‘মেয়েদের কোচ’ বলে কটূক্তি শুনতেন ছোটন!

|

অপমানের কড়া জবাব দিলেন ছোটন।

‘শষ্যক্ষেত্র উর্বর হল, পুরুষ চালাল হাল। নারী সেই মাঠে শষ্য রোপিয়া করিল সুশ্যামল।’- নারীর জয়গান গাওয়ার হাজারটা দিন এসেছে আমাদের সামনে। আসবে আরও হাজার দিন। তবে নিজেদের মানসিকতা সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে নারীদের প্রাপ্য সম্মান জানাতে যেন চিরদিনই কুণ্ঠিত হয়ে আসছে এদেশের মানুষ। আর সে কারণেই নারী ফুটবল নিয়ে কাজ করেন বলে গোলাম রব্বানী ছোটনকে বলা হতো মহিলা কোচ! আর সে ঘটনাও সামনে আসে সোনার মোড়কে বাঁধিয়ে রাখার মতো এক ১৯ সেপ্টেম্বরে। যেদিন দক্ষিণ এশিয়ার নারী ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট বাংলাদেশের মাথায় পরিয়ে দিয়েছে মেয়েরা। আর, কটূক্তির জবাব ছোটন দিয়েছেন দলকে সাফ চ্যাম্পিয়ন করে।

যে মেয়েরা মাঠে খেলতে এসেছে সমাজের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে, মায়ের শেষ সম্বল নিয়ে, বোনের অলংকার বিক্রি করে কিংবা পরিবারের একমাত্র আয়ের অবলম্বন হয়ে। ফাইনালের মহারণে নামার আগে নিজের ফেসবুক পোস্টে এভাবেই নিজেদের জীবন সংগ্রামের বয়ান হাজির করেছিলেন সানজিদা আক্তার। শুধু দক্ষিণ এশিয়ার সেরা দল নয়, এই তল্লাটের সেরা খেলোয়াড়টাও লাল-সবুজের । টুর্নামেন্ট সেরা সাবিনা খাতুন জানিয়েছেন, তার ক্যারিয়ারের সেরা অর্জন এটি। বাংলাদেশের অধিনায়ক সাবিনা বলেছেন, লক্ষ্য ছিল আমাদের ফুটবল যে এগিয়েছে তা প্রমাণ করবো। শেষ পর্যন্ত সেটাই হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে হয়তো এরচেয়েও বড় স্বীকৃতিটা পেয়ে গেলেন সাবিনা। আর সেটাও কোচ গোলাম রাব্বানী ছোটনের কাছ থেকে। পাশেই বসে থাকা কোচ বললেন, টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ স্কোরার থেকে সেরা খেলোয়াড় দুটোই হয়েছেন সাবিনা। আমি মনে করি, আসরের সেরা লিডার হিসেবে আমার পক্ষ থেকে কোনো পুরস্কার তাকে দেয়া উচিত।

একদম বয়সভিত্তিক পর্যায় থেকে এক সুঁতোয় দলটাকে গেথে রেখেছেন কোচ গোলাম রাব্বানী ছোটন । কখনও কড়া শাসন আবার কখনো বন্ধুপ্রতিম স্নেহ- সবকিছু মিলে এই খেলোয়াড়দের মাঠের বাইরে সুশৃঙ্খল জীবনযাপন থেকে শুরু করে মাঠের টেকনিক, সবকিছুই ছোটনের নখদর্পণে। এই গর্বিত কোচ বলেন, আমি যখন মহিলাদের কোচ ছিলাম, তখন আমার বন্ধুবান্ধবও বলতো ‘মহিলা কোচ’। আমি যখন রাস্তায় হেঁটে যেতাম, আমাকে বলতো ‘মহিলা কোচ’। বিরক্ত করতে চাইলেও আমার কাছে এরকম কিছু মনে হয়নি। সব সময় আমি কাজকেই পছন্দ করতাম। আজ বাংলাদেশের যে অবস্থা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে সবাই যেভাবে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে, তাতে ভালো লাগছে।

যে দেশে এখনও প্রত্যন্ত অঞ্চলে মেয়েরা মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোলেই বাবা মা বিয়ের জন্য আদাজল খেয়ে লাগেন, যেসব জায়গায় এখনও সামাজিক রক্ষণশীলতার বেড়াজালে মেয়েদের বন্দি থাকতে হয়, সেই দেশে একটা দলকে দীর্ঘ সময় ধরে পরিচর্যা করাটা কঠিন ব্যাপারই বটে। আর সেই কাজটাই করে দেখিয়েছে বাফুফের উইমেন্স উইং। এই উইংয়ের সভাপতি মাহফুজা আক্তার কিরণ বলেন, আমার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না। এটা এক অর্থে আমাদের প্রত্যাশিতই ছিল। আমরা লম্বা সময় ধরে কাজ করেছি। স্টেপ বাই স্টেপ কাজ করে গেছি। এটা কিন্তু একদিনের ফসল নয়।

সাফ ফুটবল হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্বকাপ। যেখানে ১৯ বছরের শিরোপা খরা ঘোচালো সাবিনা, মারিয়ারা। স্বপ্নকে আলিঙ্গন করা বাংলাদেশ এখন তো আরও বড় স্বপ্ন দেখতেই পারে। কে জানে, অনুজদের জন্য বিশ্ব ফুটবলের বন্ধুর রাস্তাটা চেনানোর এটাই প্রথম ধাপ সাবিনাদের!

আরও পড়ুন: ফুটবলার ‘হতে চাওয়া’ সাতক্ষীরার সাবিনা জয় করলেন দক্ষিণ এশিয়া

/এম ই


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply