প্রলয় গ্যাংয়ের দুই সদস্যকে ‘সাময়িক বহিষ্কার’ করেছে ঢাবি

|

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ, অসদাচরণ ও শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে দুই শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কারের অনুমোদন দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক রিলেশন্স অফিস থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। সাময়িক বহিষ্কৃতরা হলো, দ্বিতীয় বর্ষ ২০২০-২১ সেশনের নৃ বিজ্ঞান বিভাগের মো. নাইমুর রহমান দূর্জয় (কবি জসিম উদ্দিন হল) ও একই সেশনের একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের শিক্ষার্থী সাকিব ফেরদৌস (স্যার এএফ রহমান হল)।

সাময়িক বহিষ্কারাদেশ।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ, অসদাচরণ ও শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে দুই শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কারের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সাত দিনের মধ্যে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদ্বয়কে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেনো স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না’ এর লিখিত জবাব দিতে বলা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যরাতের আতঙ্ক ‘প্রলয় গ্যাং’। বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের কিছু শিক্ষার্থীর সমন্বয়ে গড়ে ওঠা এ চক্রের সদস্যরা ছিনতাই-চাঁদাবাজী-মারামারিসহ জড়িয়েছে নানা অপরাধে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর জানিয়েছেন, এরইমধ্যে মূলহোতাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। অভিযুক্ত বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে বহিষ্কারাদেশও প্রক্রিয়াধীন। সম্প্রতি এক শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনায় মামলা হলে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ দুই শিক্ষার্থীকেই সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত জানালো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে নেয়া ছবি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ে অধ্য্যনরত দ্বিতীয় বর্ষের এসব শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ইভটিজিং এমনকি ব্ল্যাকমেইল করেও অর্থ আদায় করার। তারা নিজেদের পরিচয় দেন ‘প্রলয় গ্যাং’ এর সদস্য হিসেবে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, টিএসসি আর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় অবাধ বিচরণ তাদের। প্রকাশ্যে ছিনতাইসহ নানা অপরাধে জড়িত চক্রটি।

জানা গেছে, নিজেদের শক্তির জানান দিতে প্রায়ই দলবেধে মারামারিতে জড়ায় গ্যাংয়ের সদস্যরা। গত শনিবার (২৫ মার্চ) তুচ্ছ ঘটনার জেরে প্রলয় গ্যাংয়ের সদস্যরা বেধড়ক পেটায় অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জোবায়ের ইবনে হুমায়ূনকে। এর প্রতিবাদে পরের দিন ক্যাম্পাস থেকে গ্যাং সংস্কৃতি নির্মূূল ও জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মানববন্ধন করেন হামলার শিকার হওয়া জোবায়েরের সহপাঠীরা।

এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, একদিনে তৈরি হয়নি এ গ্যাং কালচার। অভিভাবকদেরও দায় আছে বলে মনে করেন ঢাবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রাব্বানী। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের হলভিত্তিক পরিচয় চিহ্নিত করেছি। বিধি মোতাবেক তাদের সংশ্লিষ্টতা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণের দিকে আমরা অগ্রসর হচ্ছি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কীভাবে ছিনতাই চাঁদাবাজিসহ গ্যাং কালচারে জড়াচ্ছে তার কারণ জানিয়ে অপরাধ বিজ্ঞানী ও ঢাবির ক্রিমিনোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান খন্দকার ফারজানা রহমান বলেন, ইচ্ছে না থাকলেও ওদেরকে রাজনৈতিক দলের মিছিল-মিটিং বা অন্য কর্মকাণ্ডে যেতে হয়। গণরুমগুলো কোনো না কোনো দল বা ব্যক্তির অধীনেই থাকছে। এগুলো যদি আমরা সমাধান করতে পারি তাহলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোনো গ্যাং কালচার থাকবে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এমন অপরাধে জড়িয়ে পড়া ঠেকাতে প্রশাসনকে আরও কঠোর হওয়ার তাগিদ সাধারণের।

/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply