ইউক্রেনীয় যুদ্ধবন্দিদের নির্বিচারে মৃত্যুদণ্ডের কয়েক ডজন প্রমাণ পেয়েছে জাতিসংঘ

|

ছবি: সংগৃহীত

কোনো ধরনের বিচার ছাড়াই ইউক্রেনীয় যুদ্ধবন্দিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের কয়েক ডজন মামলা নথিভুক্ত করেছে জাতিসংঘ। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে শুরু হওয়া রুশ আগ্রাসনে এ পর্যন্ত অসংখ্য ইউক্রেনীয় যুদ্ধবন্দিকে টর্চার সেলে রেখে অত্যাচারের পর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশন (ওএইচসিএইসআর)। তাদের রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, মানব ঢাল হিসাবে ইউক্রেনীয় যুদ্ধবন্দিদের ব্যবহার করা ছাড়াও, আহত বেশ কয়েকজন বেসামরিক ইউক্রেনীয়র মৃত্যু হয়েছে নির্যাতন ও চিকিৎসার অভাবে। খবর সিএনএনের।

শুক্রবার (২৪ মার্চ) প্রকাশিত রিপোর্টে ওএইচসিএইচআর জানিয়েছে, আগস্ট থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত গত ছয় মাসে ইউক্রেন সংঘাতে নির্যাতন, ধর্ষণ এবং নির্বিচারে আটকের মামলাসহ বেসামরিক হতাহতের হাজার হাজার মামলা তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রুশ ফেডারেশনের চলমান সশস্ত্র হামলায় সারা দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি এখনও ভয়াবহ। গত আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত ওএইচসিএইচআর’র মতে, ১৬০৫ জন ব্যক্তি নিহত হয়েছে, আহতের সংখ্যা ৪ হাজার ৩৮২। সেই সাথে বলা হয়েছে, হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা এরচেয়েও অনেক বেশি হতে পারে। কারণ, ওএইচসিএইচআর’র কাছে সকল তথ্য নথিভুক্ত করা সম্ভব হয়নি। মারিওপোল এবং লাইসিচানস্কে সংঘটিত যুদ্ধে হতাহতের পরিসংখ্যানও নেই সংস্থাটির হাতে।

প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, বিচার ছাড়াই মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ২১৪টি মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে। এর মাঝে ১৮৫ জন পুরুষ, ২৪ জন নারী এবং ৫ জন শিশু। ইউক্রেনের ভূখণ্ডে যেসব এলাকা রুশ ফেডারেশনের দখলে ছিল বা রয়ে গেছে, সেখানে জোরপূর্বক অন্তর্ধান এবং বেসামরিক নাগরিকদের নির্বিচারে আটকের ঘটনার আওতায় আছে এই ২১৪টি মামলা। রাশিয়ান সশস্ত্র বাহিনী কথিত ‘ফিলট্রেশন’ প্রক্রিয়ায় এসব নারী, পুরুষ ও শিশুদের আটক করে তাদের বাড়ি, কর্মক্ষেত্র, রাস্তা বা চেকপয়েন্ট থেকে। পরবর্তীতে মুক্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে ওসিএইচসিআর ৮৯ জনের সাক্ষাৎকার নিতে সক্ষম হয়েছিল, যাদের অধিকাংশই বন্দি অবস্থায় নির্যাতনের শিকার হওয়ার কথা জানিয়েছে।

আরও বলা হয়েছে, এসব টর্চার সেলে বন্দিদের লাঠি এবং রাইফেলের বাট দিয়ে প্রহার, তাদের হাত ও পায়ে গুলি করার হুমকি, নির্যাতনের মাধ্যমে শরীর বিকৃত করা; এমনকি মৃত্যুদণ্ডও কার্যকর করা হতো। ঘুমের অভাবে তাদের থাকতে হয়েছে দিনের পর দিন। কখনও কখনও বন্দিদের গায়ে ঢালা হয়েছে বরফ শীতল পানি। কয়েকজনকে ধর্ষণের হুমকিও দেয়া হয়।

ওএইচসিএইচআর রাশিয়ান সশস্ত্র বাহিনী এবং রাশিয়ার সিকিউরিটি সার্ভিস এফএসবি’র সদস্যদের দ্বারা বন্দি থাকাকালীন বারবার ধর্ষণের শিকার হওয়া এক ইউক্রেনীয় নারীর ঘটনা তুলে ধরেছে। সেই নারী জানান, তাকে এবং তার স্বামীকে চোখ বেঁধে পুরুষদের ঘাঁটিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। নিজেকে কমান্ডার হিসাবে পরিচয় দেয়া এক ব্যক্তি সেই নারীকে বলেছিলেন, তুমি এখনও কীভাবে ইউক্রেনকে ভালবাসো, আমাকে বলো। আমরা তোমার ভেতর থেকে ইউক্রেনের প্রতি ভালোবাসা শেষ করে দেবো।

/এম ই


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply