কলসিন্দুরে এখন শুধু কান্নার শব্দ

|

হোসাইন শাহীদ, ময়মনসিংহ

আজ তার বাফুফে ভবনের ক্যাম্পে থাকার কথা ছিলো। কিন্তু সাবিনা এখন সেই ক্যাম্প থেকে যোজন যোজন দুরে, সমাহিত কলসিন্দুরের নিভৃতে। দুই দিনের জ্বর কেড়ে নিয়ে গেছে তাকে। সাবিনার এমন অসময়ে চলে যাওয়ায় স্তম্ভিত করেছে সবাইকে। সেই স্তব্ধতা ভেদ করে ভেসে আসছে কান্নার রোল। ময়মনসিংহের কলসিন্দুর এখন এক শোকার্ত জনপদ। ফুটবলকন্যাদের সাথে পুরো গ্রামের মানুষ কিছুতেই এই মৃত্যুর হিসাব মিলাতে পারছেন না।

বুধবার সকালে ময়মনসিংহের ধোবাউরা উপজেলার কলসিন্দুর গ্রামের গিয়ে দেখা যায় শোকে আঁধার হয়ে এসেছে গোটা গ্রাম। চারিদিকে স্বজন, পাড়া প্রতিবেশি আর সাধারণ মানুষের আহাজারি প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরছে। ফুটবলার সাবিনার মৃত্যু কিছুতেই মানতে পারছে না তারা। কলসিন্দুর স্কুল এন্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মালা রানী সরকার বলেন, দুয়েকদিনের জ্বরে কেউ মারা যায়, এমনটা কখনো দেখননি। শেষ সময়  সাবিনার পাশে ছিলেন জাতীয় দলের আরেক খেলোয়াড় তহুরা। তিনি জানান, জ্বরের সাথে সাথে পিঠ ও ঘাড়ে প্রচণ্ড ব্যাথা ছিলো সাবিনার। হাসপাতালে নেয়ার পথেই মারা যায় সে।

যেসব নক্ষত্ররাজি নিয়ে বিশ্বজয়ের স্বপ্ন দেখেছিলেন কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন, সেখান থেকে একটি তারকার এমন পতন স্তম্ভিত করেছে তাকেও। বলেন, সাবিনার মৃত্যু দেশের নারী ফুটবলারের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।

৯ বছর আগে বাবা সেলিম মিয়ার মৃত্যুর পর কৃষক মামার বাড়িতেই থাকতেন ঘর, জমিহীন সাবিনা, তার বড়বোন, ছোট ভাই ও তার মা। জানাজায় অংশ নিতে আসা ময়মনসিংহ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক  সাজ্জাদ জাহান চৌধুরী বলেন দারিদ্র্য, অবহেলা ও অসচেতনতা যেন কলসিন্দুরের আর কোনো ফুটবলারের জীবন কেড়ে না নেয়।

জানাজায় এসে কান্নায় ভেঙ্গে পরেন কলসিন্দুরের মেয়েদের গড়ে তোলার নেপথ্যের কারিগর, শিক্ষক ও কোচ  মফিজ উদ্দিন। তার ভাষায় বাংলাদেশ ভবিষ্যতের জাতীয় দলের অন্যতম এক সদস্যকে হারালো। বাড়ি ফিরে জয়ের আনন্দে চিৎকার চেচামেচিতে গ্রামের যে মেঠো পথ মাতিয়ে রাখতো তহুরা, সানজিদারা । আজ সেই পথ দিয়ে চোখের জলেই সতীর্থকে শেষ বিদায় জানালো তারা।

যমুনা অনলাইন: এইচএস/টিএফ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply