শত্রু-মিত্র সবার উপর একইভাবে নজরদারি করে যুক্তরাষ্ট্র!

|

ছবি: সংগৃহীত

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে অনলাইনে ফাঁস হওয়া পেন্টাগনের ‘অতি গোপনীয়’ নথিগুলোতে প্রকাশ পেয়েছে, কীভাবে শত্রু এবং মিত্রের উপর একইভাবে গুপ্তচরবৃত্তি করে আসছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র! দক্ষিণ কোরিয়া, ইসরায়েল এবং ইউক্রেনসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি মিত্র দেশের ফোনকলেও যুক্তরাষ্ট্র গোয়েন্দা বিভাগ আড়ি পাততো বলে জানা গেছে এসব নথিতে। পেন্টাগনের অনেক কর্মকর্তাই নাকি শঙ্কা প্রকাশ করে জানিয়েছেন, নথিগুলো প্রকাশিত হওয়ার ফলে আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিপাকে পড়তে পারে যুক্তরাষ্ট্র। এসব ঘটনায় হতাশা প্রকাশ করেছে মিত্র দেশের কূটনীতিকরাও। সিএনএনের খবর।

গত মাসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ডিসকর্ডে প্রকাশিত পোস্টের বেশ কিছু স্ক্রিনশট খতিয়ে দেখেছে সিএনএন। রোববার (১০ এপ্রিল) এক বিবৃতিতে ডিসকর্ডের মুখপাত্র নিশ্চিত করেছেন, তদন্তের স্বার্থে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা করছে তারা।

সারা বিশ্ব থেকে গুপ্তচরবৃত্তির মাধ্যমেই যে খবর সংগ্রহ করে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা, সে কথা সর্বজনবিদিত। তবে এমন ঘটনায় হতাশা প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশের অনেক কূটনীতিক। মিত্র দেশগুলো এই প্রেক্ষিতে ক্ষতির পরিমাণ খতিয়ে দেখার সাথে যাচাই করছে যে, তাদের নিজেদের কোনো সূত্র এবং মাধ্যম এই নথি ফাঁসের ঘটনায় হুমকিতে পড়েছে কিনা।

ফাঁস হওয়া ৫৩টি নথি খতিয়ে দেখেছে সিএনএন। এর সবই তৈরি করা হয়েছিল ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে মার্চের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে। এর মধ্যে একটি নথিতে দেখা যায়, ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভোলদিমের জেলেনস্কির উপরও নজরদারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এই ঘটনায় ইউক্রেনের গোয়েন্দা সংস্থা হতাশা প্রকাশ করেছে। মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়, জেলেনস্কি গত ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে যুক্তরাষ্ট্রকে রাশিয়ার রোস্তভ ওব্লাস্টে রুশ স্থাপনায় আঘাত হানার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কারণ, মনুষ্যবিহীন আকাশযান ব্যবহার করে এতদূর পৌঁছাতে সক্ষম দূরপাল্লার কোনো অস্ত্র নেই ইউক্রেনের কাছে।

অন্য একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ লক্ষ্যবস্তুতে ইউক্রেনের হামলার ঘটনাকে চীন ব্যবহার করতে পারে ভিন্নভাবে, যেখানে ন্যাটোকে দেখানো হবে আগ্রাসন চালানো শক্তি হিসেবে। এই সুযোগে রাশিয়ায় সামরিক সহায়তা বৃদ্ধির উপযুক্ত প্রেক্ষিত তৈরি করতে পারতো চীন।

আরেকটি নথিতে বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার দুই সিনিয়র জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তার মধ্যকার কথোপকথন। তারা কথা বলছিলেন গোলাবারুদের জন্য মার্কিন অনুরোধের বিষয়ে। দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ এ সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রকে গোলাবারুদ সরবরাহ করলে তা পাঠানো হতে পারে ইউক্রেনে। কোনো দেশে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে মারণাস্ত্র সরবরাহ করার ব্যাপারে দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্র নীতি এ ক্ষেত্রে লঙ্ঘিত হবে।

এদিকে ইসরায়েল সম্পর্কে ফাঁস হওয়া একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদন জেরুজালেমে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। সিআইএ’র প্রস্তুতকৃত এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, দেশটিতে চলমান সরকার বিরোধী আন্দোলনে মদদ দিচ্ছে ইসরায়েলের প্রধান গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ। রোববার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় মোসাদের পক্ষে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছে, প্রতিবেদনটি সম্পূর্ণভাবে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।

আরও পড়ুন: পেন্টাগনের নথি ফাঁস: রণকৌশল পাল্টাতে বাধ্য হয়েছে ইউক্রেন

/এম ই


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply