আদালত প্রাঙ্গণ থেকে জঙ্গি ছিনতাই বিশ্বে নেতিবাচক বার্তা দেবে: বিশ্লেষকদের মত

|

রিয়াজ রায়হান:

আদালত এলাকা থেকে জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনা আন্তর্জাতিক বিশ্বে নেতিবাচক বার্তা দেবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। আসামি ছিনতাইয়ের এমন কৌশল ভাবাচ্ছে তাদের।

বিশ্লেষকরা বলছেন, অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা না নেয়ার ফলেই এমন ঘটনা। উগ্র মতবাদে দীক্ষিতদের সাধারণ ব্যবস্থায় স্বাভাবিক পথে ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয় বলে মনে করেন গবেষকরা। আর দুর্ধর্ষ আসামিদের আদালতে হাজিরের ক্ষেত্রে আইন সংশোধন প্রয়োজন বলে জানান আইনজীবীরা।

৯ বছর আগেও এমন ঘটনা ঘটেছিল। ২০১৪ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি পুলিশের প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে তিন জঙ্গিকে ছিনতাই করে সহযোগীরা। কাশিমপুর কারাগার থেকে ময়মনসিংহ আদালতে নেয়ার পথে সহযোগীরা গুলি, বোমা মেরে ছিনিয়ে নিয়ে যায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গি সালেহীন, রাকিক এবং যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত মিজান ওরফে বোমারু মিজানকে। যে ঘটনার পর এখনও লাপাত্তা জঙ্গি সালেহীন।

এবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলেও ধরনটা ভিন্ন। গুলি-বোমার বদলে স্প্রে। এই ভিন্ন কৌশলই এখন ভাবনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

গেলো কয়েক বছর ধরে অপরাধ আর অপরাধীর ধরন, কৌশল নিয়ে কাজ করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান খন্দকার ফারজানা রহমান। বললেন, একটি নির্দিষ্ট আদর্শের অনুসারীদের সাধারণ প্রক্রিয়ায় মোকাবেলা খুব একটা ফল দেয় না। সবসময় মনে রাখতে হবে, এটি একটি সংঘবদ্ধ অপরাধ। যিনি হয়তো ধরা পড়েছেন, তার বাইরেও আর ১০-১৫ জন শুভাকাঙ্ক্ষী আছে। যারা কোনো না কোনোভাবে তাকে আইনের এ বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে নেয়ার চেষ্টা সবসময় করবে। আমরা দেখেছি, আমাদের দেশে অনেকটা সময় ধরে জঙ্গিবাদ নিষ্ক্রিয়। এটা এ কারণে বলছি, যেহেতু লিডার পর্যায়ে তাদের শূন্যতা তৈরি হয়েছে। সেহেতু কিছু কিছু জঙ্গি সংঘটন নিষ্ক্রিয় রয়েছে। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে, জঙ্গিবাদ যেহেতু আদর্শ, তাতে মানুষ সহজে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। জঙ্গি তৈরি করা সমাজে কঠিন কিছু না।

সারা বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের অবস্থান উগ্রবাদ বিরোধী হলেও এমন ঘটনা ভুল বার্তা দেবে উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলছেন, কূটনৈতিকভাবে এটি হয়তো তেমন প্রভাব ফেলবে না। তবে সমস্যা অন্যখানে। বাংলাদেশে অস্থিরতা দেখিয়ে অনেকে বাণিজ্য সুবিধা পেতে পারে। এমন ঘটনা ঘটলে বাংলাদেশে বিনিয়োগ না করে অন্য দেশে করানোর জন্য তা তুলে ধরে সুবিধা নিতে চাইবে।

প্রশ্ন উঠেছে আদালতে আসামিদের আনা-নেয়া নিয়েও। আইনজীবীরা জানান, আসামিদের ডান্ডাবেড়ি পরানো নিয়ে যে বিধান তা নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে।

ঢাকার চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আবদুল্লাহ আবু বলেন, যারা দণ্ডপ্রাপ্ত, ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি কিংবা দুর্ধর্ষ আসামিদের ডান্ডাবেড়ি পরানো নিয়ে হাইকোর্টের একটি মতামত আছে। এমন আসামিদের ক্ষেত্রে ডান্ডাবেড়ি পরানো নিয়ে যে বিধান তা নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে।

এ ঘটনার পর জঙ্গিদের অর্থায়ন নিয়ে আরও গভীর চিন্তা-ভাবনার প্রয়োজন বলে মনে করেন গবেষকরা।

/এমএন


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply