দ্য এলিফ্যান্ট হুইস্পারার্স; ভারতকে অস্কার এনে দেয়া তথ্যচিত্রের পেছনের গল্প!

|

মানুষ আর পশুর সম্পর্ক ঠিক কেমন? শিশুকে বড় করতে করতে মানুষ বাবা-মায়েদের যে অভিজ্ঞতা হয়, কোনো বন্য জন্তুকে পোষ্য করতেও কি একই অনুভূতি হয়? পশু আর মানুষের সম্পর্ক নিয়ে সিনেমা কম হয়নি। তবে সেসবের জনপ্রিয়তা ও খ্যাতি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তেমন ছাপ না ফেললেও ‘দ্য এলিফ্যান্ট হুইস্পারার্স’ ভারতবর্ষকে চিনিয়েছে অস্কারের মঞ্চে। জিতেছে বেস্ট ডকুমেন্টারি শর্ট সাবজেক্ট বিভাগের অস্কার। তবে কার্তিকি গঞ্জালভেস পরিচালিত ও গুনীত মাঙ্গা প্রযোজিত এ তথ্যচিত্রের পেছনের গল্পটাই বা ঠিক কেমন ছিল সেটি কজনই বা জানে!

ভারতের আদিবাসী দম্পতি বোমান এবং বেলির যত্নে বেড়ে ওঠা রঘু নামের এক অনাথ হাতি শাবকের গল্প এটি। বোমান-বেলির সঙ্গে রঘুর গড়ে ওঠা সম্পর্কের বন্ধনই তথ্যচিত্রটির প্রাণভোমরা। এর পাশাপাশি রয়েছে বনভূমির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। মানুষ আর প্রকৃতির মেলবন্ধনের কাহিনী এটি। তথ্যচিত্রটি ২০২২ সালের ডিসেম্বরে মুক্তি পায় নেটফ্লিক্সে।

৪১ মিনিটের এ তথ্যচিত্রের প্রেক্ষাপট তামিলনাড়ুর মুদুমালাই টাইগার রিজার্ভ। এটিই পরিচালক হিসেবে কার্তিকি গঞ্জালভেসের আত্মপ্রকাশ। মাহুত দম্পতি বোমান ও বেলি হস্তীশাবক রঘুকে অবশ্যম্ভাবী মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন। রঘুকে শুধু নতুন জীবনদানই নয়, তাকে পালন-পোষণ করে বড়ও করে তুলেছিলেন তাঁরা। রঘুর পর এ দম্পতির কোলে আসে আরও এক হস্তীশাবক আম্মু। কিন্তু নির্মাতা কার্তিকি কীভাবে খুঁজে পেলেন তাঁদের?

অস্কারজয়ী তথ্যচিত্র নির্মাতা কার্তিকি গঞ্জালভেস এ প্রসঙ্গে বলেন, এ ডকুফিল্ম তৈরির পেছনে আমার জন্মভূমির ভূমিকা অনেক। হাতিটা যেখানে বেড়ে উঠেছে, আমারও সেখানে বেড়ে ওঠা। একদিন আমি উটি থেকে ব্যাঙ্গালোর ফিরছিলাম। হঠাৎ দেখি, রাস্তার পাশে এক প্রবীন দম্পতি ছোট্ট একটি হাতির শুড় ধরে হাঁটছে। ঠিক যেমন কেউ নিজের বাচ্চাকে আগলে রাখে। ব্যাপারটা খুবই ইন্টারেস্টিং লাগে আমার কাছে। গল্প করতে এগিয়ে যাই। ওই মুহূর্ত কোনোদিনও ভুলবো না। আমার জীবনকেই বদলে দিয়েছে ছোট্ট রঘু।

জানা গেছে, পাঁচ বছর ধরে রঘুর গল্পটিকে ভেবে চলেছিলেন তিনি। প্রায় ৪৫০ ঘণ্টার ফুটেজ ছিল এ সিনেমার। সেখানে রঘুর স্নান, তার খাওয়া বা খেলার হাজার হাজার দৃশ্য ধরা ছিল। হাজারো দৃশ্যের মধ্য থেকে ধৈর্য ধরে কার্তিকি খুঁজে বের করেছেনএমন কিছু দৃশ্য, যা বৈশ্বিক দর্শকসহ সমালোচকদের মন ছুঁয়ে গেছে। বোমান-বেলির সঙ্গে রঘুর যে আত্মিক যোগ গড়ে উঠেছিল সে কাহিনীই দেখানো হয়েছে তথ্যচিত্রে। তবে এই হস্তীশাবককে তারা পেলেন কোথা থেকে?

রঘুর পরিচর্যাকারী বেলী বলেন, কয়েক বছর আগে বন অধিদফতর আহত অবস্থায় দুটি বাচ্চা হাতি উদ্ধার করে। ওদের কান ও লেজ কাটা ছিল। রঘুর মা ইলেক্ট্রিক শকে মারা যায় ওর চোখের সামনেই। এ অবস্থাতেই রঘুকে আমাদের কাছে নিয়ে আসে বন কর্মীরা। এর কিছুদিন আগেই আমার প্রাক্তন স্বামী হাতির জন্যই মারা যায়। তাই ভয় পাচ্ছিলাম, আমি পারবো কি না। কিন্তু পরিবারের জন্য আমার জীবনের নয় বছর সময় ওদের দেই, সাথে পেয়ে যাই বোমানের মতো সঙ্গীকে।

রঘুর সাথে বোমান-বেলির অপার্থিব মুহূর্ত সাধারণের কল্পনাতেই আসে না, ভেবে চিন্তে এসব দৃশ্য ক্যামেরায় ধরা পড়ে না। হাতি ও আদিবাসী দুই তরফের সম্পর্ককে বুনেছে এ তথ্যচিত্র। বহু শতাব্দী ধরে মানুষ আর বন্যপ্রাণীর এ সম্পর্ক ভিড়ের উদযাপন নয়, নিবিড় যাপনের কাহিনি। যে কাহিনিই ভারতকে প্রথম নিজস্ব অস্কার এনে দিয়েছে। তবে অস্কার পেয়েও থেমে থাকেনি হাতির প্রতি বোমান-বেলীর ভালোবাসা। তাদের কোলে এসেছে আরও এক চার মাসের ছোট্ট হাতির ছানা। অস্কারের হুল্লোড় ছেড়ে তাই আপাতত আরও এক হস্তীশাবককে পালন-পোষণ করায় মন দিয়েছেন এ মাহুত দম্পতি।

‘দ্য এলিফ্যান্ট হুইস্পারার্স’
        
        


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply