গণফোরামের নতুন কমিটি, সভাপতি ড. কামাল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান

|

গণফেরামের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। সভাপতি পদে চমক নেই। দলটির প্রতিষ্ঠাতা ড. কামাল হোসেনই রয়েছেন এ পদে। মিজানুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে।

শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের প্রেসিডিয়াম সদস্য মফিজুল ইসলাম খান কামাল। এ সময় ড. কামাল হোসেনকে সভাপতি ও মিজানুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করে গণফোরামের ১০১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটিতে ১৭ সদস্যের সভাপতি পরিষদ, কোষাধ্যক্ষ, সাধারণ সম্পাদক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক, ১৩ সদস্যের সম্পাদকমণ্ডলী, ৮ সদস্যের স্থায়ী পরিষদ এবং ৩৭ সদস্যের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে ড. কামাল হোসেন বলেন, নির্বাচনী ব্যবস্থা আজ ধ্বংসপ্রাপ্ত ও প্রশ্নবিদ্ধ। অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের আপত্তি সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশন ইভিএমে ১৫০ আসনে ভোটগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে, তা দেশের জন্য এক ভয়ঙ্কর অশনি সংকেত। জাতি এই দুঃসহ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ চায়।

তিনি আরও বলেন, দেশ বর্তমানে এক গভীর রাজনৈতিক সংকটে নিমজ্জিত। গণতন্ত্র আজ নির্বাসিত, কর্তৃত্ববাদী স্বৈরাচারী সরকারের গণবিরোধী কর্মকাণ্ডের ফলে দেশে চরম অরাজক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি, গ্যাস-তেল, ডিজেলের মূল্য নিয়ে সরকারের অব্যবস্থাপনা ও অদূরদর্শিতা এবং লুটেরাদের স্বার্থে সিদ্ধান্ত গ্রহণের কারণে জনগণের অর্থনৈতিক দুরবস্থা আজ চরমে। সাধারণভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়েছে।

জাতীয় রাজনীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য বড় শক্তিশালী দলগুলো মাস্তান ও কালো টাকা ব্যবহার করে তিনি এ সময় উল্লেখ করেন।

প্রসঙ্গত, এর আগে গত ১২ মার্চ জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে গণফোরামের বিশেষ কাউন্সিলে ড. কামাল হোসেনকে সভাপতি ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে ওই কাউন্সিলে উপস্থিত ছিলেন না তিনি। তার অনুপস্থিতে সভাপতি হিসেবে ড. কামাল হোসেন এর নাম প্রস্তাব করেন তখনকার দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সভাপতি মোকাব্বির খান। এ সময় উপস্থিত সদস্য ও কাউন্সিলরেরা প্রস্তাবে হাততালি দিয়ে সমর্থন জানান।

আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে ১৯৯৩ সালের ৪ নভেম্বর গণফোরাম গঠন করেন ড. কামাল হোসেন। সঙ্গে নেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) থেকে বেরিয়ে আসা সাইফ উদ্দিন আহমেদ মানিককে। এর কয়েক বছর পর সাইফ উদ্দিন আহমেদ মানিক মারা গেলে আওয়ামী যুবলীগ থেকে আসা মোস্তফা মহসিন মন্টুকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। সর্বশেষ ২০১৯ সালের ২৬ এপ্রিলে গণফোরামের পঞ্চম কাউন্সিলে কামাল হোসেন সভাপতি ও রেজা কিবরিয়া সাধারণ সম্পাদক হন। শুরু থেকেই দলের সভাপতি পদে রয়েছেন ড. কামাল হোসেন।

পঞ্চম কাউন্সিলের পর থেকে দলের নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। তা আরও বেড়ে যায় ওই কাউন্সিলের সপ্তাহখানেক পর দলের সভাপতি ড. কামাল হোসেন তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টুকে বাদ দিয়ে ড. রেজা কিবরিয়াকে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি ঘোষণা করলে।

এরই ধারাবাহিকতায় গত বছরের ৩ ডিসেম্বর (শুক্রবার) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে মোস্তফা মহসিন মন্টুকে সভাপতি ও সুব্রত চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করে গণফোরামের একাংশের কমিটি ঘোষণা করা হয়। এর মধ্য দিয়ে দলটির বিভক্তি প্রকাশ্যে আসে। ওইদিন অধ্যাপক আবু সাইয়িদ কাউন্সিল সভা শেষে দলের ১৫৭ সদস্যের নতুন কমিটির নাম ঘোষণা করেন। কাউন্সিলরদের মতামতের ভিত্তিতে নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন তিনি।

পরে ১২ মার্চ অনুষ্ঠিত গণফোরামের বিশেষ কাউন্সিল ঘিরে দলটির বিবদমান দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে ২০ জন আহত হন। মোস্তফা মহসীন মন্টুর নেতৃত্বাধীন অংশের নেতাকর্মীরা প্রেসক্লাবের ভেতরে ঢুকে কাউন্সিলে হামলা করে। পরে পুলিশ এসে একপক্ষকে জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে বের করে দেয়।

তবে এদিন বিকেলে আয়োজিত জরুরি এক সংবাদ সম্মেলনে হামলার দায় অস্বীকার করেন গণফোরাম একাংশের সভাপতি মোস্তফা মহসিন মন্টু। তিনি বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে আমার দলীয় কোনো নেতাকর্মী জড়িত নয়। সাধারণ সম্পাদক কে হবেন, মোকাব্বির খান না শফিক উল্লাহ— এ নিয়ে নিজেরাই মারামারিতে জড়িয়ে পড়েন বলেও দাবি করেন মোস্তফা মহসিন মন্টু। আরও বলেন, নিজেদের দোষ ঢাকার জন্য বিষয়টি আমাদের ওপরে চাপিয়েছে। আমরা চাই ঐক্যবদ্ধ গণফোরাম।

গণফোরামে দীর্ঘদিন ধরে চলা এই দ্বন্দ্বের নাটের গুরু কে? সংবাদ সম্মেলনে এ প্রশ্নের জবাবে মোস্তফা মহসিন মন্টু বলেছিলেন, ড. কামাল সাহেব আমাদেরকে চিঠি দিয়ে সম্মতি জানিয়েছেন, আবার মোকাব্বির সাহেবদেরও সম্মতি জানিয়েছেন। ড. কামাল হোসেন নিজেই নাটের গুরু কিনা আমরা তা বলতে চাই না। তবে নাটের গুরু মোকাব্বির খান এমপি তা নিশ্চিত।

নির্বাচন কমিশন তাদের কমিটিকে বৈধতা দেননি এবং নিবন্ধনও নেই, এমন প্রশ্নও করে সাংবাদিকরা। জবাবে মোস্তফা মহসিন মন্টু বলেন, এ বিষয়ে আদালতে রিট করা হয়েছে। বিষয়টি আদালত ফয়সালা করবে।

ওই বিশেষ কাউন্সিলকে মোস্তফা মহসীন মন্টুর নেতৃত্বাধীন গণফোরামের একাংশ অবৈধ ঘোষণা করে। দুই অংশের এই কোন্দলকে কেন্দ্র করে গণফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ড. কামাল হোসেনের নামে আইনি নোটিশও পাঠায় মন্টুর নেতৃত্বাধীন অংশের নেতারা।

/এমএন


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply