‘এক কাপ চায়ে আমি তোমাকে চাই…’, চা প্রেমীদের দিন আজ

|

‘এক কাপ চায়ে আমি তোমাকে চাই, ডাইনে ও বায়ে আমি তোমাকে চাই…’। কবীর সুমনের এই গানের মধ্যেই স্পষ্ট, চা আমাদের কত আপন। সকালে মনকে চনমনে করতে চায়ের জুড়ি নেই। মন খারাপ কিংবা বৃষ্টিভেজা বিকেলে চায়ের কাপেই ঘোচে নিঃসঙ্গতা। তাই পানির পর চা-ই হলো বিশ্বে সর্বাধিক পানকৃত পানীয়। আর সেই কথা মাথায় রেখে প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে পালিত হয় চা দিবস।

এই দিবসের সূচনা কী করে হলো, চলুন চট করে সেটি আগে জেনে আসি। ২০০৫ সালে চা উৎপাদনকারী দেশগুলো এক হয়ে আন্তর্জাতিক চা দিবস পালন করে। দেশগুলো হলো, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, কেনিয়া, মালয়েশিয়া, উগান্ডা, ভারত এবং তানজানিয়া। তখন ২১ ডিসেম্বর পালিত হতো দিনটি। পরে ২০১৯ সালে ২১ মে বিশ্ব চা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সালের ২১ ডিসেম্বর জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার পক্ষ থেকে বিশ্বব্যাপী চা দিবসকে উদযাপনের বিষয়ে সম্মতি প্রকাশ করা হয়। ২০২০ সালের ২১ মে জাতিসংঘ প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ব চা দিবস পালন করে। সেই থেকে প্রতি বছরের ২১ মে বিশ্ব চা দিবস পালিত হয়ে আসছে।

চা যে শুধু মনের তৃপ্তি মেটাতে পারদর্শী তা-ই নয়, এই পানীয়ের রয়েছে ঔষধি গুণও। বিশ্বব্যাপী চায়ের চাহিদাও অনেক। ন্যাশনাল টুডে’র তথ্য অনুযায়ী, প্রতি সেকেন্ডে মানুষ ২৫ হাজার কাপ চা পান করে বিশ্বজুড়ে। অর্থাৎ প্রতিদিন দুই বিলিয়ন কাপেরও বেশি চা পান করা হয়। বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও চায়ের রয়েছে বিশাল ভূমিকা। এটি বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান অর্থকরী ফসল। ফলে বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও অর্থনীতি দুটি ক্ষেত্রেই চা জড়িয়ে আছে অতপ্রতভাবে।

তবে এই চায়ের সাথে বিশ্ববাসীয় পরিচয় কিন্তু প্রধাণত চীনের হাত ধরেই। বলা হয়, চীন দেশই চায়ের আদি জন্মভূমি। ১৬৫০ খ্রিষ্টাব্দে চীনে বাণিজ্যিকভাবে চায়ের উৎপাদন শুরু হয়। ভারতবর্ষে অবশ্য চা আসে আরও পরে। ১৮১৮ খ্রিষ্টাব্দে ভারতবর্ষে চায়ের চলন ও বাণিজ্যিক চাষ শুরু হয়। ১৮৫৫ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশরা সিলেটে সর্বপ্রথম চায়ের গাছ খুঁজে পায়। এরপর ১৮৫৭ সালে সিলেটের মালনীছড়ায় শুরু হয় বাণিজ্যিক চা-চাষ। আর এভাবেই ধীরে ধীরে চা ছড়িয়ে পড়তে থাকে বিশ্বজুড়ে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ এই পানীয়ের প্রেমে পড়তে থাকে।

গরম চা কীভাবে আবিষ্কৃত হলো, তার অবশ্য একটি মজার ইতিহাস আছে। বলা হয়, প্রায় ৫ হাজার বছর আগে একজন চীনা সম্রাট গরম পানির কাপ নিয়ে একটি গাছের নিচে বসেছিলেন। তখন কিছু কিছু শুকনো পাতা ওই কাপে এসে পড়ে। পরে সম্রাট সেই পানীয় পান করে মুগ্ধ হন। এভাবে গরম চায়ের সঙ্গে মানুষের পরিচয় ও বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। যদিও এই গল্প কতটা সত্যি তা বলা মুশকিল। কিন্তু শত শত বছর ধরে মানুষ গরম চা পান করে আসছে, এ ইতিহাস অকাট্য।


যমুনা টেলিভিশনের সবশেষ আপডেট পেতে Google News ফিড Follow করুন।

বাংলাদেশে সাধারণ দুই ধরনের চায়ের চলন বেশি। রং চা ও দুধ চা। মশলা চা ও অবশ্য বেশ প্রচলিত। তবে মরিচ চা, বেল চা, কমলা চা, মাল্টা চা, জাফরান চা, লবণ চা, জবা ফুলের চা, পাটপাতার চা, শিউলিপাতার চা, বাসকপাতার চাসহ বিশ্বজুড়ে অগণিত চায়ের ধরণ পাওয়া যায়। বিশেষ করে চীনে চা পস্তুতের প্রণালি চলে গেছে শিল্পের পর্যায়ে।

বিশ্ব চা দিবস চাইলে আপনিও পালন করতে পারেন। এমনিতেই তো চা ছাড়া আমাদের চলে না। তবে এ দিন একটু আয়োজন করে পরিবারের সদস্য কিংবা বন্ধুদের নিয়ে বসিয়ে ফেলতে পারেন চায়ের আড্ডা। সুযোগ থাকলে ঘুরে আসতে পারেন চায়ের শহরেও। দেখে আসতে পারেন, কীভাবে উৎপাদিত হয় এ মূল্যবান পানীয়ের উপাদান।

তথ্যসূত্র: ইউএন, সিজিটিএন, ন্যাশনাল টুডে।

এসজেড/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply