‘তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন দ্রুত পাশ করতে অগ্রণী ভূমিকা রাখব’

|

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন দ্রুত পাশ করতে অগ্রণী ভূমিকা রাখবেন বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান।

বুধবার (২৫ জানুয়ারি ২০২৩) বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ডেভেলপমেন্ট অরগনাইজেশন অব দ্য রুরাল পুয়র (ডর্প) সিরডাপ মিলনায়তনে ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ২০৪০ সালের পূর্বেই তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে নীতিনির্ধারকদের কাছে প্রত্যাশা’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে তিনি এই কথা জানান।

তিনি বলেন, জনস্বাস্থ্যকে প্রাধান্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন এবং এফসিটিসি’র সাথে সামঞ্জস্য করে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে সংশোধনের অঙ্গীকার করেছেন। তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেম ওয়ার্ক কনভেনশন অন টোবাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি)’র সাথে সামঞ্জস্য রেখে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে সংশোধনের অঙ্গীকার করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি যুগোপযোগী করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে খসড়া তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন কমিটি করা হয়েছে, যার মাধ্যমে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ (২০১৩ সালে সংশোধিত) অধিকতর শক্তিশালীকরণের লক্ষ্যে খসড়া সংশোধনী প্রস্তুত, ওবেসাইটে প্রকাশ এবং অংশীজনের মতামত গ্রহণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। চূড়ান্ত খসড়াটি বর্তমানে মন্ত্রীপরিষদে পর্যালোচনার পর্যায়ে রয়েছে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, এরই পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের খসড়া প্রস্তুত ও প্রয়োজন মাফিক তার সংশোধন করেছে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের খসড়া সংশোধনীতে যেসব প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এগুলো হলো- সব পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান’ রাখার বিধান বিলুপ্ত করা, বিক্রির স্থানে তামাকজাত দ্রব্যের প্রদর্শন বন্ধ করা, তামাক কোম্পানিগুলোর সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচি (সিএসআর) বন্ধ করা, বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা বিক্রি বন্ধ করা, ই-সিগারেট আমদানি বাজারজাত বন্ধ করা এবং তামাকজাত পণ্যের মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণীর আকার বাড়ানো। তিনি আরও বলেন, এই আইনে তামাকের প্রসার রোধে যুক্তিসঙ্গত প্রস্তাবগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং আজকের আলোচনা থেকে এটা পরিষ্কার যে দ্রুত আইনটি পাস হলে তামাকজাত পণ্য সেবনের হার অনেকাংশে কমে আসবে।

তিনি বলেন, আমরা জানি সিগারেট ও অন্যান্য তামাকপণ্য সেবন করাতে বিভিন্ন স্বাস্থ্যঝুঁকি হয়। তামাকের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করতে প্রচারণা বাড়াতে হবে।

সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, সকল পক্ষকে তামাকের বিকল্প করের খাত তৈরিতে সচেষ্ট হতে হবে। প্রস্তাবিত সংশোধনগুলোকে সাধুবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, খসড়া তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে যেসকল ইতিবাচক সংশোধন আনা হয়েছে সেগুলো তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকারকে অচিরেই বাস্তব রূপ দেবে বলে আমি মনে করি।

অতিরিক্ত সচিব জনাব কাজী জেবুন্নেছা বেগম বলেন পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতি সম্পর্কে এখনো সাধারণ জনতা অসচেতন তাই এর বিরুদ্ধে প্রচারণা বাড়াতে হবে। তামাক চাষ বন্ধ না করা হলে তামাকজাত পণ্যের ব্যবহার রোধ করা কষ্টসাধ্য হবে। সংশোধিত খসড়া তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি দ্রুত পাশ করে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাকে বাস্তবায়িত করতে নীতিনির্ধারকরা সচেষ্ট হবেন বলে প্রত্যাশা করছি। এই আইনটির সপক্ষে জনসমর্থন গড়ে তুলতে আমরা সবাইকে নিয়ে অগ্রসর হব।

জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল সমন্বয়কারী হোসেন আলী খোন্দকার বলেন, সরকারের উচ্চপর্যায়ের উচিত সংশোধিত খসড়া তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন পাশ ও কার্যকর করতে এখনই উদ্যোগ নেয়া দরকার। এখনই যদি তামাকের কুপ্রভাব এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে সরকার সচেতন হয় তাহলে অনেক প্রাণ বিশেষ করে কিশোর-কিশোরী ও তরুণসমাজ রক্ষা পাবে। আইনটির কঠোর প্রয়োগ অল্পবয়সে তামাকজাত পণ্য সেবন নিরুতসাহিত করবে বলে আমি মনে করি।

হোসেন আলী খোন্দকার আরও বলেন, যদিও তামাকজাত পণ্যের ওপর প্রতিবছর কর হার বাড়ানো হয়, এরপরও তামাক কোম্পানিগুলো ক্রমাগত লাভ করে যাচ্ছে। প্রতিবছর কর হার বাড়ছে ঠিকই, সেই সাথে পাল্লা দিয়ে তামাক কোম্পানির আয়ও বেড়েছে। এটি রোধ করতে কর হার বাড়িয়ে তামাকজাত পণ্য সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে নিয়ে যেতে হবে।

জাতীয় সেমিনারটির উদ্বোধনী বক্তব্যে ডর্প’র প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী জনাব এএইচএম নোমান বলেন, তামাকজাত পণ্যের প্রাদুর্ভাব রোধ করতে বর্তমান সরকার কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ নিয়েছে এবং সেই ধারা বজায় রেখেই সংশোধিত খসড়া তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি দ্রুত পাশ হবে।

ডর্পের নির্বাহী উপদেষ্টা ও সাবেক সচিব মো. আজহার আলী তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) কাজী জেবুন্নেসা বেগম, সমন্বয়কারী (অতিরিক্ত সচিব) হোসেন আলী খোন্দকার, বিসিআইসির সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান, ডর্পের প্রতিষ্ঠাতা সিইও এএইচএম নোমান প্রমুখ।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply