বিস্মৃতির পথে ভাবের গান ভাওয়াইয়া, শিল্পীদের পেশা বদল

|

হারিয়ে যাচ্ছে ভাওয়াইয়া গান।

হারিয়ে যাচ্ছে রংপুরের মাটির গান ভাওয়াইয়া। পরিবর্তিত সময়ে পূর্বের জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে না পারা এবং, আর্থিক নিশ্চয়তা না থাকায় ভিন্ন পেশায় ঝুঁকছেন শিল্পীরা। ফলে ঐতিহ্যবাহী ভাবের গানের কথা ও সুর থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শ্রোতারা।

কর্মব্যস্ততা ফুরালে উদাস মনের ব্যাকুলতা ভাষা পায় কখনও কখনও। দরদী কণ্ঠে জীবনের অপ্রাপ্তি খুঁজে পায় সুর; হয়ে ওঠে গীতিকাব্য। ভাবের গান হিসেবে ভাওয়াইয়ার সুখ্যাতি পুরনো। দূর পরবাসী বন্ধু, রাগ-অনুরাগ, কিংবা নদীর বানে সব হারানোর হাহাকারকে রূপ দিয়ে এসেছে এই গান।

স্কুল জীবন থেকে কণ্ঠে ভাওয়াইয়ার সুর তোলেন নদীয়া কিশোর রায়। এক সময় তার দিন ফুরাতো কেবল গানে মজে। সময় গড়িয়েছে, সঙ্গী হয়েছে সংসারের চাপ। ভাঙা মন মেরামতের পাশাপাশি এখন যন্ত্র মেরামতেই কেটে যায় তার দিনের বেশিরভাগ সময়। এই ভাওয়াইয়া শিল্পী জানান, কিছু বিষয় কখনোই পুরনো হয় না। যা পেয়েছেন তাতেই তিনি বেশ আনন্দিত।

ভাওয়াইয়া শিল্পী নদীয়া কিশোর রায়।

দিনে দিনে ভাওয়াইয়া গানের আবেদন কমেছে। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সঙ্গীত প্রিয়দের কাছে আগের মতো আর আবেদন নিয়ে আসতে পারছে না এই গান। ভাওয়াইয়া শিল্পীদের মতে, যন্ত্রের আগমনে কমে যাচ্ছে ভাওয়াইয়া গানের মান।

ভাওয়াইয়া সম্রাট হিসেবে পরিচিত আব্বাস উদ্দিন। রংপুরের ‘ভাওয়াইয়া অঙ্গন’এ তার নামে একটি মঞ্চ রয়েছে। গানের মতোই কোনোমতে টিকে থাকার লড়াই করে যাচ্ছে মঞ্চটি। ভাওয়াইয়া গবেষক এ কে এম ফজলুর রহমান বলেন, ভাওয়াইয়া গানকে সর্বস্তরের মানুষের কাছে জনপ্রিয় করতে গেলে এমন কথা লিখতে হবে, এমন সুর সৃষ্টি করতে হবে যা মানুষের মনকে আলোড়িত করবে। আমরা সেই ধরনের গান খুব বেশি রচনা করতে পারছি না। এইদিকে মনোযোগী হওয়া দরকার।

‘ভাওয়াইয়া অঙ্গন’এ আব্বাস উদ্দিন মঞ্চ।

বাংলাদেশের রংপুর, ভারতের কুচবিহার এবং আসাম অঞ্চলে এক সময় দারুণ জনপ্রিয় ছিল ভাওয়াইয়া গান। বলা হয়ে থাকে, কখনও শিল্পীর দরদ, কখনও গানের কথা, আবার কখনও সুরের জন্যই হৃদয়ে আসন করে নেয় এই গান। এই সময়ে ভাওয়াইয়া গানের ক্ষেত্রে এই উপাদানগুলোর সংকট চলছে বলে অভিযোগ করেছেন অনেকেই। তাই, পরবর্তী প্রজন্মের কাছে ভাওয়াইয়া গানকে ছড়িয়ে দিতে দরকার এর চর্চা। এর সাথে দরকার, ভাওয়াইয়া গানের সাথে সংশ্লিষ্টদের আর্থিক নিরাপত্তার দিকটিও।

/এম ই


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply