পিজ্জার শেফ হিসেবে ১৬ বছর পলাতক থেকে গ্রেফতার ইতালিয়ান মাফিয়া!

|

ছবি: সংগৃহীত

খুনের অপরাধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি এদ্গার্দো গ্রেসো নামের এক ইতালিয়ান মাফিয়া বস ২০০৬ সাল থেকে পলাতক থাকার পর ফ্রান্সে ধরা পড়েছেন। পিজ্জার শেফের ছদ্ম পরিচয়ে কমপক্ষে তিন বছর অতিবাহিত করার পর ফ্রান্সের সেন্ট এতিয়েন থেকে আটক হন এই মাফিয়া। কয়েক সপ্তাহ আগেই ধরা পড়েছিলেন আরেক ইতালিয়ান মাফিয়া মাতেও মেসিনা দেনারো। তিনিও পলাতক ছিলেন প্রায় ৩০ বছর। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।

মেসিনা দেনারোর মতো এদ্গার্দো গ্রেসোর বিরুদ্ধেও ঝুলছে ৯০’র দশকে খুনের মামলার শাস্তি। সিসিলির কুখ্যাত মাফিয়া গ্রুপ কোসা নস্ট্রার ‘বসদেরও বস’ ছিলেন মেসিনা দেনারো। আর, ইতালির দক্ষিণে ক্যালাব্রিয়া অঞ্চলের অপরাধী গ্রুপ দ্রাংগেতার সদস্য ছিলেন এদ্গার্দো গ্রেসো। বর্তমানে ইতালির অন্যতম শক্তিশালী মাফিয়া গ্রুপ হচ্ছে এই দ্রাংগেতা; যার ক্ষমতা ইউরোপ এবং দক্ষিণ আমেরিকায়ও রয়েছে।

৯০’র দশকে দুইটি মাফিয়া গ্রুপের সংঘর্ষে দুই ভাইকে খুনের অভিযোগ আনা হয় বর্তমানে ৬৩ বছর বয়সী গ্রেসোর বিরুদ্ধে। ১৯৯১ সালের জানুয়ারিতে কোসেঞ্জা শহরের একটি মাছের বাজারে স্টেফানো এবং গুইসেপ্পে বার্তোলোমেও নামের দুই ভাইকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রহার করা হয়। তাদের মৃতদেহ আর কখনই পাওয়া যায়নি। ধারণা হয় হয়, এসিডের মধ্যে ফেলে দেয়া হয়েছিল তাদের মৃতদেহ। গ্রেসো ছিলেন প্রতিপক্ষ গ্রুপের সদস্য। এই জোড়া খুনের বাইরেও একই শহরে আরও একটি খুনের অভিযোগ রয়েছে গ্রেসোর বিরুদ্ধে। ২০০৬ সালে অপরাধগুলোর ব্যাপারে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয় গ্রেসোর নামে। সেই থেকেই পলাতক ছিলেন এই মাফিয়া।

আট বছর পর ফ্রান্সে লিও’র দক্ষিণ পশ্চিমের শহর সেন্ট এতিয়েনে বসবাস শুরু করেন গ্রেসো। সেখানে একটি ইতালিয়ান রেস্টুরেন্টে পিজ্জার শেফের চাকরি নেন তিনি। নতুন পরিচয়, নতুন নাম তখন গ্রেসোর। নিজেকে পাওলো দিমিত্রিও বলে পরিচয় দেন তিনি। এরই মধ্যে ইতালিতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পান গ্রেসো। ইউরোপ জুড়েই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয় তার নামে।

নিজের নতুন চাকরিতে গ্রেসো এতটাই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন যে, স্থানীয় পত্রিকায় তিনি তার কয়েকটি রেসিপি নিয়ে হাজিরও হন। ঘরে তৈরি রাভিওলি, রিসোত্তো এবং তাগলিয়াতেল্লে নামক রেসিপি দিয়ে নিজ রেস্টুরেন্টের প্রসার আরও বৃদ্ধি করেন তিনি। ধূসর দাড়ি ও রোদচশমায় নতুন সাজে সজ্জিত গ্রেসোকে সেই প্রতিবেদনে ‘জন্মসূত্রে ইতালিয়ান কিন্তু আত্মার দিক থেকে খাঁটি সেন্ট এতিয়েনের স্থানীয়’ বলে পরিচয় দেয়া হয়।

ইতালির কারাবিনিয়ারির পুলিশ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, যেসব নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতেন গ্রেসো, ২০১৯ সাল থেকেই সে সব অনুসরণ করেই এই মাফিয়ার সন্ধান শুরু করে তারা। জানতে পারে, আল্পস পেরিয়ে সেন্ট এতিয়েন গিয়েছেন গ্রেসো। ইন্টারপোল জানিয়েছে, তাদের দ্রাংগেতা-বিরোধী অপারেশনও শুরু হয় এরমধ্যে। ফরাসি প্রশাসনও গ্রেসোর অবস্থান খুঁজে বের করতে নজরদারি বাড়িয়ে দেয়। ইতালির পুলিশ এরপরই গ্রেসোর পরিচয় নিশ্চিত করে এবং গ্রেফতারের অভিযান চালায়।

ইতালিয়ান অন্যতম কুখ্যাত এই অপরাধীকে গ্রেফতারে সক্ষম হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রশংসা করেছেন ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাতেও পিয়ান্তেদোসি। ক্যালাব্রিয়ার পুলিশ প্রধান রবার্তো ওচিউতো বলেন, সংগবদ্ধ অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পুলিশের প্রতিশ্রুতিকেই প্রতিফলিত করছে এই গ্রেফতারের ঘটনা।

/এম ই


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply