‘বিচারকরা কীভাবে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশকে আইন হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন!’

|

মানবতার ইতিহাসে এক কালো অধ্যায় ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনিদের দায়মুক্তি দিতে খন্দকার মোশতাক ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর জারি করেন মানবতাবিরোধী কুখ্যাত এই অধ্যাদেশ; যা ৫ম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার আইনটি বাতিল করে। বাংলাদেশের ইনডেমনিটি আইনটি পৃথিবীর ইতিহাসে লজ্জাজনক ছিল বলে মনে করেন আইনজ্ঞরা। সাবেক মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান প্রশ্ন তুলেছেন, বিচারকরা কীভাবে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশকে আইন হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন!

১৫ আগস্ট বাঙালি জাতির জন্য কলঙ্কময় দিন। এদিন সপরিবারে হত্যা করা হয় স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। যার নেতৃত্বে হয়েছিল স্বাধীনতা যুদ্ধ, জন্ম নিয়েছিল স্বাধীন দেশ- সেই মহানায়কের হত্যার বিচার বন্ধ করতে খন্দকার মোশতাকের সরকার জারি করে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ। পচাত্তরের ২৬ সেপ্টেম্বর এ নিয়ে আইন প্রণয়ন করা হয়। ‘৭৯ সালের ৯ জুলাই, জিয়াউর রহমান ৫ম সংশোধনীর মাধ্যমে কালো আইনটি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করেন। এতে সাংবিধানিকভাবে বন্ধ হয়ে যায় জাতির জনক হত্যার বিচার।

এই আইনী কলঙ্ক থেকে জাতি মুক্ত হয় ১৯৯৬ সালে। ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ রহিতকরণ বিল’ সংসদে পাস হয়। ২০১০ সালে অবৈধ ঘোষণা করা হয় সংবিধানের ৫ম সংশোধনী। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশকে সভ্যতার ইতিহাসে কলঙ্কজনক অধ্যায় বলে মনে করেন আইনজ্ঞরা। অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের কারণে পৃথিবীর মানুষের কাছে বার্তা গেল যে, এই দেশে আর বিচার হবে না। বিচারহীনতাকে এই দেশের একটা সংস্কৃতিতে পরিণত করলো তারা। সেই বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে অনেকগুলো বছর লেগেছে।

বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ২১ বছরেও খন্দকার মোশতাকের ওই কালো আইন নিয়ে সরব না হওয়ায় প্রশ্ন তোলেন মানবাধিকার কর্মীরা। সাবেক মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, তখন কি দেশে কোনো সুধীজন ছিলেন না! এই প্রশ্নটি কেন তখন করা হয়নি? আমাদের বিচারকরা কীভাবে ১৯৭৫ সালের পর থেকে দীর্ঘ সময় এটিকে আইন হিসেবে গ্রহণ করে এর অধীনে বিচারকার্য পরিচালনা করেছেন!

ইতিহাসে নৃশংস হত্যার নেপথ্যে যারা ছিলেন, তাদের বিচার শুরু হতেও অপেক্ষা করতে হয় তিন দশক। তবে দণ্ডপ্রাপ্তদের কয়েকজন এখনও পলাতক। সবশেষ ২০২০ সালে আত্মস্বীকৃত খুনি ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আবদুল মাজেদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। এর আগে ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি রাতে ফাঁসি কার্যকর হয় ৫ খুনির।

/এম ই


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply