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান। এক পর্যায়ের তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে নাজমাকে গালে থাপ্পড় মারেন মিজানুর। প্রতিবাদ করলে জান্নাতকে বুকে ধাক্কা মেরে রুম থেকে বেরিয়ে চলে যান অভিযুক্ত ওই কর্মকর্তা। পরে স্থানীয় ও অফিসে থাকা লোকজন এগিয়ে এসে নাজমা ও জান্নাতকে উদ্ধার করেন। 

এ ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী নাজমা বেগম। আর, মঙ্গলবার (২৩ মে) সন্ধ্যায় ভেদরগঞ্জ উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মোফাজ্জেল হোসেনকে সভাপতি করে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা কহিনুর সুলতানা ও উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইনসট্রাক্টর সাহিনুর বেগমের সমন্বয়ে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন ইউএনও। তদন্ত কমিটিকে আগামী সাত দিনের মধ্যে তদন্তের প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

ভুক্তভোগী নাজমা বেগম ও জান্নাত বেগম বলেন, দ্রুত ঋনের টাকা পাওয়ার জন্য ঘুষ দিয়েও চার মাস ধরে ঘুরেছি কিন্তু ঋণ পাইনি। তাই, সোমবার বিকেলে সমাজসেবা কার্যালয়ের অফিসারের অফিসে যাই। জিজ্ঞেস করি, আমাদের ঋণ দিবেন কবে? ঋণ না দিলে আমাদের টাকা ফেরত দেন। টাকা ফেরত চাওয়ায় এ নিয়ে তার সঙ্গে আমাদের তর্ক হয়। এক পর্যায়ে তিনি থাপ্পড় ও বুকে ধাক্কা মেরে রুম থেকে বেরিয়ে চলে যান। আমরা আমাদের টাকা ফেরত চাই। আর থাপ্পড় ও ধাক্কার বিচার চাই।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ভেদরগঞ্জ উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ওই নারী দুইজন যে অভিযোগ করেছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আমি তাদের থেকে কোনো টাকা নেইনি। অফিসের ইউনিয়ন সমাজকর্মী শফিকুল ইসলামের বিভিন্ন অনিয়মের কারণে আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানিয়েছি। এজন্য, শফিকুলই ক্ষিপ্ত হয়ে সমাজকর্মীদের দিয়ে এ মিথ্যা নাটক সাজিয়ে আমাকে ফাঁসাতে চাইছে।

এ বিষয়ে জানতে ইউনিয়ন সমাজকর্মী শফিকুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু, তিনি এ বিষয়ে কোনো কথা বলেননি।

এ প্রসঙ্গে ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ভুক্তভোগীরা আমার কাছে একটি অভিযোগ দিয়েছেন। এ ব্যাপারে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সাত দিনের মধ্যে তদন্তের প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। তদন্তে ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হলে সমাজসেবা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়েরের জন্য সমাজসেবা ঢাকা বিভাগীয় পরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ পাঠিয়ে দেবো।

/এসএইচ



সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply