সহশিল্পীদের স্মৃতিতে যেমন ছিলেন ‘নায়ক ফারুক’ (ভিডিও)

|

আকবর হোসেন পাঠান ফারুক (১৯৪৮-২০২৩)

দুই বছরেরও বেশি সময় হাসপাতালে চিকিৎধীন ছিলেন তিনি। চলতি বছর কিছুটা সেরেও উঠছিলেন, কথা ছিল দেশে ফেরার। কিন্তু নিয়তি আর ফিরতেই দিলো না তাকে। ফিরছে তার নিথর দেহ। ঢাকাই সিনেমার কিংবদন্তি অভিনেতা ফারুকের মৃত্যুতে শোক ছেয়ে গেছে চলচ্চিত্রপাড়াসহ গোটা শোবিজ জগতে।

সাদাকালো থেকে রঙিন পর্দায় ঢাকাই সিনেমার কিংবদন্তি আকবর হোসেন পাঠান। তবে ‘নায়ক ফারুক’ নামেই বেশি পরিচিত তিনি। ১৯৪৮ সালের ১৮ আগস্ট ঢাকার অদূরে মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওরে জন্ম তার। বেড়ে ওঠেছেন পুরান ঢাকার অলিগলিতে। বাবা আজগার হোসেন পাঠানের পাঁচ মেয়ে ও দুই ছেলের মধ্যে ফারুক ছিলেন সবার ছোট ও সবচেয়ে ডানপিটে।

‘জলছবি’ সিনেমার দৃশ্যে ফারুক ও কবরী।

ছাত্রজীবনেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও পাড়া-মহল্লায় নাটকে অভিনয় করতেন ফারুক। সিনেমার জগতে প্রবেশ করেন জলছবি চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। প্রথম সিনেমাতেই তার বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন বাংলা চলচ্চিত্রের ‘মিষ্টি মেয়ে’ খ্যাত কবরী। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। উপহার দিয়েছেন একের পর এক জনপ্রিয় সিনেমা। তবে সবচেয়ে জনপ্রিয় জুটি গড়েছিলেন ববিতার সাথে।

ফারুকের স্মৃতিচারণ করে জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা ববিতা বলেন, আমরা একসাথে অনেক ছবি করেছি। ফারুক ভাইয়ের সাথে আমার প্রথম সিনেমা ছিল ‘আলোর মিছিল’। ওই সিনেমায় ওনার রোলটা ছোট ছিল কিন্তু এটা খুবই সুপার ডুপার হিট হয়েছিল। আমার মনে হয়, আমি ফারুক ভাইয়ের সাথে ৩০-৪০টি ছবি করেছি।

তিনি কাজ করেছেন বাংলাদেশের কিংবদন্তি পরিচালক খান আতাউর রহমান, নারায়ণ ঘোষ, স্বপন ঘোষ, আজিজুর রহমান, আমজাদ হোসেনসহ গুনী পরিচালকদের সাথে। তাদের হাত ধরেই উপহার দিয়েছেন একের পর এক কালজয়ী সিনেমা। প্রায় ১০০ সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। যার মধ্যে বেশিরভাগই দর্শকদের মন জয় করেছে।

বাংলা চলচ্চিত্রের ‘মিয়া ভাই’ খ্যাত নায়ক ফারুক প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান ১৯৭৫ সালে। নারায়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত বিখ্যাত ‘লাঠিয়াল’ সিনেমায় অভিনয়ের কারণে। চলচ্চিত্রে সামগ্রিক অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার আজীবন সম্মাননা প্রদান করেন তাকে। এছাড়া বাচসাস’সহ অগণিত গুরুত্বপূর্ণ সম্মাননায় ভূষিত হন ‘মিয়াভাই’।

সবার শ্রদ্ধাভাজন এই মানুষটি ছিলেন বাংলাদেশি চলচ্চিত্র অঙ্গনে প্রাজ্ঞজনদের একজন। তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেচে দেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনে। শোক প্রকাশ করেছেন তার দীর্ঘদিনের সহকর্মী ও তারকারা।

গণমাধ্যমের সামনে নায়ক ফারুকের স্মৃতিচারণ করছিলেন সোহেল রানা।

চিত্রনায়ক সোহেল রানা বলেন, ফারুক আমার খুব কাছের ছিল। একের পর এক সিনেমায় নিজের প্রতিভা যেভাবে দেখিয়েছে গ্রামের প্রতিবাদী যুবকের চরিত্র নিয়ে ফারুক যেভাবে বাংলাদেশের মানুষের অন্তরে ঢুকে গেছে তা অবিস্মরণীয়। আরেকটা ফারুককে পেতে আমাদের হয়তো আরও অনেকদিন অপেক্ষা করতে হবে।

ফারুকের সহশিল্পী চিত্রনায়িকা রোজিনা স্মৃতিচারণ করে বলেন, আমি ভাবতেও পারছি না যে উনি আর নেই। ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। বাংলা চলচ্চিত্রের একজন কিংবদন্তি শিল্পীকে, একজন বড় মাপের মানুষকে আমরা হারালাম। একজন অভিভাবককে হারালাম। এই শূন্যস্থান পূরণ হওয়ার মতো না। তিনি হয়তো আর নেই তবে তার কর্ম চিরকাল বেঁচে থাকবে বাংলার মানুষের মনে।

প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরেই বিরল নিউরোলোজিক্যাল রোগ জিবিএস-এ ভুগছিলেন তিনি। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, মঙ্গলবার (১৬ মে) সকালে তার মরদেহ ঢাকায় আনা হবে বলে জানা গেছে। বিমানবন্দরে তার লাশ গ্রহণ করবেন চিত্রনায়ক জায়েদ খান। জানাজা অনুষ্ঠিত হবে তার প্রিয় কর্মস্থল এফডিসি ও শহীদ মিনারে। এরপর কালীগঞ্জে চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন তার বাবার কবরের পাশে। তবে চলে গেলেও বাংলা চলচ্চিত্রের দর্শকের মনে আজীবন স্থায়ী আসনে থাকবেন এ বরেণ্য অভিনেতা।

/এসএইচ


        


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply