দিনে শ্রমিক, রাতে ভয়ঙ্কর ডাকাত; ডিমের পিকআপ ডাকাতি করে র‍্যাবের হাতে ধরা

|

রূপগঞ্জ প্রতিনিধি, নারায়ণগঞ্জ:

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে রূপগঞ্জের ভূলতা এলাকায় ২৫ হাজার ডিম বোঝাই পিকআপ ভ্যানে ডাকাতির সময় ৬ ডাকাতকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। পুলিশ জানিয়েছে, আটককৃতরা দিনের বেলায় কেউ ছিলেন গার্মেন্টস কর্মী কেউবা নির্মাণ শ্রমিক। রাতে তারাই হয়ে উঠতেন ভয়ঙ্কর আন্তঃজেলা ডাকাতদলের সদস্য। ডাকাতি করতেন পণ্যবাহী ট্রাক, পিকআপ ভ্যান আর যাত্রীবাহী গাড়িতেও।

শনিবার (১৪ আগস্ট) শেষরাতে ডাকাতির ঘটনাটি ঘটে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন, মুসা আলী, নাঈম মিয়া, শামিম, রনি, আবু সুফিয়ান ও মামুন। এ সময় তাদের কাছ থেকে জব্দ করা হয় ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত বেশ কিছু দেশীয় অস্ত্র। তাছাড়া উদ্ধার করা হয় ডাকাতির শিকার দুই ব্যক্তিসহ ডিমবাহী পিকআপ ভ্যান এবং ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত বাস।

র‍্যাব জানায়, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে রূপগঞ্জের ভূলতা এলাকায় র‍্যাবের টহল চলাকালীন সময়ে একটি ডিমবোঝাই পিকআপ ভ্যানের সন্দেহজনক গতিবিধি দেখে গতিরোধ করা হয়। এ সময় পিকআপ ভ্যান থেকে দুই জনকে পালানোর সময় আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কথাবার্তায় অসংলগ্ন আচরণ প্রকাশ পাওয়ায় তাদের তল্লাশি করে চাপাতি ও চাইনিজ কুড়াল উদ্ধার করা হয়।

র‍্যাব আরও জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দুইজন স্বীকার করেন যে তারা যুব কল্যাণ এক্সপ্রেসের একটি বাসের মাধ্যমে ডিম বোঝাই পিকআপ ভ্যানের পিছু নেয়। একপর্যায়ে রাস্তা আটকে চালক ও তার সহকারীকে ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ভ্যানটি নিয়ন্ত্রণে নেয়। এ সময় চালক ও তার সহকারীর হাত-পা ও চোখ-মুখ বেঁধে মারধর করে বাসে উঠিয়ে নেয়। এরপর ডাকাত দলের সরদার মুসা ও তার প্রধান সহকারী নাঈম ভ্যানটি নিয়ে গাউছিয়া-মদনপুরমুখী রাস্তায় নিয়ে যায়। ডাকাত দলের বাকি সদস্যরা ভ্যানের চালক ও হেলপারকে বাসে করে মদনপুরের দিকে নিয়ে যায়।

পরে ডাকাতদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী মদনপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে যুব কল্যাণ এক্সপ্রেসের বাসটি আটক করে। এ সময় বাসটি থেকে ডাকাত দলের আরও ৪ সদস্যকে গ্রেফতার করে উদ্ধার করা হয় ভ্যানের চালক ও সহকারীকে।

গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে র‍্যাব জানায়, তারা ১০-১২ জনের এই গ্রুপটি কয়েক বছর ধরে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও, রূপগঞ্জ ও আড়াইহাজার এলাকায় বিভিন্ন মহাসড়কে নিয়মিত ডাকাতি করে আসছে। তারা পেশায় কেউ গার্মেন্টস কর্মী, ড্রাইভার, হেলপার আবার কেউ রাজমিস্ত্রি ও কাপড়ের দোকানের কাটিং মাস্টার। দিনে নিজ নিজ পেশায় নিয়োজিত থাকলেও রাতে তারা ডাকাতি করেন।

চক্রটি মূলত তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে ডাকাতি করে জানিয়ে তিনি বলেন, মুসার নির্দেশে প্রথম গ্রুপটি বিভিন্ন গার্মেন্টসের পণ্যবাহী ট্রাক ও পণ্যবাহী যানবাহন সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে। দ্বিতীয় দলটি বাস নিয়ে মহাসড়কে সুবিধাজনক স্থানে অবস্থান নিয়ে ডাকাতিতে অংশ নেয়। তৃতীয় দলটি ডাকাতি করা পণ্য বিক্রি করার জন্য নির্ধারিত স্থানে নিয়ে যায়। এছাড়া, পণ্যবাহী গাড়ির রঙ পাল্টে সুবিধাজনক স্থানে বিক্রি করে দেয় অথবা গাড়ির যন্ত্রাংশ খুলে বিক্রি করে।

এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জের সহকারী পুলিশ সুপার আবির হোসেন জানান, গ্রেফতারকৃত ৬ ডাকাতকে র‍্যাব রূপগঞ্জ থানায় সোপর্দ করেছে। এ ব্যাপারে র‍্যাবের দায়েরকৃত মামলায় তাদের রোববার সকালে নারায়ণগঞ্জ আদালতে পাঠানো হয়েছে।

এটিএম/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply