গাইবান্ধার চরে আসামি ধরতে গিয়ে হামলার শিকার পুলিশ; ইউপি মেম্বারসহ ৮৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা

|

গাইবান্ধা প্রতিনিধি:

আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি ধরতে গিয়ে গাইবান্ধার দুর্গম চরাঞ্চলে হামলার শিকার হয়েছে ফুলছড়ি থানার ৩ পুলিশ সদস্য। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ায় আসামি আব্দুল মালেককে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় পুলিশ। এ ঘটনায় ২৫ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত আরও ৫০ থেকে ৬০ জনের বিরুদ্ধে ফুলছড়ি থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

ভুক্তভোগী পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোবারক হোসেন বাদী হয়ে সোমবার (৮ নভেম্বর) রাতে মামলাটি করেন। এতে প্রধান আসামি করা হয়েছে পরোয়ানাভুক্ত আসামি আব্দুল মালেকের বাবা আফছার আলীকে। আফছার আলী ফজলুপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (মেম্বার)।

তবে পুলিশের ওপর হামলা ও আসামি ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইউপি সদস্য আফছার আলী। তার দাবি, আদালতের জামিন থাকা সত্বেও ছেলে মালেককে আটক করে সাদাপোষাকে আসা কয়েকজন। পরিচয় জানতে চাইলে তাদের তড়িঘড়ি ও আচরণে অপহরণকারী সন্দেহে বাধা দেয় স্থানীয়রা। পরে পুলিশ তাকে ছেড়ে দেয়।

এর আগে, গত রোববার রাত ৯টার দিকে ফুলছড়ি উপজেলার ফজলুপুর ইউনিয়নের রতনপুর শাপলা বাজারে হামলার ঘটনাটি ঘটে। তবে ঘটনাটি গোপন থাকলেও পুলিশের করা মামলার খবর জানাজানির পর ভুক্তভোগীরা এ তথ্য জানায় গণমাধ্যমকর্মীদের।

বুধবার সন্ধ্যায় এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন ফুলছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) মো. আব্দুল আজিজ।

তিনি মামলার এজাহারের বরাত দিয়ে জানান, গত রোববার রাতে এসআই মোবারকের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ফজলুপুর ইউনিয়নে অভিযান চালিয়ে আদালতের পরোয়ানাভুক্ত আসামি আব্দুল মালেককে গ্রেফতার করে। তার বিরুদ্ধে চুরির ঘটনায় আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। সেই পরোয়ানায় পুলিশ মালেককে হাতকড়া পরিয়ে থানায় নিয়ে আসার জন্য যমুনা নদীর তীরে আসে। এ সময় মালেকের পরিবারের সদস্য ও স্থানীয়রা সংঘবদ্ধ হয়ে বাধা দিয়ে বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে চড়াও হয়ে পুলিশের ওপর হামলা এবং মারধর শুরু করেন। এ সময় তিন পুলিশ সদস্য আহত হয়। পরে অবস্থা বেগতিক দেখে হাতকড়া খুলে আসামি মালেককে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় পুলিশ।

তিনি আরও জানান, আব্দুল মালেক ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি। এছাড়া তার বিরুদ্ধে ফুলছড়ি থানায় একটি নিয়মিত মামলাও আছে। তাকে গ্রেফতারের পর পরিবারের লোকজন ও স্থানীয়রা পরিকল্পিতভাবে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে আসামি মালেককে ছিনিয়ে নেয়। এ ঘটনায় ২৫ জন নামীয় ও অজ্ঞাত ৫০ থেকে ৬০ জনকে আসামি করে থানায় মামলা হয়। অভিযুক্ত আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। তবে হামলার ঘটনায় জড়িত না থাকলে কাউকে হয়রানি করা হবেনা বলেও জানান তিনি।

এদিকে, পুলিশের ওপর হামলা ও আব্দুল মালেক মিয়াকে ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আব্দুল মালেকের স্বজন ও স্থানীয় এলাকাবাসী।

এ বিষয়ে মালেকের বাবা আফছার আলী বলেন, হঠাৎ করে কয়েকজন পুলিশ সদস্য এসে শাপলা বাজার থেকে মালেককে গ্রেফতার করে। এ সময় তারা তড়িঘড়ি করে মালেককে হাতকড়া পড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। সাদাপোশাকে আসামি ধরতে আসা পুলিশের তড়িঘড়ি আচরণ দেখে অপহরণকারী হিসেবে সন্দেহ হয় স্থানীয় ব্যবসায়ীদের। এ সময় ব্যবসায়ীরা তাদের পরিচয় এবং মালেককে গ্রেফতারের কারণ জানতে চায়। পরে তারা আইডি কার্ড না দেখিয়ে ফুলছড়ি থানার পুলিশ দাবি করে মোবাইলে তোলা একটি অস্পষ্ট ওয়ারেন্টের কপি দেখায়। কিন্তু ওই মামলায় তার ছেলে মালেক জামিনে আছে জানালেও পুলিশ তাকে ছেড়ে দেয়নি। এতে স্থানীয়দের কাছে মালেককে ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি অপহরণ কিংবা গুমের উদ্দেশ্য বলে সন্দেহ হয়। ইতোপূর্বেও চরাঞ্চলে এমন গুমের ঘটনা ঘটেছে। এ কারণে স্থানীয়দের মাঝে উত্তেজনা ছড়ায় এবং তাদের সঙ্গে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে অবস্থা বেগতিক বুঝতে পেরে তারা মালেককে ছেড়ে ঘটনাস্থলে ত্যাগ করে।

আফছার আলীর দাবি, সপ্তাহ খানেক আগে তার ছেলে আব্দুল মালেকের নামে একটি মিথ্যা চুরির মামলা করে এক প্রতিবেশী। ওই মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পায় মালেক। জামিনের রি-কল ফুলছড়ি থানায় জমা দেয়া আছে। এছাড়া মালেকের বিরুদ্ধে আর কোনো মামলা কিংবা অভিযোগ নেই।

মূলত প্রতিপক্ষের কাছে প্রভাবিত হয়ে জামিনে থাকা সত্বেও তার ছেলেকে গ্রেফতারের চেষ্টা করে পুলিশ। এই ঘটনায় পুলিশের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং তদন্ত সাপেক্ষে সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন তিনি।

এটিএম/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply