মাঝ রাস্তায় রফতানি খাতের পোশাক চুরি, বিদেশে যাচ্ছে ঝুট ও বালুভর্তি কার্টন

|

আশিক মাহমুদ:

কিছুতেই ঠেকানো যাচ্ছে না রফতানি খাতের পোশাক চুরি। অভিনব পদ্ধতিতে রাস্তার মাঝ থেকে গায়েব হয়ে যাচ্ছে কাভার্ডভ্যানের এক-তৃতীয়াংশ পণ্য। চুরি করা পণ্যের বদলে ঝুট বা বালু ভরে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে বিদেশে। এতে দেশের ভাবমূর্তি যেমন নষ্ট হচ্ছে, তেমনি ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়ছে দেশের পোশাক শিল্প খাত।

ব্রাজিল থেকে পাঠানো একটি ভিডিও যমুনা নিউজের কাছে আসে। গত ৬ জানুয়ারি পাঠানো ওই ভিডিওতে দেখা যায়, বায়ার একে একে পোশাকের কার্টন খুলছেন। যার কোনোটি খালি, আবার কোনোটিতে পণ্য আছে অর্ধেক। এমন ঘটনা গত কয়েক বছরে ঘটেছে প্রায় শতাধিক।

গেলো বছরের ডিসেম্বরে কাভার্ডভ্যান বোঝাই কোটি টাকার পোশাক জার্মানির উদ্দেশে পাঠায় সেলিব্রেটি এক্সপোর্ট গার্মেন্টস লিমিটেড। কিন্তু কাভার্ডভ্যানটি ডেমরার একটি প্যাকেজিং কারখানায় নিয়ে যায় চালক। যদিও সে যাত্রায় সফল হতে পারেনি চোর চক্র। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সেখানে হানা দেয় র‍্যাব-৪ এর একটি দল। সে সময় হাতে-নাতে আটক করা হয় কাভার্ডভ্যানের চালকসহ চোর চক্রের ৭ জনকে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রফতানি পোশাক চুরি চক্রের অন্তত ১০টি গ্রুপ ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা ও চট্টগ্রামে সক্রিয় রয়েছে। কার্ভাডভ্যানের চালক, কিছু অসাধু গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ও বন্দরের কর্মকর্তারাও এ চক্রের সঙ্গে জড়িত। আটককৃতদের মধ্যে হিমেল ওরফে দুলাল, সিরাজুল ইসলাম ও তাওহিদুল কাউছার ভিন্ন ভিন্ন গ্যাং পরিচালনা করতো।

এ প্লাস গ্রুপের এমডি তমিজ উদ্দিন বলেন, ৬ জানুয়ারি বিদেশি বায়ারদের কাছ থেকে আমরা কিছু ভিডিও ক্লিপ পাই। সেখানে ওরা ইনভেস্টিগেশন বা ইন্সপেকশন করছে মালামালগুলো। কার্টন খুলে বেশকিছু তারা খালি পেয়েছে। আর কিছু কার্টনে যেখানে ১০ পিস পোশাক থাকার কথা, সেখানে দেখা গেছে ৩ পিস বা ৭ পিস।

ট্রেন্ড এন স্টাইল লিমিটেডের এমডি আবু মোহাম্মদ খান বলেন, এ ধরনের ঘটনা আমাদের জন্য কাম্য নয়। এটি আমাদের জন্য খুবই কষ্টের এবং লজ্জাজনক।

সেলিব্রেটি এক্সপোর্ট গার্মেন্টস লিমিটেডের এমডি শরিফ আহমেদ বলেন, এমন অবস্থায় বায়ার আমাকে যা বলবে তাই মেনে নিতে হবে। কারণ তার সাথে আমি ব্যবসা করবো।

র‍্যাব-৪ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ আব্দুর রহমান বলেন, এখন পর্যন্ত যাদের গ্রেফতার করেছি, তাদের অতীত ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখেছি, এরা কোনো না কোনোভাবে পোশাক শিল্পের সাথে জড়িত ছিল। তাদের সাথে যে গার্মেন্টেসের পণ্য চুরি হচ্ছে সেই গার্মেন্টেসের কর্মচারী বা অন্য কারও সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা তা তদন্ত করে দেখছি। আমরা খুব শিগগিরই হয়তো টোটাল চেইনটা জানতে পারবো।

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) পরিচালক রাজিব চৌধুরী বলেন, এমন আসামিদের সাধারণ চুরির মামলা দেয়া উচিত না। এদের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহী মামলা হওয়া উচিৎ। কারণ, যারা এ কাজের সাথে জড়িত, তারা শুধু একটা কারখানার ক্ষতি করছে না, বাংলাদেশের সম্পদের ক্ষতি করছে।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, এটা কোনোভাবেই আমরা মেনে নিতে পারছি না। রাস্তার মধ্যে গাড়িগুলো কোথাও নিয়ে গিয়ে, গাড়ি থেকে মালামাল বের করে নিয়ে যাবে। এরপর এটা বায়ারের কাছে গেলে তা তো আমাদের মানসম্মানের প্রশ্ন, অস্তিত্বের প্রশ্ন এখানে।

এ ব্যাপারে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, যারা এ অভিযোগ করেছেন বা যারা এ সমস্যায় ভুগছেন তারা বাণিজ্য ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গিয়ে যদি সমাধান না পায়, তাহলে আইন মন্ত্রণালয়ে এলে অবশ্যই ব্যাপারটা দেখবো। এ সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করবো।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এভাবে রফতানি পোশাক চুরি হতে থাকলে ধ্বংস হয়ে যাবে দেশের গুরুত্বপূর্ণ এ খাত। চোর চক্রের মূল উৎপাটনে অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে ভুক্তভোগীরা।

/এএআর/এমএন


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply