যুক্তরাষ্ট্রের হোটেল-রেস্তোরাঁয় হালাল খাবারের চাহিদা বাড়ছে

|

ছবি : সংগৃহীত

শাহেদ আমানউল্লাহ যখন হালাল ব্যবসার তালিকার তথ্য সমৃদ্ধ ওয়েবসাইট শুরু করেন, তখন যুক্তরাষ্ট্রে ইসলামী শরিয়ত মেনে খাবার পরিবেশন করা হয় এমন হোটেল-রেস্তোরাঁর সংখ্যা ছিল ২০০টির মতো। আজ ২৫ বছর পর তার সেই ওয়েবসাইটে যুক্ত হওয়া যুক্তরাষ্ট্রের হালাল খাবার বিক্রি করে এমন হোটেল-রেস্তোরাঁর সংখ্যা প্রায় ১৩ হাজার। যেখানে মালয়েশিয়ান থেকে মেক্সিকান সকল মেনুর হালাল খাবার কিনতে পাওয়া যায়। খবর শেয়ার আমেরিকার।

খবরে বলা হয়েছে, এখনো আমেরিকায় মুসলমান জনসংখ্যা দেশটির মোট জনসংখ্যার তুলনায় কম হলেও তাদের সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে তাতে পিউ রিসার্চ সেন্টারের প্রাক্কলন মতে আগামি ২০৫০ সালে দ্বিগুণেরও বেশি বাড়বে (০.৯ শতাংশ থেকে ২.১ শতাংশ)। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হালাল হোটেল-রেস্তোরা খোলার হার যেভাবে বাড়ছে তাতে বোঝা যাচ্ছে আমেরিকান অর্থনীতিতে মুসলমানদের অংশগ্রহণ বাড়ছে।

জাতিগোষ্ঠী থেকে মূলধারায়

রান্না বিষয়ক বই ‘মাই হালাল কিচেন’ এর লেখক ইভান মাফেই বলেন, হালাল খাবার আমেরিকান সমাজের মূলধারায় স্থান করে নিয়েছে। তার মতে এটি একটি বিবর্তন যা এর আগে ২০ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে মেক্সিকান খাবারের ক্ষেত্রে ঘটেছিল।

তিনি আরও বলেন, এটি এমন কিছু যা নিয়ে শুধুমাত্র মুসলিম জনগোষ্ঠী ১৫ বছর আগে কথা বলত, কিন্তু এখন আমার বন্ধুরা যারা কখনো মধ্যপ্রাচ্যে যায়নি কিংবা হালাল কী তা জানে না তারাও হুমাস, ফালাফেল ও শর্মা কী তা ঠিক জানে এবং তারা এই ধরনের খাবার পছন্দ করে।

আমানউল্লাহ বলেন, ২০০০ সালের শুরুতে পর্যন্ত তুলনামূলকভাবে অল্প কয়েকটি হালাল রেস্তোরাঁ দেখা যেতো, যেগুলো আকারে ছোট এবং মূলত পরিবার দ্বারা পরিচালিত ছিল এবং তারা “রেস্তোরাতে বাসার আমেজে খাবার” পরিবেশন করতো। তাদের গ্রাহকদের বড় অংশ ছিল মনেপ্রাণে আরব কিংবা দক্ষিণ এশীয় অভিবাসীরা।

বেশি গ্রাহক, ততো কম খরচ

আমানউল্লাহ হালাল রেস্তোরাঁর দ্রুত সম্প্রসারণের জন্য দু’টি অর্থনৈতিক কারণকে কৃতিত্ব দিয়ে থাকেন। বাজারে মুসলমানদের ক্রমবর্ধমান অংশগ্রহণ এবং রেস্তোরাগুলোতে হালাল পণ্য ক্রয়ে খরচ বেশি না হওয়া।

আমানউল্লাহ বলেন যে, মুসলমানদের সংখ্যা দেশের মাত্র ১ শতাংশ। কিন্তু প্রধান প্রধান মেট্রোপলিটন এলাকাগুলোয় এই সংখ্যা ৫-৬ কিংবা কোথাও ১০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।

হালাল এবং অন্যান্য মাংসের মধ্যে মূল্যের পার্থক্য কমে আসাতে রেস্তোরাঁর মালিকদের পক্ষে হালাল বেছে নেয়া সহজ হচ্ছে। তিনি কম খরচের প্রধান কারণ হিসেবে কানসাসের মতো মধ্য-পশ্চিমাঞ্চলীয় স্টেটে হালাল মাংসের উৎপাদন বৃদ্ধির বিষয়টি তুলে ধরেন।

ঘটনাক্রমে হালাল

ডেভের হট চিকেন এবং এলিভেশন বার্গার হালাল হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠাকে আমানউল্লাহ ‘অপ্রত্যাশিতভাবে হালাল’ রেস্তোরাঁ বলছেন৷ এলিভেশন বার্গার যখন থেকে মানসম্মত মাংসের জন্য হালাল মাংস সরবরাহকারীকে বেছে নেয় এবং আমানউল্লাহর ওয়েবসাইটে রেস্তোরাঁটি তালিকাভুক্ত হয়, তারপর থেকেই এই চেইন রেস্তোরায় বিপুল সংখ্যক মুসলমান ক্রেতারা আসতে শুরু করে। মুসলমান ক্রেতাদের এই ভীড় রেস্তোরার মালিকদের আকৃষ্ট করে এবং তারা হালালের প্রতি আগ্রহী হয়। এবং পরে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে হালাল বিষয়টিকে স্বীকৃতি দেয় এবং তাদের রেস্তোরায় হালাল স্টিকার লাগানো হয় বলে জানান আমানউল্লাহ।

পেনিয়া বলেন, নিজেদের রেস্তোরাঁয় হালাল খাবার চালু করায় আমরা সহজেই অনেক প্রতিযোগী থেকে নিজেদেরকে আলাদা করে ফেলতে পেরেছিলাম। যেখানে অন্য কোন মেক্সিকান রেস্তোরাঁ মুসলমান জনগোষ্ঠীকে আলাদাভাবে ক্রেতা হিসেবে বিবেচনা করে নাই বা তাদেরকে পৃথকভাবে গুরুত্ব দিয়ে অন্তর্ভুক্ত করে নাই, তখন আমরা সেটা করেছি। অন্যরা যখন শুকরের মাংস ও মদ বিক্রি করছিল, তখন হালাল খাবার বিক্রি করার মধ্য দিয়ে আমরা প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যাই এবং আমাদের রেস্তোরাঁ অন্য আরেকদল মানুষের জন্য গন্তব্যস্হলে পরিণত হয়, যারা হালাল খাবারের রেস্তোরাঁ খুঁজছিল।

এএআর/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply