অ্যাথলেট তৈরির সাথে ঝরে পড়াদের নিয়েও আছে বিকেএসপির পরিকল্পনা

|

এ দেশের ক্রীড়াঙ্গনের আঁতুড়ঘর বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি)। সব ডিসিপ্লিনে অ্যাথলেট তৈরির কারখানা এই প্রতিষ্ঠান। সাকিব-মুশফিক থেকে শুরু করে হালের দিয়া সিদ্দীকী কিংবা আখিঁ খাতুন, যারাই অর্জনের সারথী তাদের সঙ্গে জুড়ে আছে বিকেএসপির নাম। সময়ের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানকে করা হয়েছে আরও আধুনিকায়ন।

বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিকেএসপি থেকে উঠে আসা সেরা অ্যাথলেট নিঃসন্দেহে সাকিব আল হাসান। পাশাপাশি সাবেক ক্রিকেটার নাইমুর রহমান দুর্জয়, আব্দুর রাজ্জাক থেকে শুরু করে হালের মুশফিক, মুমিনুল, বিজয়, সৌম্যদের নামের সাথে জুড়ে আছে সেই বিকেএসপির নাম। প্রায় সব ক্রীড়া ডিসিপ্লিনেই একই চিত্র। আর্চারি, শ্যুটিং কিংবা ভলিবল, যারা তারকা হয়েছেন কিংবা হতে যাচ্ছেন, সবার আঁতুড়ঘর বিকেএসপি। জাতীয় কিংবা আন্তর্জাতিক, সব আসরেই বিকেএসপির জয়রথ। করোনা মহামারি কাটিয়ে গেলো এক বছরে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশের যত অর্জন, তার অনেক কিছুর সঙ্গেই জড়িয়ে আছে প্রতিষ্ঠানটির নাম। আর্চারি, অ্যাথলেটিক্স, নারী ফুটবল, টেবিল টেনিস, হকি ও ভলিবলে আসা সাফল্যের ভাগিদার বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

জাতীয় পর্যায়েও বিকেএসপির অ্যাথলেটদের দাপট। প্রায় সব ডিসিপ্লিনেই বাজিমাত এখান থেকে উঠে আসা অ্যাথলেটদের। আর এই পাল্টে যাওয়া বিকেএসপির নেপথ্যের কারিগর কে? বিকেএসপির উপদেষ্টা কোচ বরেণ্য ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব নাজমুল আবেদীন ফাহিম বলেন বর্তমান মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মাজহারুল হকের কথা। জানালেন, বর্তমান মহাপরিচালক প্রতিষ্ঠানটিতে পরিচালক (প্রশিক্ষণ) হিসেবে বেশ কিছু সময় কাটিয়েছেন। তাতে বিকেএসপি সম্পর্কে ভালো একটি ধারণা নিয়েই তিনি মহাপরিচালক হয়েছেন। নাজমুল আবেদীন ফাহিম বলেন, সবসময় মনে হয়েছে, সততা নিয়ে কাজ করার চেষ্টা তিনি সব সময়ই করেছেন।

বিকেএসপির হকি কোচ জাহিদ আহমেদ রাজু বলেন, খেলা নিয়ে আগে থেকেই বর্তমান মহাপরিচালকের একটি স্বচ্ছ ধারণা ছিল। সেক্ষেত্রে, হকি থেকে শুরু করে প্রতিটা গেমসের ব্যাপারেই তিনি সব সময় ইতিবাচক ধারণা পোষণ করেন।

দেশসেরা কোচ মারুফুল হকের নাম সবারই জানা। তারই ছোট ভাই বিকেএসপির বর্তমান মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মাজহারুল হক। ক্রীড়াবান্ধব পরিবার থেকে উঠে আসা এই কর্মকর্তার জোরালো নেতৃত্বে আধুনিকায়ন হচ্ছে বিকেএসপির। বহির্বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে ঢেলে সাজানো হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটিকে। জোর দেয়া হচ্ছে স্পোর্টস সায়েন্স, আধুনিক ক্রীড়া সরঞ্জাম ও অ্যাথলেটিদের পুষ্টির দিকে। আর এসবে একজন অ্যাথলেটের পেছনে বিকেএসপির মাসে খরচ প্রায় এক লক্ষ টাকার বেশি।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম মাজহারুল হক বলেন, এখন পর্যন্ত আমি দাবি করবো, বিকেএসপি সফল। তবে আমাদের উন্নয়নের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। আমরা আরও বেশি সংখ্যায় বিদেশি কোচ আনার চেষ্টা করছি। সুযোগসুবিধা বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। সেই সাথে, ছাত্রদের আবাসন সমস্যা নিরসনের চেষ্টা চলছে। তাদের পুষ্টির দিকেও দেয়া হচ্ছে বিশেষ নজর। আধুনিক ক্রীড়াবিশ্বে কিন্তু স্পোর্টস সায়েন্সের বিকল্প নেই; বিশেষ করে স্পোর্টস বায়োমেকানিক্স, স্পোর্টস ফিজিওলজি। এসবের আধুনিক যন্ত্রপাতি আছে। আসে ব্যাপারেও আমরা নতুন একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছি।

শুধু নিত্য নতুন অ্যাথলেট তৈরি নয় বরং ঝরে পড়া অ্যাথলেটদের নিয়েও দারুণ পরিকল্পনা মহাপরিচালকের। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম মাজহারুল হক বলেন, যারা বাইরে আছে, সুযোগের অভাবে ফিটনেস ও স্কিল হয়তো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, তাদেরকে মন্ত্রণালয়ের বিশেষ অনুমতি নিয়ে এখানেই রাখবো। এখানে আমাদের সুযোগসুবিধা ব্যবহার করে তারা ফিটনেস ও স্কিল ফিরে পেতে পারবে। এতে তারা জাতীয় দল বা হাই পারফরমেন্স স্কোয়াডেও ডাক পেতে পারে।

অলিম্পিকে অধরা পদক আসবে বিকেএসপির অ্যাথলেটদের হাত ধরেই। এমন প্রত্যাশা বাস্তবায়নে নেয়া হচ্ছে জোরালো পদক্ষেপ। বিকেএসপির মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম মাজহারুল হক বলেন, অলিম্পিকে পদক জয়ের স্বপ্ন দেখাচ্ছি অ্যাথলেটদের। আর্চারি, শ্যুটিংয়ে কিন্তু বাংলাদেশের পক্ষে পদক অর্জন সম্ভব।

ক্রীড়া মাধ্যমেই আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সমুন্নত হচ্ছে দেশের সুনাম। দক্ষ অ্যাথলেট তৈরির মাধ্যমে সেই সাফল্যের নেপথ্য প্রতিষ্ঠান নিঃসন্দেহে বিকেএসপি।

আরও পড়ুন: কীভাবে নিজেকে প্রস্তুত করছেন দল থেকে ছিটকে পড়া মুমিনুল

/এম ই


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply