বিলুপ্ত হবে কাগজের বই, নাকি ই-বুকের সাথে সহাবস্থান?

|

তানভীর মৌসুম:

ডিজিটাল ডিভাইস সহজলভ্য হওয়ায় অনেকেই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন ই-বুকের ওপর। তবে বইয়ের এই ডিজিটাল ফরম্যাট কাগুজে বইয়ের বিলুপ্তি ঘটাবে কি না, তা নিয়ে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন মত। কেউ বলছেন, ভবিষ্যতের পৃথিবী পুরোটাই হবে কাগজবিহীন। আবার অনেকের মতে, কাগুজে বইয়ের আবেদন থাকবে চিরকাল।

তবে, অমর একুশে বইমেলা এলে কাগজের বইয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কার আপাতত কোনো অবকাশ থাকে না। অবশ্য, স্মার্টফোনসহ ডিজিটাল ডিভাইসের সহজলভ্যতার কারণে ই-বুকের প্রতি নির্ভরশীলতা কাগুজে বইয়ের বিলুপ্তি ঘটাবে কিনা, সে প্রসঙ্গে কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক বলেন, কিছু জিনিস আছে যা আবিষ্কারের পর আর উন্নতির প্রয়োজন পড়ে না। যেমন, চামচ, কাঁচি, চাকা। এগুলো মানুষ চিরকাল ব্যবহার করতে থাকবে। এর আর কোনো উন্নতি লাগবে না। বই তেমন একটি আবিষ্কার। মানুষ চিরকালই বই পড়বে। এআই (আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স) কী করবে আমরা জানি না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মানুষকেই লিখতে হবে। এখন তো দেখছি, মানুষকেও লিখতে হয় না। যন্ত্র লিখে দিচ্ছে। তারপরও, যন্ত্র তো মানুষেরই সৃষ্টি। আমি তাই বলবো, বই থাকবে।

লেখক ও সাংবাদিক মুনির হাসান বলেন, আমাদের প্রকাশকদের এক ধরনের দুর্বলতা হচ্ছে, তারা বইয়ের দাম নির্ধারণ করেন ফর্মা দিয়ে। আমার একটি বই লিখতে ছয় বছর লেগেছে। সেই বইয়ের দাম নির্ধারিত হওয়া উচিত বিষয়বস্তু দিয়ে। এই বইটা ৮০ পৃষ্ঠা কিনা, তা জরুরি নয়। আমাদের দেশে যারা কাগজের বই করেন, তারা কেন যেন ই-বুক করতে চান না! তারা করলে কিন্তু বিষয়টা আরও সহজ হতো। ই-বুক কিন্তু কাগজের বইকে খেয়ে ফেলবে না। আমাদের ভাবতে হবে যে, মানুষ দুটোই পড়বে।

প্রকাশকরা ই-বুকের অস্তিত্বকে হুমকি হিসেবে দেখছেন কিনা, সে প্রসঙ্গে প্রকাশক নূর-ই-মোনতাকিম আলমগীর বলেন, ভারতে প্রচুর কাগজের বইও বের হচ্ছে। আমরা যেটা করি, নিজেদের উত্তরণ ঘটাতে গিয়ে ঐতিহ্যকে মুছে ফেলি। এদেশে অনেক ই-বুক প্রতিষ্ঠান আছে। তাদের সাথে সমন্বয় করতে হবে।

প্রকাশক রবিন আহসানের মতে, ই-বুকের একচেটিয়া আধিপত্য কেবলই সময়ের ব্যাপার। তিনি বলেন, এখনকার বাচ্চারা তো ভিডিওতেই সব শিখছে। তারা সম্ভবত কাগজবিহীন একটি বাস্তবতায় বড় হবে। মুদ্রিত বইয়ের ভবিষ্যৎ বেশ খারাপ। অডিও বুক, ভিডিও বুক, অনলাইন বুকের ভবিষ্যৎ ভালো।

অন্যদিকে, লেখক ও প্রকাশক শেহজাদ আমান বলেন, ই-বুক করলে পাঠক কমে যাবে বা, ব্যবসা কমে যাবে- এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। আমার মনে হয়, লেখক ও প্রকাশকদের পক্ষ থেকে বৈধভাবে যদি ই-বুককে আরও সমৃদ্ধ করা হয় তবে পাঠকের সংখ্যা আরও বাড়বে।

সময়ের তারতম্যের কারণে নির্ধারিত হচ্ছে মাধ্যম ও সহজলভ্যতা। তার মাঝেও টিকে থাকার লড়াই করে চলে ঐতিহ্য। তাই, কাগজের বই বিলুপ্ত হবে নাকি ই-বুকের সাথে সহাবস্থান বজায় রাখবে সেটি সময়ই বলে দেবে।

/এম ই


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply