‘ক্রিকেট ভদ্রলোকের খেলা এর বড় উদাহরণ হাশিম আমলা’

|

ছবি: সংগৃহীত

দিন কয়েক আগেই ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন প্রোটিয়া তারকা হাশিম আমলা। মাঠের ক্রিকেটে অজস্র রান আর রেকর্ড নিজের নামে থাকলেও সব পরিসংখ্যান ছাপিয়ে তিনি ছিলেন নিপাট এক ভদ্রলোক। ক্রিকেট যে ভদ্রলোকের খেলা তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ হিসেবে ছিলেন হাশিম আমলা। শান্ত চরিত্র এবং দৃঢ় ব্যক্তিত্বের আমলাকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছেন অনেক ক্রিকেটার।

বাইশ গজের খেলায় ব্যাট নামক তুলি দিয়ে যিনি আঁকতেন মায়াবী আলপনা। ওই ব্যাটকেই যিনি কলম বানিয়ে রেকর্ড বইয়ের অসংখ্য পাতায় রেখে গেছেন নানান কীর্তির স্বাক্ষর। সেই আমলা ক্রিকেট নামক অধ্যায়টার ইতি টেনেছেন।

মুখ ভর্তি দাঁড়ি
, কেশহীন মাথা আর এক টুকরো হাসিমাখা মুখের নিপাট ভদ্রলোক। বিতর্ক, বিবাদ কখনোই যাকে করতে পারেনি স্পর্শ। ভদ্রলোকের খেলা ক্রিকেট আর কোনো সন্দেহ ছাড়াই সেই ভদ্রলোকের তালিকায় ওপরের সারিতেই থাকবে হাশিম আমলার নাম।

ছবি: সংগৃহীত

ক্যারিয়ারজুড়ে অর্জন করেছেন মানুষের ভালবাসা। অজস্র রান পেয়েছেন, গড়েছেন অসংখ্য রেকর্ড। তবে শুধু পরিসংখ্যান দিয়ে তার মূল্যায়ন করা চলে না।

দক্ষিণ আফ্রিকার পারফরম্যান্স অ্যানালিস্ট প্রসন্ন অ্যাগোরামের মতে, তার দেখা ‘সেরা মানুষ’ হাশিম আমলা। এবি ডি ভিলিয়ার্স, যিনি ক্রিকেট জীবনে এই আমলার কাছেই নিজেকে সবচেয়ে বেশি নিরাপদ মনে করতেন। অ্যাগোরাম, ডি ভিলিয়ার্সের মতোই অনেকের কাছেই আমলা আদর্শ। তাকে দেখেই অনুপ্রাণিত হয়ে ক্রিকেটে হাতেখড়ি করেছিলেন, ইংল্যান্ডের মঈন আলী। এই অনুপ্রাণিতের তালিকাটা অনেক লম্বা।

ছবি: সংগৃহীত

এই প্রোটিয়া তারকাকে দেখেই প্রথম দাঁড়ি রাখা শুরু করেছিলেন পাকিস্তানি আম্পায়ার আলিম দার। প্রোটিয়া গতিতারকা ডেল স্টেইন তো একবার বলেছিলেন, আমার যখন অনুপ্রেরণার দরকার হয়, তখন আমি আমার বামপাশে ঘুরে তাকাই, আর দেখি হাশিম আমলা কোরআন পড়ছেন।

যদিও ক্রিকেটের সাথে কখনোই তিনি ধর্ম টানেননি, মেলাননি। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, আমি ক্রিকেট খেলি সেটা আমার দায়িত্ব। আর আমি ধর্ম পালন করি, সেটা আমার কর্তব্য।

অস্ট্রেলিয়ার ধারাভাষ্যকার ডিন জোন্স তাকে দাঁড়ির কারণে ‘সন্ত্রাসী’ বলে হেয় করেছিলেন। তবুও তাঁকে ক্ষমা করে দিয়ে মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছিলেন হাশিম আমলাা। বলেছিলেন, আমি তো মুসলিম, আর মুসলিমের কাজই তো কেউ ক্ষমা চাইলে, তাকে ক্ষমা করা।

ছবি: সংগৃহীত

২০১২ সালে ওভাল টেস্টের সময় রোজা রেখেই খেলেছিলেন ৩১১ রানের মহাকাব্যিক এক ইনিংস। ৫২৯ বল মোকাবেলা করেছিলেন রোজা রেখেই।

একজন ধর্মভীরু হিসেবে সবসময়ই তিনি ছিলেন ক্রিকেটের একজন খাঁটি মানব। দক্ষিণ আফ্রিকার জার্সিতে স্পন্সর প্রতিষ্ঠান হিসেবে অ্যালকোহলের লোগো লাগানো ছিল বাধ্যতামূলক। তবে, নিজের জার্সিতে কখনোই তিনি সেই লোগো ব্যবহার করেননি। যার জন্য দিনের পর দিন নিজের বেতন থেকেই দিয়ে গেছেন ক্ষতিপূরণ।

ক্রিকেট বইয়ে আমলার অজস্র রেকর্ড থাকবে চিরকাল, তবে, বাইশ গজের অন্যরকম এক ব্যক্তিত্ব হিসেবে ক্রিকেটপ্রেমিদের হৃদয়ে থাকবেন তিনি থাকবেন বিশেষভাবে।

/আরআইএম


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply