এমবাপ্পের ঝলকে কোয়ার্টার ফাইনালে ফ্রান্স

|

ছবি: সংগৃহীত

শুরুর একাদশে নেমেছেন, গোলও করেছেন- এমন কোনো ম্যাচ হারেনি ফ্রান্স। বলা হচ্ছে কিলিয়ান এমবাপ্পের কথা। পোল্যান্ডের বিপক্ষেও দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচে এমবাপ্পে অনুমিতভাবেই ছিলেন সেরা একাদশে। পোলিশ রক্ষণে কাঁপন ধরানোর পাশাপাশি জোড়া গোলও করেছেন এই ফরাসি ফরোয়ার্ড। সেই সাথে, অলিভিয়ের জিরুর রেকর্ড সৃষ্টিকারী গোলে পোল্যান্ডকে ৩-১ গোলে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। পোল্যান্ডের পক্ষে অতিরিক্ত সময়ে পেনাল্টিতে সান্ত্বনাসূচক গোলটি করেছেন রবার্ট লেভানদোভস্কি।

প্রথমার্ধ জুড়ে ফ্রান্সের একাধিপত্য ছিল না, যতটা ছিল দ্বিতীয়ার্ধে। নকআউট পর্বের আমেজ ছিল এই ম্যাচের শুরু থেকেই। আল থুমামা স্টেডিয়ামে ম্যাচের ৭ মিনিটে দারুণ দক্ষতায় গতি বৃদ্ধি করেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। গোলপোস্টের দূরের প্রান্তে ডেম্বেলের উদ্দেশে করা সেই ক্রস আয়ত্তে নিয়ে ডান পায়ে শট নেন ডেম্বেলে। তবে পোলিশ ডিফেন্ডার কর্নারের বিনিময়ে কোনোমতে রক্ষা করেন সে যাত্রা।

ম্যাচের ২০ মিনিটে লেভানদোভস্কির বাঁ পায়ের শট অল্পের জন্য পোস্ট মিস করে। সময়ের অন্যতম সেরা এই স্ট্রাইকার ম্যাচের ৩১ মিনিটে সুবিধাজনক জায়গায় ফ্রি কিক পেয়েছিলেন। তবে দলকে লিড এনে দিতে পারেননি লেভা।

পোল্যান্ডের আক্রমণকে রুখে দিতে ৩৭ মিনিটে ট্রিপল সেভের দরকার হয় ফ্রান্সের! বামপ্রান্ত দিয়ে করা আক্রমণ থেকে ডি বক্সে ফাঁকায় বল পেয়ে যান আগুয়ান পিতর জেলেনস্কি। কিন্তু তার জোরালো শট রুখে দেন হুগো লরিস। ফিরতি বলে আবার গোল অভিমুখে শট নেন জেলেনস্কি। এবার গোল লাইন থেকে ফ্রান্সকে রক্ষা করেন থিও হার্নান্দেজ। এবার ফিরতি বলে শট নেন জাকুব কামিনস্কি। সেটাও ফ্রান্সের রক্ষণ দুর্গে প্রতিহত হয়। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই একাধিক গোলের সুযোগ সৃষ্টি করেও এগিয়ে যেতে পারেনি পোল্যান্ড।

আর এর কিছুক্ষণ পরই ইতিহাস গড়েন অলিভিয়ের জিরু। কিলিয়ান এমবাপ্পের ডিফেন্স চেরা পাস থেকে দারুণ ফিনিশিংয়ে বল জালে জড়িয়ে জিরু হয়ে যান ফ্রান্সের ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতা।

গতি ও দক্ষতা দিয়ে বেশ ক’বারই পোল্যান্ডের রক্ষণ দেয়ালে ফাটল সৃষ্টি করেছেন এমবাপ্পে। ৩৫ মিনিটে ম্যাটি ক্যাশকে ঘোল খাইয়ে ছাড়া এই ফরোয়ার্ডের বাম পায়ে নেয়া শট শেজনির ডান পাশ দিয়ে চলে যায় পোস্টের বাইরে। তবে ঠিকই গোল পেয়েছেন এমবাপ্পে। তাও একটি নয়, দুইবার।

আক্রমণটা ছিল পোল্যান্ডেরই। দ্বিতীয়ার্ধে ফ্রান্সের ডি বক্সে বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে গ্রিজমান লম্বা বল বাড়ান অলিভিয়ের জিরুর উদ্দেশে। দুই ডিফেন্ডারকে দারুণভাবে বোকা বানিয়ে জিরু ডানপ্রান্তে বল বাড়ান ডেম্বেলের দিকে। ডেম্বেলে বল বাড়ান বামপ্রান্তে, এমবাপ্পের উদ্দেশে। জিরুর বুদ্ধিদীপ্ত মুভমেন্টে তখন ডিফেন্ডাররা যখন নিয়েছে তার পিছু, তখনই ফাঁকায় বল পেয়ে যান এমবাপ্পে। ডান পায়ের জোরালো শটে তিনি পরাস্ত করেন পোলিশ গোলরক্ষক শেজনিকে। এর মাধ্যমেই চলতি বিশ্বকাপে চতুর্থ গোল করে গোল্ডেন বুটের লড়াইয়ে সবার আগে চলে যান এমবাপ্পে।

এর মাধ্যমে আরও একটি দারুণ রেকর্ডেও নিজের নাম লেখালেন এমবাপ্পে। পর্তুগিজ কিংবদন্তি ইউসেবিওকে (২৪ বছর ১৮২ দিন) টপকে সর্বকনিষ্ঠ (২৩ বছর ৩৪৯ দিন) খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপে ৮টি গোলের মালিক হলেন ফরাসি এই ফরোয়ার্ড।

ব্যবধান রচনা করতে পারলেন না লেভানদোভস্কি। ছবি: সংগৃহীত

তবে তখনও এমবাপ্পে প্রদর্শনীর বাকি ছিল। অতিরিক্ত সময়ের প্রথম মিনিটে ডি বক্সের বামপ্রান্তে বল পেয়ে ট্রেডমার্ক শটে আরও একবার শেজনিকে পরাস্ত করেন এমবাপ্পে। চলতি বিশ্বকাপে এটি এমবাপ্পের ৫ম গোল। এছাড়া, ফ্রান্সের জার্সিতে সবশেষ ১৪ ম্যাচে ১৬ তম গোল করলেন বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সেরা এই ফুটবলার।

ম্যাচের অন্তিম সময়ে যখন ফলাফল নির্ধারিতই হয়ে গিয়েছে, তখন পেনাল্টি পায় পোল্যান্ড। রবার্ট লেভানদোভস্কির শট হুগো লরিস ঠেকিয়ে দিলেও শট নেয়ার সময় গোল লাইনের সামনে লরিস চলে আসায় সেই সেভ কোনো কাজে আসেনি। আবারও পেনাল্টি নেন লেভা। এবার আর গোল করতে তার ভুল হয়নি। সান্ত্বনাসূচক গোলটি নিয়ে বিদায় নিলো পোল্যান্ড। আর বিশ্বকাপ ইতিহাসে নিজের নাম আরও একবার লেখে দলকে শেষ আটে নিয়ে গেলেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। সেখানে ফ্রান্স লড়বে ইংল্যান্ড ও সেনেগালের মধ্যকার বিজয়ী দলের বিরুদ্ধে।

/এম ই


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply